গোয়ায় ১টি আসনে জয়ী কংগ্রেস। —ফাইল চিত্র।
‘উল্টো পথে’ হেঁটেছিল গোয়া! পাঁচ বছর আগে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে। এ বারের ভোটেও সেখানে ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রইল। সে রাজ্যের দু’টি আসন গত বারের মতোই ভাগাভাগি করে নিল যুযুধান দুই দল, বিজেপি এবং কংগ্রেস।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা আর তার জবাবে পাকিস্তানের বালাকোটে লস্কর-ই-তইবার শিবিরে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলার জেরে ২০১৯ সালে ‘হিন্দুত্ব এবং জাতীয়তাবাদের’ স্রোতে ভেসেছিল দেশ। অধিকাংশ রাজ্যেই ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের তুলনায় ভাল ফল করেছিল বিজেপি। কিন্তু কোঙ্কন উপকূলের একদা পর্তুগিজ উপনিবেশ ‘ব্যতিক্রমী’ রায় দিয়েছিল। দেশ জুড়ে ভরাডুবির মধ্যেও কংগ্রেস গোয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলের কাছ থেকে একটি আসন ছিনিয়ে নিয়েছিল।
গত বারের ফল হুবহু মিলে গিয়েছে এ বারেও। উত্তর গোয়ায় জিতেছেন বিজেপির শ্রীপদ নায়েক। দক্ষিণ গোয়ায় কংগ্রেসের ভিরিয়াতো ফার্নান্ডেজ়। কংগ্রেসের রমাকান্ত খালাপকে প্রায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার ভোটের হারিয়েছেন শ্রীপদ। অন্য দিকে, বিজেপির ধনকুবের প্রার্থী পল্পবী শ্রীনিবাস ডেম্পোকে প্রায় ১৪ হাজার ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন ফার্নান্ডেজ়।
ফাইল চিত্র।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে উত্তর গোয়া থেকে টানা পাঁচ বার জয়ের নজির গড়েছিলেন বিজেপির শ্রীপদ নায়েক। তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গিরিশ চোড়ানকরকে ৮০ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন তিনি। যদিও ২০১৪ সালে গিরিশের জয়ের ব্যবধান ছিল এক লক্ষেরও বেশি ভোট। বিজেপির আরও বড় ধাক্কা এসেছিল রাজ্যের অন্য আসন দক্ষিণ গোয়া থেকে। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফ্রান্সিসকো সার্ডিনহা প্রায় সাড়ে ন’হাজার ভোটে বিদায়ী সাংসদ নরেন্দ্র কেশব সওয়াইকরকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ, ২০১৪-য় ওই আসনে ৩২ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন ‘গোয়া বিজেপির নরেন্দ্র’।
সে বার উত্তর গোয়ায় শ্রীপদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী রমাকান্ত খালাপকে। ১৯৯৬ সালের লোকসভা ভোটে আঞ্চলিক দল মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির প্রার্থী হিসাবে ওই আসনে (তখন নাম ছিল পানাজি লোকসভা) দাঁড়িয়ে বিজেপির সমর্থনে জয়ী হয়েছিলেন রমাকান্ত। এ বার ভোটের ফল বলছে কংগ্রেসের কৌশল কাজে লাগেনি।
অন্য দিকে, দক্ষিণ গোয়ায় এ বার কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’দলই প্রার্থী বদল করেছিল। প্রবীণ সার্ডিনহাকে সরিয়ে কংগ্রেস সেখানে প্রার্থী করেছিল ভারতীয় নৌসেনার অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (স্থলসেনায় ‘কর্নেল’ পদের সমতুল্য) ভিরিয়াতো ফার্নান্ডেজ়কে। অন্য দিকে, বিজেপি টিকিট দিয়েছিল শিল্পপতি পল্লবী ডেম্পোকে। ইতিহাস বলছে, মাত্র দু’বার এই লোকসভা আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। ১৯৯৯ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে। পুণের এমআইটির এমবিএ তথা ১৪০০ কোটির মালকিন পল্লবীকে সামনে রেখে আসনটি ফিরে পেতে এ বার মরিয়া ছিল বিজেপি।
পল্লবীর স্বামী শ্রীনিবাস ডেম্পো গোয়ার প্রভাবশালী শিল্পপতি। ফুটবল থেকে শুরু করে রিয়্যাল এস্টেট, জাহাজ নির্মাণ, শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে বিনিয়োগ রয়েছে ডেম্পো গোষ্ঠীর। পল্লবী সেই সংস্থার এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর। লোকসভা ভোটে গোয়ায় এই প্রথম কোনও মহিলাকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। ভোটের ফলে স্পষ্ট.....
গত ৭ মে তৃতীয় দফায় ভোট হয়েছিল গোয়ায়। তার ঠিক আগেই দক্ষিণ গোয়ার কংগ্রেস প্রার্থী ভিরিয়াতো কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর উদ্যোগের সমালোচনা করতে গিয়ে গোয়ার সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের দাবি করে বসেন! শেষ বেলার ভোটের প্রচারে যা ‘হাতিয়ার’ করেছিল বিজেপি। তা ছাড়া, ২০১২ সাল থেকে বিজেপি গোয়ায় টানা ক্ষমতায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান ছিল, তার সুবিধা পেতে পারে তারা।
২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটের পরে অবশ্য পদ্মশিবিরের ক্ষমতা দখলের পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনার ঝড়় উঠেছিল। সে বার ৪০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে জিতেছিল বিজেপি। কংগ্রেস জিতেছিল ১৭টি আসনে। এমজিপি, গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি এবং নির্দলেরা পেয়েছিল ৩টি করে আসন। শরদ পওয়ারের এনসিপি পেয়েছিল ১টি আসন। কিন্তু একক গরিষ্ঠতা নিয়েও শেষ পর্যন্ত রাজভবন থেকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ পায়নি কংগ্রেস। এমজিপি পার্টি, গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি এবং নির্দল বিধায়কদের নিয়ে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপি নেতা অধুনাপ্রয়াত মনোহর পর্রীকর।
২০২২-এর বিধানসভা ভোটে ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ২০টি আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। কংগ্রেস পেয়েছিল সাড়ে ২৩ শতাংশ ভোট। জিতেছিল ১১টিতে। ফল বলছে, সে বার বিজেপি-বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়েছিল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। আপ সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছিল। তৃণমূল কোনও আসনে না জিতলেও ৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। এ বার ‘ইন্ডিয়া’র সৌজন্যে বিরোধী ভোট বিভাজন হয়নি গোয়ায়। বিরোধী ঐক্যের সুফলও দক্ষিণ কংগ্রেস গোয়ায় কংগ্রেস পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।