কংগ্রেসের সঙ্গে ফের তীব্র হল তৃণমূলের বাদানুবাদ। —ফাইল চিত্র।
জনগর্জন সভা থেকে তৃণমূলের ৪২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার পরে কংগ্রেসের সঙ্গে ফের তীব্র হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বাদানুবাদ। ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে যে বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়ার চিহ্ন থাকবে না সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগেই। এ বার ১৭ মার্চ মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধীর যাত্রা শেষে ইন্ডিয়ার জনসমাবেশ নিয়েও ব্যঙ্গ করতে ছাড়লেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। বলা হল, সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য ‘প্রেমপত্র’ পাঠিয়েছেন রাহুল, কিন্তু তাতে কোনও ‘প্রেম’ নেই!
আজ তৃণমূল ৪২টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘কংগ্রেস বারবার বলেছে, তৃণমূলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে সম্মানজনক আসন সমঝোতার সূত্র চায়। তার অর্থ পারস্পরিক আলোচনা, কিছু দেওয়া নেওয়া, কিছু সমঝোতা। কংগ্রেস ধারাবাহিক ভাবে জানিয়েছে আসন রফার আলোচনা এবং দরকষাকষির জন্য আমাদের দরজা খোলা রয়েছে। কিন্তু একতরফা ভাবে যেন আসন ঘোষণা না করা হয়। তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লির মতোই যৌথ ভাবে তা করা হোক। কিন্তু তৃণমূল আসন ঘোষণা করে দিল। জানি না তাদের উপরে কী চাপ ছিল। কিন্তু যদি আমাদের কথা বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোটকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলাম। দেখা যাক কী হয়।’’
অন্য দিকে জয়রামের এই মন্তব্যের পরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কথায়, মেঘালয়ের তুরা আসনটিতে তৃণমূলের ভোটের শতকরা হার (২৮ শতাংশ) কংগ্রেসের (৯ শতাংশ) থেকে অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও গত সপ্তাহে একতরফা ভাবে তৃণমূলের আপত্তি সত্ত্বেও কংগ্রেস নিজেরা প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। অভিযোগ, বাংলায় যদি কংগ্রেসের আসন রফা করার এতই ইচ্ছে থাকত তাহলে অনেক আগেই উদ্যোগী হতে পারত। দিল্লিতে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে রাজ্যে ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেস তাদের লোকসভার নেতাকে দিয়ে মমতা তথা তৃণমূলকে আক্রমণ করে যেত না। মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেতা মুকুল সাংমা এই প্রসঙ্গে ক্ষোভ দেখিয়ে বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন শান্ত ভাবে অপেক্ষা করেছি, গোটা দেশ সেটা দেখেছে। কংগ্রেস সম্মিলিত বিরোধী স্বার্থে বিশ্বাস করে না, তারা নিজেদের মতো করে বিচ্ছিন্ন ভাবে থাকতেই অভ্যস্ত। তারা মাটির কাছাকাছি থাকে না। মেঘালয়ে রাজ্য স্তরের নেতারা ম্যাচ ফিক্সিং করছে শাসক দলের সঙ্গে, দিল্লিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সে ব্যাপারে উদাসীন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। মেঘালয়ের দুটি আসনেই তারা আগ বাড়িয়ে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আগামী ১৭ মার্চ মুম্বইয়ে রাহুলের ভারত ন্যায় যাত্রার উপসংহার সভা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কংগ্রেস প্রেমপত্র পাঠিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাতে কোনও প্রেম নেই!’’ প্রসঙ্গত, ওই দিন কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটভুক্ত সমস্ত
বিরোধী দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে শিবাজি পার্কে সভা করার জন্য। তৃণমূল আগেই বার্তা দেয়, তারা ভোটের আগে অন্য কোনও সভায় যোগ দিতে আগ্রহী নয়। দল এখন বিয়াল্লিশটি আসনের লড়াইয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। ভোটের পরে জোটের প্রস্তাব এলে বিবেচনা করে দেখা যাবে।