মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।
রানাঘাটে দ্বিতীয় সভাতেও সন্দেশখালির ভিডিয়োকাণ্ড নিয়ে বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ক’দিন ধরে খুব সন্দেশখালির সন্দেশ দেখাচ্ছিল। সব বেরিয়ে গিয়েছে। কলসি ফুটো হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে প্ল্যান করেছিল বিজেপি! আমি এখনও দেখার সময় পাইনি। গিয়ে দেখব। দু’জন সাংবাদিকের মুখে শুনলাম। পরিকল্পনা করবে, দাঙ্গা করবে, ওদের জুড়ি কেউ নেই। শয়ে শয়ে লোক মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেবে। এদের জুড়ি কেউ নেই। যাহা সিপিএম, তাহাই বিজেপি। সিপিএমের হার্মাদ এখন এসে বিজেপিতে ঢোকে।’’ বিজেপি যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সেই নিয়ে কথা বলার জন্য সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দিয়েছে।
মমতা বলেন, ‘‘খেলা হবে তো! সকাল সকাল ভোট দিন। কাউকে ভয় পাবেন না। বিজেপিকে দেশ থেকে করতে হবে খালি। দেশ, মানুষ, সংবিধান, মতুয়া, সংখ্যালঘু, মুসলমান, হিন্দুদের বাঁচান। আমরা যেন শান্তির পথে থাকতে পারি।’’ মমতার বক্তব্যের শেষে মঞ্চে ওঠেন রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
মমতা বলেন, ‘‘সকাল সকাল ভোট দিন। ক্যা (সিএএ)-তে সই করবেন না। আর একটা ভয়ঙ্কর জিনিস করেছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। তাতে জনজাতিদের অস্তিত্বই থাকবে না। থাকবে শুধু মধু আর বিধু। বুঝেছেন তো কাদের কথা বলছি? মধু, বিধু দুই ভাই, মিথ্যে কথা বলে যায়! ওদের আপনারা বিদায় দিন।’’
মমতা বলেন, ‘‘এত মিথ্যে বলেন মোদী। সুব্রতদা (মুখোপাধ্যায়) বেঁচে থাকলে বলতেন, দাঁতের মাড়ি চলে যেত। বলে, আমরা সরস্বতী পুজো করতে দিই না। জানেন বাংলার সংস্কৃতি? আপনি তো বলেছেন, মাছ, ডিম খাবেন না। আপনার রাজ্য গুজরাত, মধ্যপ্রদেশে বন্ধ। এখানে এসে বলছে, কেন মাছ খান? কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। আমরা কী খাব, তুমি ঠিক করে দেবে না। ’’
মমতা বলেন, ‘‘মোদীবাবু, আপনার কাছে ধর্ম শিখতে হবে না। নির্বাচনের সময় হরিচাঁদ ঠাকুর করেন। পরে পাত্তা দেন না। আমরা করি। ধর্ম আমার মা। উৎসব আমার মা। এটা সকলের জন্য। উনি আমায় ধর্ম শেখাচ্ছেন। উনি রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ শেখাচ্ছেন। এক দিন দাঁড়াবে জনগণের সামনে। দুটো মঞ্চ থাকবে। ব্যাখ্যা করে দেব রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ কী। তুমি জানো না। মা দুর্গার ক’টা ছেলেমেয়ে, জানো? আমায় বলে, মন্ত্র জানি না। চ্যালেঞ্জ করছি, আমি যা মন্ত্র জানি, এক কণাও যদি জানো, বলব মাথা নত করে দাও, চরণধুলার তলে।’’
মমতা বলেন, ‘‘রেশন তিনি দিলে ২ বছরে ১৪ হাজার কোটি টাকা দিতে হত। ৯ হাজার দেয় রাজ্য। ৭ হাজার দেয় কেন্দ্র। ২ বছর ধরে দেননি। ১৬ হাজার-১৬ হাজার করে ৩২ হাজার টাকা আমাদের দিতে হয়েছে। আমরাই চাষিদের চাল কিনি। ’’
মমতা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ফুটো ভাঁড়। বলছে ঘরে ঘরে গ্যাস, বিদ্যুৎ, রেশন দিই বিনা পয়সায়। গ্যাসবেলুন। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা রেশন দিই। মোদী দেন না। চ্যালেঞ্জ করছি। নিজের নামে প্রচার করছে। গরিব লোকের ১০০ দিনের কাজের টাকা দেন না। ৫০ দিনের কাজের ব্যবস্থা করেছি। ’’
মমতা বলেন, ‘‘ওঁরা ভয় দেখান। চমকান। আমরা যা করছি করে যাব। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী পাবেন। যাঁর বিয়ে হচ্ছে না, তাঁকে সরকার ২৫ হাজার টাকা দেয়।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমার প্রতি বিশ্বাস রয়েছে? তা হলে আপনাদের কেউ তাড়াতে পারবে না। অসমে যা হয়েছে, বাংলায় হবে না। তাই আমার উপর রাগ দেখায়। টাকা বন্ধ করে। আমার কিছু যায়-আসে না। আমরা সকলে নাগরিক। কেউ পড়াশোনা করেন। চাষের জমি রয়েছে। ভোট দেন সকলে। ভোটের সময় তো কেউ বলেনি। এখন বলছে দরখাস্ত করো।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমি বড়মার কাছে বার বার গিয়েছি। মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন করলাম। হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাম্প করে দিয়েছি। বড়মাকে বঙ্গবিভূষণ দিয়েছিলাম। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে ছুটি দিয়েছি। নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদ করেছি। গাইঘাটা-ঠাকুরনগর পর্যন্ত রাস্তা করেছি। গাইঘাটায় সরকারি কলেজ করেছি। ফুলচাষিদের জন্য ফুলবাজার করেছি। গাইঘাটায় আইটিআই, পথসাথী-সহ অনেক কিছু করেছি।’’
মমতা বলেন, ‘‘বড়মা মারা গিয়েছেন ক’বছর আগে। যখন অসুস্থ হতেন, ছাত্র-যুব রাজনীতির সময় থেকে আমি নিয়ে যেতাম হাসপাতালে। বালু (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) গিয়ে বলত, দিদি বড়মা অসুস্থ। আমি বলতাম বেলভিউতে ভর্তি কর। কেউ খোঁজ রাখত না।’’
মমতা বলেন, ‘‘মতুয়াদের ঠকিয়ে চলেছেন। ২০১৪ সালে বলল, মতুয়া ভোট দাও, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেব। ২০১৯-এও বলল। ২০২১ সালেও বলল। এখন বলল ভোট দাও, ক্যা (সিএএ) করে দেব। কেউ যায়নি। যে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি করে দেবে। লজ্জা থাকলে বলতাম দড়ি-কলসি দিলাম, জল তুলে নিয়ে এসো।’’
মমতা বলেন, ‘‘আপনার জগন্নাথ, আপনাদের এখানে প্রার্থী। একটু সন্দেশ দিতে পারলেন না! খোঁজ নেননি কী করে? সকলে জানেন। স্থানীয়েরা জানেন। কেন মুকুটমণি বিজেপি ছেড়ে চলে এল, সকলে জানেন। এঁদের ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রয়েছে, না ক্ষমতা রয়েছে!’’
মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রের প্রতিনিধি মাননীয় রাজ্যপাল। দেখছেন কীর্তি- কারখানা! রাজভবনের কর্মীদের সঙ্গে কী করছেন! মেয়েদের ডেকে কী করছেন! তাঁর বাড়িতে রাতযাপন করে প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেন। যিনি সন্দেশখালি নিয়ে বড় বড় সন্দেশ দেন, কই, কিছু তো সন্দেশ দিলেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে ভাল নাটক তৈরি করেছিলেন। আসল তত্ত্ব ফাঁস। অনেক দিন ধরে বলছিলাম, এটা পরিকল্পনা, বিজেপির তৈরি করা নাটক। ফাঁস হয়ে গিয়েছে। আমি ডিটেলস দেখিনি। নিশ্চয়ই দেখব।’’
মমতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলেন! বাচ্চা ছেলে বললে মা থাপ্পড় মারে। তার পর আদর করে। দেশের প্রধানমন্ত্রী এ সব করছেন। এত বড় মিথ্যেবাদী! জুমলা! বলছেন, ঘরে ঘরে গ্যাস পৌঁছচ্ছে বিনামূল্যে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা যা বলি তা-ই করি। এটা আমাদের নির্বাচন নয়। দিল্লির নির্বাচন। মোদী সরকারকে আর আনবেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘আগামী দিন বাংলায় কেউ উদ্বাস্তু থাকবেন না। আগামী দিনে সকলে জমির দলিল পাবেন। রানাঘাটে ২৭টি কলোনিকে জমির দলিল দেওয়া হয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘নবদ্বীপকে হেরিটেজ টাউন করা হয়েছে। কৃষ্ণনগরে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণীতে এডুকেশন হাব করেছি। যদিও বলার কথা ছিল না। তা-ও বলছি। মায়াপুরে ইসকনকে ৭০০ একর জমি দিয়েছি। তীর্থ শহর গড়ে উঠছে। মসলিন তীর্থ, সরতীর্থ হচ্ছে। নবদ্বীপে তাঁতের হাট তৈরি হচ্ছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘যা কথা দিয়েছি, সবই রেখেছি। কন্যাশ্রী, পড়ুয়াদের ভাতা নিয়ে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, পালন করা হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তাঁতিদের ভাসবাসি। চারদিকে তাঁতিদের রমরমা। তাঁতিদের জন্য প্রকল্প করেছি। বাংলার সব ব্লকে বাংলার শাড়ির দোকান খুলব। তাঁতিদের হাতে বোনা শাড়ি বিক্রি হবে সেখানে।’’