ভাতারে মমতা। ছবি: সুদিন মণ্ডল Stock Photographer
এখনও ধান ঘরে থাকলে অন্য কাউকে নয়, সরকারকে দেওয়ার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ভাতারের এরুয়ার স্কুল মাঠে সভা করেন তিনি। ধান কেনার গতি কমের কথাও কার্যত মেনে নিয়েছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘এ বার ধানের দামটা ভাল পেয়েছেন চাষিরা। তাই আমাদের কম দিয়েছেন। ৩৮ লক্ষ টন ধান হয়েছে।” ভোটের মুখে বাইরে থেকে কেউ এক-দু’টাকা বেশি দিয়ে ধান কিনতে চাইলেও সরকারকেই ধান দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মমতার দাবি, “প্রয়োজনে গ্রামে গ্রামে, ব্লকে ব্লকে গাড়ি পাঠিয়ে চাল (ধান হবে) মেপে নিয়ে নিন। তাহলে দূরে যাওয়ার খরচটা হবে না।”
লোকসভা ভোটের প্রচারে রাজ্যের ‘শস্যগোলা’য় এসে মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের মন টানার চেষ্টা করেছেন। নারীদের ক্ষমতায়নের জন্যও তাঁর সরকার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে একমত নয় সিপিএম ও বিজেপি। বিরোধীদের দাবি, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কৃষকদের দুর্দশা আরও বেড়েছে।
স্কুল মাঠের সভার চারদিকে বোরো ধান চাষ হয়েছে। সভার কাছেই হেলিপ্যাড। সেখান থেকে সভামঞ্চ পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকে ধান জমি। বক্তব্যের শুরুতেই কৃষকদের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কৃষকদের কাছ থেকে চাল (ধান) কিনি। সেটা রেশনে জনগণকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। আগে রেশনে এফসিআই আধ ভাঙা, খুদের চাল দিত। এখন আমরা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কিনি। ঘরে ফসল থাকতে বাইরে থেকে আনতে যাব কেন?” এ বছরে রাজ্যে ৬০ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে খাদ্য দফতরের। এখনও পর্যন্ত ৩৮ লক্ষ টন ধান কিনেছে সরকার। সহায়কমূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় চাষিরা সরকারকে ধান বিক্রি করছেন না বলে খাদ্য দফতরের কর্তাদের মত। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি চাষিদের কাছে চাল মজুত থাকে, সরকার কিনবে। দরকার পড়লে সরকারকে বিক্রি করে দেবেন।” কেন্দ্রের বিনামূল্যে রেশন বিলি করার দাবিরও জবাব দেন তিনি।
মমতা বলেন, “রেশনের সব টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল। কোভিডের সময়ে মনে আছে, ছ’মাস ছোলা-টোলা খাইয়েছিল বিনা পয়সায়, আর একটা করে কোভিড ইঞ্জেকশন দিয়ে ছবি লাগিয়েছিল। তার পরে কিন্তু বন্ধ করে দিয়েছিল।’’ মমতার দাবি, বাংলার ১১ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ২০-৩০ লক্ষ লোককে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা বলেছিল কেন্দ্র। তাতে তিনি আপত্তি করেন। তাঁর কথায়, “তাহলে বাকিরা কি না খেয়ে থাকবে? এটা আমি করতে পারি!’’ কেন্দ্র সরকার এই খাতে গত দু’বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা দেয়নি। সেখানে রাজ্য সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে, দাবি তাঁর। কৃষকদের জন্য বছরে ১০ হাজার টাকা, সেচ ও কৃষির উন্নয়নের জন্য নিম্ন দামোদরের অববাহিকা সংস্কারের কথা তুলে ধরেন তিনি।
ভাতারে প্রচারে এসে ধান বিক্রি নিয়ে সমস্যার কথা শুনেছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, “চাষিদের জন্য তৃণমূল সরকার করেছেটা কী? জমি নষ্ট করে ফসল মার খাওয়ানো হয়েছে। টাকা লুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ মহম্মদ হোসেন বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতির জন্য চাষিদের দুর্দশা বেড়েছে। ফসল উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারছেন না। তার পরেও চাষিদেরকে নিয়ে কথা বলা আসলে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল।’’