অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য প্রস্তত করা হচ্ছে সভাস্থল। খয়রাশোলের গোষ্ঠ ডাঙাল মাঠে। নিজস্ব চিত্র।
জেলার ১১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে হাতছাড়া হয়েছিল শুধু দুবরাজপুর। চলতি লোকসভা নির্বাচনে সেই দুবরাজপুর বিধানসভাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায় শাসকদল। তাই আসছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সব ঠিক থাকলে, শনিবার, ২৭ এপ্রিল, বেলা ১টায় দুবরাজপুর বিধানসভার অন্তর্গত খয়রাশোলের গোষ্ঠডাঙালে নির্বাচনী জনসভা করবেন তিনি। যা নিয়ে তৎপরতা তুঙ্গে। মঞ্চ, হেলিপ্যাড, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা থেকে লোকজমায়েত— সবেতেই নজর রয়েছে জেলা তৃণমূলের। সভাকে সফল করতে ব্লক ও জেলা স্তরের নেতারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছেন। তৎপর প্রশাসনও। কিন্তু, এই প্রবল গরমে জনতাকে কী ভাবে বসিয়ে রাখা যায় সেটাই ভাবাচ্ছে নেতৃ্ত্বকে।
সব ব্যবস্থা ঠিক মতো এগিয়েছে কি না খতিয়ে তা দেখতে বুধবার বিকেলে খয়রাশোলের আরও এক দফা বৈঠক করেন দলের জেলা ও খয়রাশোল, দুবরাজপুর, রাজনগর ব্লকের নেতারা। উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, কোর কমিটির আর এক সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ (দুবরাজপুর বিধানসভার দায়িত্বে)। ঠিক হয়েছে মূলত খয়রাশোল, দুবরাজপুর, পড়শি রাজনগর ব্লক এবং সিউড়ি ১ ব্লকের কর্মী, সমর্থকদের এনে মাঠ ভরানো হবে। তার জন্য প্রচুর বাস ভাড়া করা হয়েছে। যে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বাস ছাড়বে, সেখানে বাসে উঠলেই জল ও টিফিন দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে।
আশিসের দাবি, ‘‘মাঠ ছাপিয়ে লোক হবে একটু বলতে পারি।’’ আশিস এ কথা বললেও, প্রবল গরমে জন্য দলের অন্দরে সংশয় থাকছেই। তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু খয়রাশোলের ব্লক থেকে ২০ হাজার কর্মী, সমর্থকে মাঠে আনার কথা। ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ১৩০-১৪০টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুবরাজপুরের ১০টি পঞ্চায়েত ও শহর এলাকার জন্যও শতাধিক বাস থাকছে। রাজনগরে ২৫টি ,সিউড়ি থেকেও ৩০টির বেশি বাস থাকছে। বাসমালিক সংগঠন সূত্রে খবর, কমবেশি ৩০০টি বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তাতে ৫০ জন করে কর্মী, সমর্থক সভায় এলে সংখ্যাটা ১৫ হাজারে দাঁড়ানোর কথা।
বৃহস্পতিবার খয়রাশোলে গিয়ে দেখা গেল, গোষ্ঠডাঙাল মাঠে জোরকদমে সভামঞ্চ প্রস্তুত করার কাজ চলেছে। এক দিকে, হেলিপ্যাড তৈরির কাজ চলছে। অন্য দিকে, তৈরি হচ্ছে সভামঞ্চ। তবে মূল মঞ্চের হ্যাঙার তখনও পৌঁছয়নি। রাস্তার ধারে প্রচুর দলীয় পতাকা লাগানো হয়েছে। ফ্লেক্স, ফেস্টুন, ব্যানার লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। সভা নিয়ে মাঝে মধ্যেই খয়রাশোল ব্লক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছেন স্থানীয় নেতারা।
তার পরেও ‘সংশয়’ রয়েছে। দলের নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রথমত প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ১০টার মধ্যে বাস ছাড়বে। তার জন্য প্রস্তুতি লাগে আরও কিছুক্ষণ। সভা বেলা ১টায়। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরনো তাপমাত্রায় এতক্ষণ লোকজনকে বসিয়ে রাখাই কঠিন। এতক্ষণ গরমের কষ্ট তাঁদের পক্ষে সহ্য কঠিন। পাশাপাশি, বাসের ব্যবস্থা হলেও বাস ভরে লোক আনাটাও চ্যালেঞ্জের।
তবে গরম ছাপিয়েও খয়রাশোলের দাঁড়িয়ে দলের ‘সেনাপতি’ কী বার্তা দেন— সে দিকেও তাকিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ‘দীর্ণ’ ব্লক তৃণমূলের নেতারা। প্রাক্তন ব্লক সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী ও তাঁর বিরোধী বলে পরিচিত চার জনকে নিয়ে মোট পাঁচ সদস্য এই মুহূর্তে খয়রাশোলের দায়িত্বে। কিন্তু সমীকরণ এখনও ‘সহজ’ নয়। দলের নানা কর্মসূচি থেকে নিজেকে ‘সরিয়ে’ রাখছেন কাঞ্চন। এমনই দলের অন্দরে খবর।
দলীয় নেতৃত্ব মনে করেছেন, সভা থেকে এ ব্যাপারে কড়া বার্তা দিতে পারেন অভিষেক। যদিও আশিস বলেন, ‘‘৩ এপ্রিল তারাপীঠে একটি কর্মী সভায় সংগঠন নিয়ে যে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক, সেটা পালিত হচ্ছে। তার পর সকলে একযোগে কাজ করছেন। আশা করি সব ভালই হবে।’’