মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
জঙ্গলমহলের সঙ্গে তাঁর একাত্মতা বোঝাতে শুক্রবার ছত্রধর মাহাতোর নাম নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতেই উস্কে গেল বিতর্ক।
ছত্রধরের হাত ধরেই তিনি যে জঙ্গলমহলে ঢুকেছিলেন, সেই কথা জানিয়ে মমতা শুক্রবার ঝাড়গ্রামের গজাশিমূলের সভায় বলেন, “আমার সেই দিনটার কথা মনে আছে। আমি প্রথম জঙ্গলমহলে যাঁর হাত ধরে ঢুকি, তাঁর নাম ছত্রধর মাহাতো।” তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, “ছত্রধর তখন তৃণমূল কংগ্রেস করত। তখন ছত্রধর ব্লকের সভাপতি ছিল। ২০০৮ সালের কথা বলছি।”
মাওবাদী পর্বে পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির মুখপাত্র ছিলেন ছত্রধর। সেই কমিটি কার্যত মাওবাদীদের হয়েই জনসংযোগের কাজ করত বলে দাবি। ফলে, মাওবাদী-তৃণমূল যোগসাজশের যে অভিযোগ বামেরা বরাবর করে, মমতার এ দিনের মন্তব্যে তাতেই সিলমোহর পড়ল বলে চর্চা শুরু হয়েছে। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলেন, “আমরা যখন বার বার বলেছি, তখন অনেকে বিশ্বাস করেননি। এত দিন পর মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে বিষয়টি প্রমাণ হয়ে গেল।” সিপিএমের প্রবীণ নেতা ডহরেশ্বর সেন জুড়ছেন, “কিষেনজিও বার বার বলতেন, আমার বোন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই।” এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গীর ব্যাখ্যা, “ছত্রধর প্রতিষ্ঠান-বিরোধী আন্দোলনে মুখ্য জায়গা নিয়েছিলেন। এটা বাস্তব কথা। ওই সময় সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার ফলে দু’জনের লক্ষ্য ছিল একটাই, সরকার বদলানো।”
রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ অবশ্য মনে করছে, এ দিনের মন্তব্যে মমতা খণ্ডন করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দীর্ঘদিনের দাবিই। শুভেন্দু বার বার দাবি করেন, তাঁর হাত ধরেই জঙ্গলমহলে তৃণমূলের উত্থান। সেই দাবিকেই খণ্ডন করতেই মমতা এ দিন ছত্রধরের হাত ধরে জঙ্গলমহল চেনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তবে তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা মনে করালেন, “ছত্রধর মাহাতো তখন ব্লক সভাপতি ছিলেন না, লালগড়ে তৃণমূলের ব্লক কমিটির সদস্য ছিলেন।” ছত্রধরের একদা ছায়াসঙ্গী শ্যামল মাহাতো লালগড় ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি। এ নিয়ে তিনি অবশ্য বলছেন, “দিদি যা বলছেন তা-ই ঠিক।”
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ছত্রধর দলের রাজ্য সম্পাদকও হন। তবে তার পরেও দফায় দফায় জেল খেটেছেন তিনি। গত বিধানসভা ভোটের পরে এনএআইএ গ্রেফতার করে তাঁকে। শেষে গত বছর জুলাই মাসে জামিন মেলে। তবে আদালতের নির্দেশে জঙ্গলমহলে ঢুকতে পারেন না ছত্রধর। এ দিন ঝাড়গ্রামের তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেনের সমর্থনে সভার সময়ে ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তি মাহাতোর সঙ্গেও কথা বলেন মমতা। নিয়তি বর্তমানে জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী।
মমতার কথায় এ দিন ফিরে ফিরে এসেছে জঙ্গলমহলের অশান্ত পর্বের কথা। তিনি বলেন, “লালগড়ের ও-দিকে ছিতামণি মুর্মু, এক জন বয়স্ক মহিলার কান কেটে দেওয়া হয়েছিল (যদিও ছিতামণির বাঁ চোখ নষ্ট হয়েছিল)। ভয়ে যখন লালগড়ে কেউ যেত না, পিড়াকাটার জঙ্গল পেরিয়ে আমি দিনের পর দিন গিয়েছি। এগুলো কী করে ভুলব।”
বিভাজনের রাজনীতি নয়, জঙ্গলমহলে আদিবাসী, কুড়মি, ভূমিজ যাতে মিলেমিশে থাকে, এ দিন সেই বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে বুঝিয়েছেন, এই ভোট ভাগাভাগি রুখতে তিনি কতটা মরিয়া। তাঁর বার্তা, “সিপিএম এখন বিজেপির হার্মাদ হয়ে গিয়েছে। ওরা যদি আবার আসে, জঙ্গলমহলকে কাঁদাবে, জঙ্গলমহলে অশান্তি হবে।” বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথী পাল্টা বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। আদিবাসী, কুড়মি, ভূমিজদের জন্য কিছু করেননি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গিয়েছেন জনজাতিরা তাঁর পাশে নেই। তাই তাঁদের কথা এত বার বলতে হচ্ছে।”