শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
ষষ্ঠ দফায় ভোট হবে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সব লোকসভা আসনে। তাই সেই পাঁচ আসনকে ‘পাখির চোখ’ করে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মেদিনীপুরের এই ভূমিপুত্র আগামী ১৩-২৩ মে নিজের যাবতীয় কর্মসূচি সাজাচ্ছেন এই পাঁচ লোকসভাকে কেন্দ্র করেই। ইতিমধ্যে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ও বিধানসভায় নিজের অফিসে সে কথা তিনি জানিয়েও দিয়েছেন বলেই পদ্মশিবির সূত্রে খবর। বর্তমান প্রশাসনিক মানচিত্র অনুযায়ী তিন জেলার পাঁচ আসনের মধ্যেই ১১ দিন নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন নন্দীগ্রাম বিধায়ক।
২৫ মে কাঁথি, তমলুক, ঘাটাল, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। গত বার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম আসন জিতে নিয়েছিল বিজেপি। অপর দিকে ঘাটাল-সহ কাঁথি, তমলুকে জিতেছিল তৃণমূল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে শুভেন্দু ছিলেন তৃণমূলের। তাই তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে কাঁথিতে পিতা শিশির অধিকারী ও তমলুকে ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীকে জেতাতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। এই পাঁচ বছরে হলদি নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে কয়েক কোটি গ্যালন জল। কালের এই যাত্রায় শুভেন্দু তাঁর রাজনৈতিক ঠিকানা বদল করে ঘাসফুল ছেড়ে চলে গিয়েছেন পদ্মশিবিরে। তাঁর এই ফুল বদলের সঙ্গে সঙ্গেই বদলে গিয়েছে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ভোটের সমীকরণ। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরে শক্তিবৃদ্ধি শুরু করেছিল বিজেপি, আর ২০২১ সালে শুভেন্দুর দলবদলের পর পূর্ব মেদিনীপুরেও দাপট দেখাতে শুরু করেছে পদ্ম প্রতীক। যে কারণে এ বার দুই মেদিনীপুরের পাঁচটি আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে বিজেপি।
এ বারের ভোটে কাঁথির অধিকারী পরিবার থেকে কেবলমাত্র এক জনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি শুভেন্দুর ছোট ভাই সৌমেন্দু। পিতা শিশিরের ছেড়ে যাওয়া আসনে ভাইকে জেতাতে নন্দীগ্রাম বিধায়ক কোনও খামতি রাখতে চান না। আবার তমলুকে ভাই দিব্যেন্দুকে প্রার্থী না করে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী করেছেন তিনিই। এই দুই আসনই শুভেন্দুর কাছে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। তাই এই দুই আসনে তৃণমূলকে হারাতে মরিয়া বিরোধী দলনেতা। আবার মেদিনীপুর আসন থেকে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষকে বর্ধমান দুর্গাপুর আসনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে, সেই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে বিধানসভায় শুভেন্দুর সতীর্থ বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে। এই আসনে আসানসোল দক্ষিণের মহিলা বিধায়ককে প্রার্থী করার ক্ষেত্রেও শুভেন্দুর হাতযশ দেখছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। আবার ঘাটালে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা দেবকে চ্যালেঞ্জ জানাতে খড়্গপুর সদরের বিধায়ক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। আর ঝাড়গ্রাম আসনে নতুন প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। প্রণত টুডুকে প্রার্থী করা হয়েছে পদ্ম প্রতীকে। রাজনীতিতে আনকোরা এই প্রার্থীর ভোটে লড়ার ক্ষেত্রে শুভেন্দুই বড় ভরসা বিজেপির। তাই এই পাঁচ প্রার্থীকে জেতাতে বিরোধী দলনেতা ১১ দিন ধরে প্রচারের পাশাপাশি ভোটের গোপন রণকৌশল সাজাবেন। তাই এই সময়কালে তিনি আর কোনও এলাকায় প্রচারে যাবেন না বলে ঠিক করেছেন বলেই বিজেপি সূত্রে খবর।
ঘনিষ্ঠমহলে শুভেন্দু দাবি করেছেন, দলকে এ বার নতুন ৪-৫টি আসন জিতিয়ে দেবেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই আপাতত অবিভক্ত মেদিনীপুরের পাঁচ আসনকেই ‘টার্গেট’ করেছেন বিরোধী দলনেতা। ঘটনাচক্রে ওই দিনই ভোট হবে পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া লোকসভা আসনে। ষষ্ঠ দফার ভোটে যাতে এই পাঁচ আসনে সময় দিতে পারেন, তাই ওই দিন ভোট থাকা বাকি তিন আসনে আগেই প্রচারসূচি সেরে ফেলছেন শুভেন্দু।
জঙ্গলমহলের এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘‘আমাদের বড় নেতাদের মধ্যে সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষ ভোটে লড়াই করার কারণে প্রচারে সে ভাবে প্রথম থেকে সময় দিতে পারেননি। স্বাভাবিক কারণেই শুভেন্দু অধিকারীকে বাড়তি চাপ নিতে হয়েছিল। যে হেতু সুকান্তবাবুর ভোট হয়ে গিয়েছে, ১৩ তারিখে দিলীপদার ভোটও হয়ে যাবে, তাই তার পর থেকে তাঁরা সব প্রচারে যেতে পারবেন। সে কথা বুঝেই ১৩-২৩ মে নিজেকে দুই মেদিনীপুর জেলায় সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।’’