—প্রতীকী চিত্র।
গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ক্ষতে ক্রমেই প্রলেপ পড়েছে পাড়া বিধানসভা এলাকায়। পরিসংখ্যান বলে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের আসনগুলিতে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে পাড়া বিধানসভায় বিজেপির চেয়ে ৪০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ঘাসফুল শিবির। তৃণমূলের দাবি, আগামী লোকসভাতেও একই ছবি বজায় থাকবে। দাবি উড়িয়ে বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোট এক নয়।
একদা সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পাড়া বিধানসভায় ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেধে লড়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেস থেকে প্রার্থী হয়ে বিধায়ক হন উমাপদ বাউরি। পরে তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৬ সালে সেই উমাপদকে প্রার্থী করে তৃণমূল। জয়ীও হন তিনি। ছবিটা পাল্টায় তিন বছরের মাথায় হওয়া ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ওই বিধানসভায় ৪১ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে যান বিজেপির প্রার্থী জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো। পাড়া যে পদ্মের উপরেই ভরসা রাখছে, তা ফের প্রমাণ হয় দু’বছরের মধ্যে হওয়া বিধানসভা ভোটে। তৃণমূল প্রার্থী উমাপদকে হারান বিজেপির নদীয়ারচাঁদ বাউরি। ভোটের ব্যবধান যদিও ছিল চার হাজারের কিছু বেশি।
৪১ হাজার থেকে ‘লিড’ চার হাজারে নেমে আসা। তা-ই যেন অক্সিজেন জোগায় তৃণমূল শিবিরকে। পাড়া বিধানসভা পুনরুদ্ধারে মনোনিবেশ করে শাসকদল। উমাপদের উপরে ভরসা রেখে ব্লক সভাপতি করা হয়। ব্লক কমিটির বদল ঘটানো হয় ওই বিধানসভার অর্ন্তভুক্ত রঘুনাথপুর ২ ব্লকেও। শিক্ষক নেতা সঞ্জয় মাহাতাকে দেওয়া হয় ব্লক সভাপতির দায়িত্ব। উমাপদের কথায়, “লোকসভা ও বিধানসভায় বিজেপি জিতলেও তাদের ভোটের হার কমেছিল উল্লেখযোগ্য হারে। তাতে স্পষ্ট যে, সাধারণ মানুষের সমর্থন ক্রমেই হারাচ্ছে বিজেপি। বুথ স্তরে সংগঠনকে আরও পোক্ত করলেই বিজেপিকে পেছনে ফেলে দেওয়া সম্ভব। তা বুঝেই বুথ স্তরে সংগঠনকে পোক্ত করতে নজর দেওয়া হয়েছিল।” একই সুরে সঞ্জয়ও জানান, সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে পঞ্চায়েত সমিতি ও কয়েকটি পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে আন্দোলন শুরু হয়। ক্ষমতা পেয়েও বিজেপি যে উন্নয়নে ব্যর্থ, সেই দিকটা সামনে আনা হয়।
নিট ফল—গত পঞ্চায়েত ভোটে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি প্রথম বার দখল করতে সমর্থ হয় তৃণমূল। ভোটের ব্যবধানও ওলোট-পালট হয়ে যায়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে যেখানে বিজেপি ৪১ হাজারের ‘লিড’-এ এগিয়েছিল, সেখানে পঞ্চায়েতে চল্লিশ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ে গেরুয়া শিবির। উমাপদ বলছেন, “এক দিকে নিচু স্তরে সংগঠন আরও পোক্ত করা ও অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে শুরু করে নানা জনমুখী প্রকল্প। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েতেই আমরা নিজেদের ঘর গুছিয়ে ফেলেছি। লোকসভাতেও ভাল ফল হবে।”
এই ‘তত্ত্বে’ তবে আমল দিতে চাইছে না গেরুয়া শিবির। পাড়া বিধানসভারই বাসিন্দা, বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী মনে করাচ্ছেন, পঞ্চায়েত ও লোকসভার ভোট একই নয়। তাঁর দাবি, “যে পঞ্চায়েত ভোটের পরিসংখ্যান নিয়ে তৃণমূল লাফালাফি করছে, তাতে বিস্তর জল মেশানো আছে। ওই ফলে ভোটারদের জনমতের প্রকৃত প্রতিফলনই ঘটেনি। পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যে গণনায় কারচুপি করেছে তৃণমূল।”
তাঁর সংযোজন, “পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে বিস্তর ফারাক। গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে দেশে কী উন্নয়ন হয়েছে, তা সবাই জানেন। স্থায়ী সরকার গঠনের প্রশ্নে মানুষ ভোটটা এ বারও পদ্মফুলে দেবেন।”