—প্রতীকী চিত্র।
বিধানসভা ভোটে এক রকম। আবার লোকসভা ভোট এলে অন্য রকম। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বারাবনি এলাকার ভোট-চরিত্র দেখা গিয়েছে এমনই। যা চিন্তায় রাখছে ঘাসফুল ও পদ্ম, দুই শিবিরকেই।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে এই এলাকায় বিধানসভা ভোটে বামেরা আট বার, কংগ্রেস পাঁচ বার ও তৃণমূল চার বার জয়ী হয়েছে। অথচ, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বারাবনিতে সব দলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও সেই ধারা বজায় থাকে। আবার, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল, বিজেপি দ্বিতীয়। তৃণমূল খানিক স্বস্তি দেখেছে ২০২২ সালের উপনির্বাচনেও। সে বারও এখান থেকে ‘লিড’ পায় তারা।
বারবানি ও সালানপুর ব্লক নিয়ে গঠিত বারাবনি বিধানসভা এলাকা। দুই ব্লকের ১৯টি পঞ্চায়েতের সব ক’টিই তৃণমূলের দখলে রয়েছে। দু’টি পঞ্চায়েত সমিতিও তাদের হাতে। তবে গত দশকে দু’বার লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়া চিন্তায় রাখছে তৃণমূলকে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপি মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পায়। তিন বছরের মধ্যে লোকসভা ভোটে অন্য সব দলকে ছাপিয়ে বিজেপি প্রায় ৩২ শতাংশ ভোট পায় এখান থেকে। তার পরে তাদের ভোট প্রাপ্তি আরও বেড়েছে এই এলাকায়।
সে কারণেই এ বার এই কেন্দ্রের লড়াই তাঁরা হালকা ভাবে নিচ্ছেন না বলে তৃণমূল নেতৃত্ব সূত্রের খবর। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘একশো দিনের কাজ ও আবাসন প্রকল্পের অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি প্রচারের মূল হাতিয়ার করেছি। এর সঙ্গে রাজ্য সরকারের ৭২টি প্রকল্পের সুফল প্রচার করছি। তাতে লাভ হচ্ছে।’’ বিধানের দাবি, বারাবনিতে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৃণমূলের বাড়তি সুবিধা।
সম্প্রতি বারাবনির দোমোহানিতে বিজেপির কর্মী সম্মেলন ঘিরে দু’পক্ষের গোলমাল হয়। চেয়ার-টেবিল, কাচের সামগ্রী ভেঙে মঞ্চে বসে থাকা নেতৃত্বের দিকেও ছুড়ে মারার অভিযোগ ওঠে। বারাবনির মণ্ডল নেতৃত্বের অভিযোগ, সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা নয়, এমন কয়েক জন জোর করে সম্মেলন কক্ষে ঢুকে পড়ায় এই পরিস্থিতি হয়েছিল। দ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের ধারাতেই বারাবনিতে সমর্থন বেড়েছে। সেই ভিত পোক্ত করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের ‘দুর্নীতি’ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি। দলের জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘অবস্থার বিশেষ হেরফের হয়নি। তাই এ বারও এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ‘লিড’ পাবেন।’’
তবে পদ্মের কাঁটা তুলতে নানা অঙ্কই কষছেন তৃণমূল নেতারা। দলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দাবি, আসানসোল কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী কংগ্রেসের ভোট পাবেন না। সেই ভোট তৃণমূলে আসবে। তা ছাড়া, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে নিজেদের ভোট ধরে রাখতে পারেনি বামেরা। সেই ভোট বিজেপির বাক্সে পড়েছিল। এ বার সেই পরিস্থিতি নেই বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূলের এই তত্ত্ব মানতে নারাজ সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বামেরা কখনও বিজেপির দিকে যায়নি। তৃণমূল ও বিজেপির থেকে সমদূরত্ব রেখে চলার নীতিতেই কংগ্রেসের সমর্থন পাবেন আমাদের প্রার্থী। ফলে, আশার গুড়ে বালি পড়বে তৃণমূলের।’’ তাদের ভোট জোটের প্রার্থীই পাবেন বলে দাবি কংগ্রেস নেতৃত্বেরও।