প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।
নয়াদিল্লি, ২৯ এপ্রিল: ধর্মীয় মেরুকরণের প্রয়াস ছিলই, আজ তার সঙ্গে ওবিসি তাস খেললেন —এ ভাবেই মহারাষ্ট্রের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোলাপুরে দাঁড়িয়ে আজ দলিত-ওবিসি তাস খেললেন তিনি। বললেন, “আগামী দিনে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে তফসিলি জাতি, জনজাতি, পিছিয়ে থাকা অংশের সংরক্ষণ তুলে সংখ্যালঘুদের দিয়ে দেবে।’’ সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের জন্য তাঁর সরকার কতটা কাজ করেছেন তার লম্বা ফিরিস্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘গত ১০ বছরে দেশে সামাজিক ন্যায়ের জন্য যত কাজ হয়েছে তা স্বাধীনতার পর কখনও হয়নি। ৬০ বছর ক্ষমতায় থেকে কংগ্রেস সরকার দলিত, জনজাতি, তফসিলিদের সমস্ত দাবিকে আটকে রাখার নিরন্তর প্রয়াস করেছে। তাদের দর্শন ছিল, সমাজের এই অংশ এমনই দুর্বল থাক, যাতে তাদেরই আশ্রিত হয়ে থাকে। যখন ভোট দরকার, আদায় করে নিতে সুবিধা হবে।”
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, তৃতীয় দফার নির্বাচনে দেশের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে বিভিন্ন আসনের ভাগ্য নির্ধারিত হবে দলিত,তফসিলি জাতি ও জনজাতির ভোটে। এমন সময়ে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির প্রতি বার্তা দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদীর। কারণ কংগ্রেসের তরফ বলা শুরু হয়েছে, মোদী যে ‘৪০০ পারের’ ডাক দিয়েছেন তা সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে। সংবিধান সংশোধন করে তিনি তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি-র জন্য সংরক্ষণই তুলে দিতে চান। আজই সকালে গুজরাতের পাটান-এ জনসভায় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী এই অভিযোগ করেন। তাঁর বক্তব্য, দেশে সংবিধান এবং গণতন্ত্র আদৌ থাকবে কিনা, সেটা নির্ধারণ করার নির্বাচন এ বারের লোকসভা ভোট। তাঁর বক্তব্য, অগ্নিপথ এবং বেসরকারিকরণের যোজনা এনে মোদী সংরক্ষণ তুলে দিতে চান। হাতে গোনা কিছু ধনী শিল্পপতিকে তিনি দেশের সম্পদ তুলে দিতে চাইছেন।
রাহুলের ওই আক্রমণকে খণ্ডন করতে পাল্টা উত্তর দিয়েছেন মোদী। আজ সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রে তিনি বলেন, “মোদী এলে সংরক্ষণ তুলে দেওয়া হবে, বলে কংগ্রেস মিথ্যা প্রচার করছে। আমি তো বলি স্বয়ং বাবা সাহেব অম্বেডকর যদি আজকে আসেন, তা হলে তিনি চাইলেও সংরক্ষণ তুলে দিতে পারবেন না। আর মোদীর তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না।” বিজেপি কী ভাবে দলিত সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে, তার উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “ক্ষমতায় এসে এনডিএ সরকার দলিত পুত্রকে রাষ্ট্রপতি করেছে। ২০১৯ সালে জনজাতির প্রতিনিধি এক নারীকে রাষ্ট্রপতি করেছে। স্বাধীনতার পর এমনটা হয়নি। আমার গর্ব যে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ৬০ শতাংশ
মানুষ এই বর্গের। তফসিলি জাতি, জনজাতি ওবিসি বিধায়ক-সাংসদদের সংখ্যা বিজেপি-তে সবচেয়ে বেশি। কংগ্রেস এদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
নিজেকে দলিত-প্রেমী প্রমাণের চেষ্টার পাশাপাশি, মেরুকরণের লক্ষ্যে সংখ্যালঘুদের নিয়েও লাগাতার কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, “দলিত জনজাতি ওবিসিভুক্ত মানুষ তাদের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়ে আরও বেশি করে বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আর সেটা দেখেই কংগ্রেস চেষ্টা করছে তাঁদের সংরক্ষণে লুট করে সংখ্যালঘুদের হাতে দিয়ে দিতে। কর্নাটকেও সংখালঘুর এই খেলা তারা খেলেছে। কংগ্রেস জমানায় তফসিলি জাতি ও জনজাতির হাল সবচেয়ে খারাপ ছিল। মোদীর লক্ষ্য পংক্তির একেবারে শেষে বসে থাকা মানুষটির কাছেও উন্নয়নের সব চেয়ে বেশি সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।”
প্রসঙ্গত, গত বছর কর্নাটকের বিধানসভা ভোটের সময় প্রচারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের সংরক্ষণের সুবিধা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কংগ্রেসের ভুল শুধরে নিয়েছি।’’
যদিও ইতিহাস বলছে, ওবিসি মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। তৎকালীন জনতা দলের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার আমলে। যারা এ বারের লোকসভা ভোটে বিজেপি-র জোটসঙ্গী।