মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে বিজেপি গোটা দেশে কত আসন পাবে তা চতুর্থ দফা ভোটের দিনেই জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঞ্চ থেকে ‘মোদীবাবু যায়েগা’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন মমতা। দর্শকাসন থেকে উত্তর এল ‘দিদি আয়েগা’। শুনে মমতা বললেন, ‘‘দিদি তো এখানে আপনাদের সঙ্গেই আছে। তবে দিদি দিল্লিতে বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে নিয়ে আসবে।’’ এর পরেই মমতা সবিস্তার জানালেন কে ক’টি আসন পাবে দেশে।
মমতা বললেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা হিসাব, তাতে ভোট খুব ভাল হয়েছে। আর সেটা বুঝে বাবুদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। ওরা বুঝতে পেরেছে এ বার আর দিল্লিতে মোদীবাবু আসছেন না। আমার কাছে এ ব্যাপারে হিসাব আছে। এখনও পর্যন্ত যা ভোট হয়েছে তাতে বিজেপি ৪০০ তো দূর ২০০-ও পার করতে পারবে না। ’’
দেশে মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসন। তার মধ্যে এ বছর ৪০০ পার করার স্লোগান দিয়ে ভোটে নেমেছে বিজেপি। তাই নিয়েই কটাক্ষ মমতার। তিনি বলেন, ‘‘আজকের যে ভোট হচ্ছে, তার হিসাব এখনও আমি জানি না। তবে এ পর্যন্ত যা হয়েছে, তাতে বলে দিতে পারি বিজেপি বড়জোর ১৯৫ আসন পাবে। আর ‘ইন্ডিয়া’ গোটা দেশে পাবে ৩০০-৩১৫টি আসন।’’
মমতা বললেন, ‘‘ মোদী সরকার দেশ থেকে যাবে। আপনাদের দিদি দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের সরকার গড়বে। এখনও পর্যন্ত হিসাব বলছে, বিজেপি ২০০-ও পার করবে না। বড়জোর ১৯৫। আর ‘ইন্ডিয়া’ ৩১৫ পাবে।’’
মমতা বললেন, ‘‘মতুয়াদের প্রতি যদি মোদীর এত ভালবাসা, তবে তাঁদের নিঃশর্তে অধিকার দিচ্ছেন না কেন মোদী? ফর্ম ফিল আপ করতে বলছেন না কেন? এমনিই দিয়ে দিন। করবে না। আপনারা বরং এক কাজ করুন। এখানকার যে বিজেপি প্রার্থী তাঁকে বলুন আবেদন করতে, ফর্ম ফিল আপ করতে। দেখবেন করবে না। কেন করেনি? তার কারণ তিনি বিদেশি হয়ে যাবেন। কেউ করেনি। আসলে এটা একটা চক্রান্ত।’’
বনগাঁর মঞ্চ থেকে মমতার হুঙ্কার, ‘‘সিএএ করতে দেব না। আপনাদের সংরক্ষণ কেউ আটকাতে পারবে না। কিছু করতে হলে আমার লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে মোদীকে।’’
বনগাঁর বিদায়ী বিজেপি সাংসদ এবং লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরকে নাম না করে আক্রমণ মমতার। বললেন, ‘‘এখানকার বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন, কী করেছেন?’’ দর্শকাসন থেকে সমস্বরে জবাব কিছু করেননি। শুনে মমতা বললেন, ‘‘না করেছে। আমরা ধরে ফেলেছি। নাগরিকত্ব দেব বলে কিছু কিছু জায়গায় টাকা তুলেছে।’’
মমতা বলছেন, ‘‘মোদীর গ্যারান্টি হল ৪২০ গ্যারান্টি। মানে গ্যারান্টি নেই। ‘নো গ্যারান্টি’। ’’
বিজেপিকে তাদের বিজ্ঞাপন নিয়ে কটাক্ষ করলেন মমতা। বললেন, ‘‘আমার নাম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন করছে। আর নাম পায়নি খুঁজে। সে তার মাকে বলছে, ‘চল মোদীকে ভোটটা দিয়ে আসি। আমার বাড়িতে জল দিয়েছে’। ঘেঁচু দিয়েছে। উনি জলটা দেননি। জলটা আমরা দিয়েছি। এই জলের ৭০ শতাংশ টাকা, জমি এবং রক্ষণাবেক্ষণ সব রাজ্য সরকার করে। মোদী বাবু কিচ্ছু করেনি।’’ একটু থেমে বললেন, ‘‘আপনারা নাকি বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ পান। মোদীবাবু বলছে। পাচ্ছেন নাকি? বিনা পয়সা গ্যাস পাচ্ছেন? এ হল গ্যাস বেলুনের থেকেও বড় বেলুন। ’’
মমতা বললেন, ‘‘সন্দেশখালির মা বোনেদের অসম্মান করার জন্য টাকা খরচ করছে, মদ দিচ্ছে, বোমা-গুলি-পিস্তল দিচ্ছে। যা ইচ্ছে করে যাচ্ছে। আমি ওদের বলি একটা মা-বোনেদের সম্মান চলে গেলে সেই সম্মান ফিরবে না। মা-বোনেদের নিয়ে এই চক্রান্তের খেলা খেলবে না। নরেন্দ্র মোদী জেনে রাখ, আমাদের এখানে মা বোনেদের গায়ে হাত দিতে গেলে সবাই ভয় পায়। হাত দিলে তাকে জেলে থাকতে হয়। এটা তোমাদের উত্তরপ্রদেশ নয়, মধ্যপ্রদেশ নয় যে, তফসিলিদের উপর অত্যাচারে ভারতে এক নম্বর। এটা বাংলা। এটা রবীন্দ্রনাথের বাংলা। এই বাংলায় অনেক মানুষ অনেক ধর্ম অনেক সম্প্রদায়।’’
বনগাঁয় সীমান্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত ল্যান্ডপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের অধীনে নিয়ে আসায় এবং রাজ্য সরকার তার ট্যাক্স নেওয়ায় বনগাঁ পুরসভার তরফে ল্যান্ডপোর্টের তরফে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। মমতা জানিয়েছেন, বিশ্বজিৎ যদি জেতে তবে আমি, বিশ্বজিৎ, মমতাবালা সবাই একসঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। যাতে ওদিকটাও ঠিক থাকে। আর গরীব মানুষগুলোরও কর্মসংস্থান হয়।
ঠাকুরনগরের উন্নয়ন, গাইঘাটার উন্নয়ন বনগাঁ পুলিশজেলার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘‘যা কাজ হয়েছে, তা বলতে অনেক সময় লাগবে। বিজেপি তো বলছে কিছু কাজ হয়নি। তাই কয়েকটা বলছি।’’
মমতা বলছেন, ‘‘মমতাবালা ঠাকুরকে আমি সম্মান দিয়েছি। তাঁকে প্রার্থী করেছি। সে জিতেওছিল। বিজেপি মিথ্যা কথা বলে তাকে হারিয়ে দিয়েছে। তার পরে আমরা তাঁকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করে সম্মান দেখিয়েছি।’’