(বাঁ দিক থেকে) কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়। —ফাইল চিত্র।
কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে এ বার সেখানকার রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা রায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি। সেই কৃষ্ণনগর থেকেই রবিবার লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শুরুতেই অমৃতাকে আক্রমণ করতে ইতিহাস ঘাঁটলেন তিনি। বিজেপির উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ইতিহাসের পাতা ওল্টালে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবেন।’’
অমৃতাকে কৃষ্ণনগরের ‘রাজমাতা’ বলে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। ধুবুলিয়ার সুকান্ত স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ থেকে রবিবার মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি শুধু মিথ্যা কথা বলে। এখানে যিনি প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁর ইতিহাস ঘাঁটলে কিন্তু ওরা বিপদে পড়বে।’’
এর পরেই ইতিহাসের পাতা ওল্টানোর হুঁশিয়ারি দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ইংরেজের সঙ্গে যখন যুদ্ধ চলছিল, লর্ড ক্লাইভের বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক জন। বাংলার স্বাধীনতার যুদ্ধকে খতম করতে চেয়েছিলেন। সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলার মানুষ সমর্থন করেন। মীরজাফরকে করেন না। সিরাজ ভাল কি খারাপ আমি তা নিয়ে আলোচনা করছি না। কিন্তু ক্লাইভের সেই বন্ধুর নাম টেনে এনেছে বিজেপি। মোদীবাবু কি ইতিহাস ভুলে গেলেন?’’
অমৃতার নাম না করে মমতার আক্রমণ, ‘‘ওঁকে রাজমাতা বলা হচ্ছে। কিসের রাজমাতা? কে রাজা? আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে। এখন তো সবাই প্রজা, রাজা বলে কেউ নেই। কেউ যদি রাজা থাকেন, তা হলে রাজপ্রাসাদে গিয়ে থাকুন। মানুষের কাছে মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না। যদি নেন, তা হলে কিন্তু আমি ইতিহাসের পাতা ওল্টাব। আর ইতিহাসের পাতা ওল্টালে কিন্তু জায়গা পাবেন না। মানুষ আপনাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবেন।’’
কিছু দিন আগে অমৃতার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। বিজেপির তরফেই ওই ফোনালাপ প্রকাশ করা হয়। সেখানে মোদীকে বলতে শোনা যায়, বাংলা থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত করতে গিয়ে ইডি যে তিন হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে, তা রাজ্যের গরিব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করবেন তিনি। ওই ফোনালাপ নিয়ে রবিবার বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলে সেটা আবার বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। তা হলে আর গোপনীয়তা থাকল কই? মোদী শুধু মিথ্যা বলেন। যাঁকে উনি ফোন করছেন, তিনিও কিন্তু এই সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের’ সুবিধা পান।’’ তিন হাজার কোটি বাংলার মানুষের মধ্যে বণ্টন করা হলে প্রত্যেকে ২১ টাকা করেও পাবেন না বলে জানিয়েছেন মমতা।
রবিবারের সভায় মহুয়াকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। তিনি জানান, সাংসদ মহুয়াকে লোকসভা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মমতার কথায়, ‘‘মহুয়া বিজেপির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে, জোরে জোরে কথা বলে, তাই ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ও-ই পারবে বিজেপির মুখোশ খুলে দিতে। ওকে আপনারা আবার জেতান।’’
উল্লেখ্য, মোদী এবং অমৃতার ফোনালাপ নিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। সম্পূর্ণ অডিয়োটিতে একাধিক বার একাধিক প্রসঙ্গে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রত্যেকটি বিষয় আলাদা করে চিহ্নিত করে কমিশনে তারা চিঠি দিয়েছে।