—প্রতীকী চিত্র।
দেশে মোট যে লগ্নি হয়, পাঁচ-ছয় বছর আগে পর্যন্ত তার মধ্যে শিল্পমহলের ভাগ ছিল ৫০ শতাংশের উপরে। এখন কমতে কমতে ৪০ শতাংশের ঘরে নেমেছে।
ভোটের বছরেও অন্তর্বর্তী বাজেটে জনমোহিনী ঘোষণা হয়নি। তার বদলে সরকারি খরচ কমানোর ইঙ্গিত দিয়ে রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানা হয়েছে। বাজেটে এই ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার পরে লোকসভা ভোটে জেতার বিষয়ে ‘আত্মবিশ্বাসী’ মোদী সরকার চাইছে, শিল্পমহলও ‘আত্মবিশ্বাস’-এ ভর করে লগ্নি করা শুরু করুক।
বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট পেশ করার পর থেকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা একটি কথাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন— এ বার শিল্প নতুন করে বিনিয়োগের পথে পা রাখুক। তাঁদের বার্তা, ‘‘অনেক দিন ধরে শিল্পপতিরা অপেক্ষা করছেন। অর্থনীতির হাল-হকিকত বোঝার চেষ্টা করছেন। যথেষ্ট হয়েছে। এ বার লগ্নি করুন তাঁরা। নতুন কারখানা তৈরি হোক। বাড়ানো হোক চালু কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা।’’
মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, কোভিডের পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারই পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল লগ্নি করে অর্থনীতির ইঞ্জিন সচল রেখেছে। তাতে ভর করে টানা তিন বছর ৭ শতাংশের উপরে আর্থিক বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। এ বার অর্থমন্ত্রী খরচ বৃদ্ধি কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই পরিকাঠামোয় ব্যয় বেড়েছে বটে। কিন্তু এতদিন যে হারে বাড়ছিল, সেই হারে বাড়েনি। শিল্পমহলকে এ বার মাঠে নামার বার্তা দিয়েছেন। অন্য দিকে রাশ টেনেছেন রাজকোষ ঘাটতিতে। আগামী অর্থবর্ষে সরকার বাজার থেকে ঋণ কম নেবে বলে ঘোষণা করেছেন। তার ফলে বেসরকারি শিল্পমহল কম সুদে বিনিয়োগের জন্য ধার নিতে পারবে।
শিল্পমহল কি শুধু এতেই সন্তুষ্ট হয়ে নতুন লগ্নি করা শুরু করবে?
বাজেটকে বণিকসভার কর্তারা সকলেই স্বাগত জানিয়েছেন। ফিকি-র সভাপতি অনীশ শাহ যেমন বলেছেন, বাজেটে আর্থিক শৃঙ্খলার পথে হেঁটে রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানা সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য ভাল। এতে লগ্নিকারীদের আস্থা বাড়বে। সিআইআই-এর সভাপতি আর দীনেশ বেসরকারি শিল্পের জন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষণা, উন্নয়নে ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল থেকে ৫০ বছরের জন্য বিনা সুদে বা অল্প সুদে ঋণের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। সাধুবাদ দিয়েছেন রাজ্য স্তরে আর্থিক সংস্কারে জোর দেওয়ার নীতিকেও।
শিল্পমহল অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই নতুন লগ্নিতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। ২০১৬-১৭ সালে দেশে মোট লগ্নির ৫৫% আসত কর্পোরেট দুনিয়া থেকে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে তা ৪০ শতাংশে নেমেছে। এর কারণ অনেক। এক, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে চড়া সুদের হার। দুই, গত দেড় বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধির ফলে চাহিদায় ভাটা। তিন, চাহিদার তুলনায় কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকা। তার উপরে সামনে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মোদী সরকার ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে ‘আত্মবিশ্বাসী’ হলেও অনিশ্চয়তা থেকেই যায়।
মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, বাজেটে বেসরকারি শিল্পের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল গঠন ছাড়াও মধ্যবিত্তদের আবাসন প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছে। এতে নির্মাণ সামগ্রী, সিমেন্ট, ইস্পাতের মতো ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়বে।