বৃহস্পতিবার বৌবাজারের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে প্রচারে গিয়ে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দরাজ প্রশংসা করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, এটাই হয়তো সুদীপের শেষ নির্বাচন। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মমতার সেই বক্তৃতা মঞ্চে বসেই শুনলেন তৃণমূলের তারকা প্রচারক তথা দলে ‘সুদীপ-বিরোধী’ হিসেবে নিজেকে বারংবার তুলে ধরা কুণাল ঘোষ।
শুক্রবার বৌবাজারের ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মোড়ে জনসভা করেন মমতা। সেই সভায় তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিন সুদীপদা আর দাঁড়াবেন কি না জানি না! কিন্তু এই বারের জন্য তাঁকে ভোটটা দেবেন। কারণ, তিনি জীবনের প্রথম থেকে এখনও পর্যন্ত উত্তর কলকাতার মাটির জন্য কাজ করেছেন।’’ সুদীপের ৭১ বছর বয়স। দলের অন্যতম প্রবীণ নেতা তিনি। সেই প্রসঙ্গ বলতে গিয়েই মমতা সুদীপের সঙ্গে বর্ষীয়ানদের তালিকায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং সৌগত রায়ের নামও উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, ৭৭ বছরের সৌগত এ বারও দমদম লোকসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী। ঘটনাচক্রে, শুক্রবার বিকেলে সুদীপের সমর্থনে সভা করার পরেই কামারহাটিতে সৌগতের সমর্থনে রোড-শো করেন তৃণমূলনেত্রী।
জনসভায় সুদীপের গলায় শোভা পাচ্ছিল কাঁথা স্টিচের কাজ করা উত্তরীয়। সেই উত্তরীয়েরও দরাজ প্রশংসা করেন মমতা। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘আমি লোকসভা থেকে চলে আসার পর সুদীপদাই সংসদীয় দলের নেতা। উনি সব সাংসদকে নিয়ে খুব ভাল করে কাজ করেন। দলের প্রতি তাঁর আনুগত্যও রয়েছে। কেউ কেউ সুদীপদার সঙ্গে তুলনা করেন। আমি বলি, ওঁর তুলনা উনি নিজেই!’’
সুদীপকে উত্তর কলকাতায় আবার প্রার্থী করা নিয়ে তৃণমূলের একাংশের মধ্যে যে ‘ক্ষোভ’ রয়েছে, তা গোপন নেই। সেই ক্ষোভ যাঁরা উগরে দিয়েছেন বারংবার, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কুণাল। সুদীপ-বিরোধিতার কারণেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন তাপস রায়। যাঁকে সুদীপের বিরুদ্ধেই উত্তর কলকাতায় প্রার্থী করেছে বিজেপি। শুক্রবার যে তল্লাটে মমতা সভা করেছেন, তার অদূরেই তাপসের বাড়ি। সেই মঞ্চ থেকে তাপসের নাম না-করেই চড়া সুরে আক্রমণ শানান মমতা। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘ইডি-সিবিআইয়ের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছে! কিছু যদি না থাকে, তা হলে পালাল কেন? আমি জানি, এক বছর আগে থেকে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল।’’ মমতা এ-ও বলেছেন, ‘‘উত্তর কলকাতার মানুষ বিজেপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে দেবেন।’’
বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার কী ভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে বিরোধীদের জেলে ভরছে, সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সুদীপের জেলযাত্রার কথাও বলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘এই তো সুদীপদাকে দেড় বছর জেলে রেখেছিল। কই তিনি তো পার্টি ছেড়ে যাননি? ওই যে নয়নার (সুদীপের স্ত্রী তথা চৌরঙ্গীর তৃণমূল বিধায়ক) পাশে মদন মিত্র বসে আছে। ওকেও তো জেলে রেখেছিল। কই ও-ও তো ছেড়ে যায়নি।’’ সুদীপ রোজ়ভ্যালি এবং মদন সারদা মামলায় জেলে গিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, কুণালও সারদা মামলায় জেলে গিয়েছিলেন। যদিও তাঁকে গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর কমিশনারেট। সেই প্রসঙ্গ অবশ্য তাঁর বক্তব্যে আনেননি মমতা।
তাপস উত্তর কলকাতায় সুদীপের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী হওয়ার কারণে কি তৃণমূলের খানিক ‘চাপ’ বেড়েছে? এই আলোচনা রাজনৈতিক মহলে রয়েছে। যে আলোচনা কখনও-সখনও উস্কে দিচ্ছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। যার অন্যতম উদাহরণ কুণালের বাক্যবাণ। সেই ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কেও সম্যক অবহিত মমতা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘আপনারা সুদীপদাকে বলুন, কোনও চিন্তা করবেন না! কেউ কেউ তো কিছু না কিছু বলবেই। ওরা বলে যাক! আপনি আপনার মতো (কাজ) করে যান।’’