শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চের সভায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: স্বরূপ সরকার।
গত সপ্তাহেই শিলিগুড়ির কাওয়াখালির সভায় এসে উত্তরবঙ্গকে তাঁর ‘মিনি ভারত’ বলে মনে হয় বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার বিকেলে শিলিগুড়িতে সব ধর্ম, জাতি, জনজাতি-সহ সবাইকে এক জোট করে নিয়ে চলার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী রাস্তা, রেল মিলিয়ে ৪,৫০০ কোটি টাকার উদ্বোধন, শিলান্যাসের ঘোষণা করে যান। তার পাল্টা এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘ওরা তো সব নিয়ে যায়। আমরাই সবাইকে সব দিচ্ছি। উত্তরবঙ্গে বহু জনজাতি বোর্ড রয়েছে। পাহাড়, সমতল মিলিয়ে তারা কাজ করছে। কিছু আমরা করতে পারিনি। আমার কাছে আবেদন করেছে। ভোটের পরে করে দেব, টাকাও দিয়ে দেওয়া হবে।’’
রাজনীতির বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে শুধু ধর্মভিত্তিক আবেদন নয়, বিভিন্ন শ্রেণি জনজাতিকে খুশি করার কাজ শুরু করে দিয়েছে দিল্লি এবং কলকাতা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী বোর্ডের জন্য বকেয়া তিন কোটি টাকা মঞ্জুর করেন। দার্জিলিং-কালিম্পং পাহাড়ের দায়িত্বে থাকা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে (জিটিএ) ২২০ কোটি বরাদ্দের বকেয়া প্রায় ৮৪ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য সভামঞ্চ থেকে আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর সঙ্গে রাজ্যের ২৮ লক্ষ পরিযায়ীর আলাদা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, চা বাগানের শ্রমিকদের জমির পাট্টা বা দুঃস্থদের আবাস যোজনার বাড়ির কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহার এবং মালদহের মতো জেলায় বহু পরিযায়ী আছেন। কোভিডের পর তাঁদের অনেকে আবার রাজ্যের পোর্টালে নাম নথিভুক্ত রেখে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছেন। সরকারি সূত্রের খবর, ফুলবাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি সুবিধা প্রধান সভা বাতিল হলেও উত্তরকন্যা থেকেই তিনি কিছু সুযোগ-সুবিধা তুলে দেবেন। যদিও আজ, বুধবার তাঁর সভা থেকে ৫০০ চা বাগানের পাট্টা এবং ৪২২ জনকে ঘরের চাবি তুলে দেওয়ার কথা ছিল, যা অন্যদের মারফত
দেওয়া হবে।
উত্তরবঙ্গে রাজবংশী থেকে গোর্খা, আদিবাসী থেকে মতুয়া ছাড়াও প্রচুর বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ থাকেন। বিশেষ করে, শিলিগুড়ি শহর মিশ্র জনজাতির বসবাস। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘শিলিগুডি শুধু উত্তরবঙ্গের নয়, উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। নেপাল, ভুটান বা বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার। এখান থেকেই সবাইকে নিয়েই রাজ্য চলছে। সবাইকে এক জোট করেই থাকতে হবে।’’
শুধু এক জোট নয়, কেন্দ্র টাকা না দিলেও তাঁর সরকার ‘লক্ষীর ভাণ্ডার’ থেকে বার্ধক্য ভাতা, ১০০ দিনের কাজের টাকা পরিশোধ করছে— তা-ও জানান মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লির রাজ্য সরকার এ রাজ্যকে দেখে কাজ করছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘নতুন করে ৪২ হাজার লক্ষীর ভাণ্ডার, ৩০ হাজার নতুন বার্ধক্য ভাতা অনুমোদন করা হয়েছে। আসলে আমাদের এখন জনসংখ্যা বেশি। তাই আমাদের বেশি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। তবে সরকার সবার জন্য এক ভাবে কাজ করে যাবে।’’
শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র তৃণমূলের গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘আমরা মানুষকে জুড়তে জানি। মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে এক জোট করে রাখতে জানেন। আর বিজেপি বিভেদকামী, তা সিএএ থেকে পরিষ্কার।’’
পক্ষান্তরে, বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে এই তৃণমূল সরকার। এদের মুখে বড় বড় কথা মানায় না। ’’