Lok Sabha Election 2024

গড়-দখলে নারীশক্তিই নির্ণায়ক

সব ছাপিয়ে মহিলাদের কাছে দলের বার্তা আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মহিলা সংগঠনকে বেশি করে প্রচারে নামতে বলা হয়েছে।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

গড়বেতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ০৮:২৯
Share:

গড়বেতা বিধানসভা এলাকায় দেওয়ালে লড়াই সেয়ানে সেয়ানে। নিজস্ব চিত্র।

মহিলা ভোট যার, গড়ও তার।

Advertisement

গড়বেতায় লিড পেতে যুযুধান দুই শিবিরেরই লক্ষ্য এ বার নারী শক্তি। মহিলাদের কাছে টানতে মরিয়া তৃণমূল-বিজেপি দু'পক্ষই। আর তার মাঝে বাম-আইএসএফের প্রচারেও থাকছে মেয়েদের কথা।

গড়বেতা মানেই বোমা-বন্দুক-সন্ত্রাস কিংবা বালি-মোরামের দুর্নীতি। এ সব অবশ্য এখন অতীত। এ বার লোকসভা ভোটে নারীশক্তিতেই জয় দেখছে গড়বেতা। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গড়বেতা বিধানসভা এলাকায় এ বার পুরুষ ও মহিলা ভোটার প্রায় সমান সমান। এই বিধানসভা এলাকায় রয়েছে গড়বেতা ১ ব্লকের ১২টি ও গড়বেতা ২ (গোয়ালতোড়) ব্লকের ৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ১৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় মোট ভোটার ২,৪১,৯৭২ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটারই ১,১৭,৩৩৯ জন, অর্থাৎ ৪৮.৪৯ শতাংশ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন মহিলা ভোট ব্যাঙ্কই এ বার গড়বেতার নির্ণায়ক শক্তি।

Advertisement

সেটা আঁচ করেই মহিলামহলে মন দিচ্ছে দুই ফুলই। মেয়েদের জন্য কে, কত কাজ করছে তা বোঝাতে দিনরাত দৌড়াচ্ছেন দু'দলের নেতা-কর্মীরা। গড়বেতা বিধানসভার গাঁ-গঞ্জ উত্তপ্ত হচ্ছে লক্ষ্মীর ভান্ডার বনাম অন্নপূর্ণা যোজনা, কন্যাশ্রী বনাম উজ্জ্বলা গ্যাসের মতো রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রকল্পের তরজায়। অন্য দিকে, বামেরা হাসরথ, সন্দেশখালির ঘটনা তুলে বিজেপি-তৃণমূল উভয়কেই বিঁধছে। সংসদে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণে নিজেদের ভূমিকার কথা বলে বামেদের প্রচারে উঠছে কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গও। আর গড়বেতায় পরীক্ষিত না হয়েও প্রচারে সমাজ বদলের হাওয়া তোলার চেষ্টা করছে আইএসএফ।

তৃণমূলের লক্ষ্য, মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রেখে গড়বেতা পুনরুদ্ধার, আর বিজেপি চাইছে উনিশের 'লিড' ধরে রেখে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিতে। গত লোকসভা ভোটে শক্তঘাঁটি গড়বেতা বিধানসভায় লিড হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল। তারপর একুশের বিধানসভা ও তেইশের পঞ্চায়েতে অবশ্য ঘাসফুলের আধিপত্য ফিরেছে। চমকাইতলা থেকে আমলাশুলি— তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, ‘‘এ বার অন্য লড়াই, দিল্লির ভোট। বিপক্ষকে হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।’’ দলের পরামর্শদাতা সংস্থা ও জেলা নেতৃত্ব আরও জানেন, এলাকার অনেক পঞ্চায়েতেই কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকট, 'মাদার'-এর সাথে শাখা সংগঠনের দূরত্ব আছে। এগুলো কাটিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল নিচ্ছে তৃণমূল।

তবে সব ছাপিয়ে মহিলাদের কাছে দলের বার্তা আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মহিলা সংগঠনকে বেশি করে প্রচারে নামতে বলা হয়েছে। প্রচারে মহিলাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিষয় ছাড়াও তৃণমূল তুলে ধরছে এলাকার উন্নয়ন, আবাস যোজনায় বাড়ির প্রতিশ্রুতি, ৫০ দিন কাজের নিশ্চয়তায় কর্মশ্রী, কৃষকবন্ধুর মতো রাজ্যের প্রকল্পের কথাও। সঙ্গে নিশানায় বিজেপির মিথ্যাচার। দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলছেন, ‘‘গড়বেতা বিধানসভা থেকে এ বার আমাদের অনেক বেশি লিড থাকবে। নেতৃত্বকে বলা হয়েছে সমন্বয় রেখে নিবিড় প্রচারে জোর দিতে। বাম-বিজেপির মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে দিনরাত প্রচারে নেমে পরিশ্রম করছেন আমাদের কর্মীরা। এর ফল আমরা পাবই।’’

‘গড়-রক্ষা’য় মরিয়া গেরুয়া শিবিরও। তাদের প্রচারে উঠে আসছে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কর্মহীনতা, সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। বিজেপির গড়বেতা বিধানসভার আহবায়ক তারাচাঁদ দত্ত, দলের ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি কবিতা দে-রা বলছেন, ‘‘উজ্জ্বলা গ্যাস, অন্নপূর্ণা যোজনায় ৩ হাজার টাকা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সাহায্য— এ সবের প্রচার হচ্ছেই। তার সাথে সন্দেশখালি, নিয়োগ দুর্নীতি, তৃণমূলের ভাঁওতাবাজির প্রসঙ্গও আসছে।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ লোধা জুড়ছেন, ‘‘যে মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে তৃণমূলের গর্ব ছিল, সেই মহিলারা সন্দেশখালির ঘটনার পরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। মহিলা ভোটেই এ বার আমাদের লিড হবে গড়বেতায়।’’

গড়বেতার বুক চিরে গিয়েছে স্রোতস্বিনী শিলাবতী। এই জনপদ থেকে পঞ্চাশ-ষাটের দশকের কৃষক আন্দোলনে স্লোগান উঠেছিল, ‘লাঙল যার জমি তার’। তার সময়ের আবর্তে বোমা-বন্দুক-বালির পাহাড় টপকে এ বার ক্ষমতার উৎসে মহিলা ভোট। আর সেই ভোটের ‘গ্যারান্টি’ পেতে গড়বেতায় আসতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement