মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী রবিবার বিগ্রেডের সভার পরেই দার্জিলিং লোকসভা আসনের চূড়ান্ত রণনীতি নিয়ে কলকাতায় তৃণমূলের শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতা অনীত থাপার বৈঠক মোটামুটি ঠিক হয়েছে। সূত্রের খবর, কোনও ‘ভূমিপুত্রকে’ প্রার্থী করার কথা স্থির হয়ে থাকলেও বিভিন্ন বিধানসভার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভোটের কৌশল ঠিক করতেই বৈঠক হওয়ার কথা। যদিও বুধবার রাত অবধি ব্রিগেডের সভায় পাহাড়ের শরিকদের ডাক পড়েনি। আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে তা আসতে পারে। কারণ, প্রতি বছর ২১ জুলাই মঞ্চে পাহাড়ের নেতারা থাকেন। সে হিসাবে ব্রিগেডেও নেতাদের ডাকা হতে পারে। সেই সময় বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি তথা ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর প্রধান অনীত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘প্রার্থী তৈরি। ভোটে লড়াই করার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। বুথস্তর থেকে বৈঠকও হচ্ছে। পাহাড়ের পরে সমতল নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সভাপতি সেগুলি জানাবেন।’’
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে রাজু বিস্তা দার্জিলিং কেন্দ্রে রেকর্ড ব্যবধানে জিতেছিলেন। কিন্তু, পাহাড়ে বিজেপি প্রার্থী কার্যত একচেটিয়া ভোট পায়। বিমল গুরুংয়ের সমর্থনে বিজেপি জেতে। কিন্তু সমতলে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির লড়াই হয়। তার আগেও দু’বার পাহাড়ে একদলীয় শাসনের সুফল পেয়েছে বিজেপি। সুবাস ঘিসিংয়ের আমলেও একই রীতিতে ভোট হত। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় থেকে পাহাড়ে পরিস্থিতি বদল হয়েছে। বহুদলীয় ব্যবস্থার দিকেই ঝুঁকেছে পাহাড়। তাতে বর্তমান শাসক দল এগিয়ে গেলেও, বাকিরাও ভোট লড়ছে। আগে তেমন সুযোগই দেওয়া হত না বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে কালিম্পং, কার্শিয়াং বিধানসভায় তৃণমূল-মোর্চা জোট বা সমঝোতার এ বারের সম্ভাব্য প্রার্থী ভালই ভোট পাবেন। দার্জিলিং সদর এবং মিরিকের দিকে কিছু সমস্যা হতে পারে। সে দিকেই অনীতেরা নজর দিয়েছেন। তেমনই, সমতলে উত্তর দিনাজপুরের চোপ়ড়া বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল ভাল ভোট পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই নিরিখে এর পরেই থাকবে ফাঁসিদেওয়া। কিন্তু শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ভাল ফল করতে পারে। এতে পাহাড়ে ‘লিড’ বা ভাল ভোট পাওয়া গেলেও সমতলের উপরে কার্যত আসনে জেতা-হারা নির্ভর করতে পারে। শিলিগুড়ি মিশ্র জনজাতির বসবাস। বিজেপি না হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে লোকসভায় ভালই ভোট পড়বে বলে দলের নেতারা মনে করছেন। তাতে চাপ বাড়তে পারে ঘাসফুল শিবিরের। তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে এ সব নিয়েই অনীতের কথা হবে বলে ধরে নেওয়া যাচ্ছে। কারণ, প্রার্থী অনীতের। প্রতীক তৃণমূলের হতে চলছে। সমতলের নেতৃত্ব কতটা পরিস্থিতি সামাল দেবেন তাতেই ফলের হিসেব-নিকেশ পরিষ্কার হবে। সে অঙ্ক কষেই দু’পক্ষ এগোতে চাইছে।