—প্রতীকী চিত্র।
চারটি বিধানসভা এলাকায় পিছিয়ে থাকলেও বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তিন বিধানসভা এলাকার ‘লিড’ ২০১৯ সালে জিতিয়ে ছিল তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়কে। এ বারে সেই তিন বিধানসভা এলাকা মুরারই, হাঁসন ও নলহাটিতে ভোটের হার বেশ খানিকটা কম বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। এই তথ্য সামনে আসতেই ভোটের হার কম কিসের ইঙ্গিত, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত লোকসভা নির্বাচনে মুরারই, হাঁসন ও নলহাটি বিধাসসভা এলাকায় গড়ে ৮৫ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভোট পড়েছিল। এ বার সেখানে ভোটের হার নেমে এসেছে ৮০ শতাংশ বা তার নীচে। ১৩ মে, চতুর্থ দফায় ভোটপর্ব শেষে নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮১.৯১ শতাংশ (পোস্টাল ভোট বাদ দিয়ে)। যা অন্যান্যবারের তুলনায় কম। ২০১৪ ও ’১৯ সালে বীরভূম কেন্দ্রে ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ৮৫.২৮ এবং ৮৪.৩৯ শতাংশ। বিরোধীদের দাবি, এ বার ছাপ্পা ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি শাসকদল তৃণমূল। অভিযোগকে পাত্তা দিতে না চাইলেও ভোটদানের হার কেন কম, তার সদুত্তর দিতে পারেননি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
লক্ষ্যনীয় ভাবে অন্যান্যবার গড় ছাপিয়ে ভোট পড়ে বীরভূমের এই তিন বিধানসভা এলাকায়। এ বারে সেখানে ভোটদানের হার যেমন কম, জেলার সার্বিক গড়ও ছুঁতে পারেনি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ব্যতিক্রম রামপুরহাট। সূত্রের খবর, মুরারই কেন্দ্রে এ বার ভোট পড়েছে ৭৮.২ শতাংশ। ২০১৯ সালে ওই বিধানসভা এলাকা থেকে প্রায় ৭০ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন শতাব্দী রায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, হাঁসন এবং নলহাটিতে ভোটের হার ৮০ শতাংশ বা তার নীচে। বিরোধীরা মনে করাচ্ছেন যে, ওই দুই বিধানসভা এলাকা থেকে ৫৭ হাজার ২৯১ ভোট লিড পেয়েছিল তৃণমূল। প্রশাসন সূত্রে খবর, মহিলা ভোট কাঙ্ক্ষিত ভাবে পড়লেও পুরুষ ভোটের হার তুলনায় কম। হাঁসন, নলহাটি, মুরারই— এই তিন বিধানসভা এলাকা থেকে গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল যথাক্রমে ৮৬ শতাংশ, ৮৮.১ শতাংশ এবং ৮৮.৬ শতাংশ। হুট করে প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোট কমল কী ভাবে, সেটা নিয়েই জল্পনা। বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদ এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘আসলে প্রতিবার শেষবেলায় ছাপ্পা ভোট দেয় শাসকদল। সেখানেই ভোটের হার কয়েক শতাংশ বেড়ে যায়। এ বারে সেই সুযোগ পায়নি তারা।’’ প্রায় একই সুরে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘এর আগে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। ছাপ্পা ভোট করত শাসকদল। এ বার গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। ফল বের হলে সকলেই বুঝতে পারবেন।’’
মিল্টন রশিদ প্রার্থী হওয়ায় সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটির অঙ্ক মাথায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তার সঙ্গে ভোটের হার কম অন্য কোনও সমীকরণের জন্ম দেবে কি না, এমন সম্ভাবনা এবং হারজিতের ব্যবধান নিয়েও চর্চা অব্যাহত।যদিও জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনের মতো ভোটের হার হয়নি, এটা ঠিক। তবে আমার কাছে যা খবর, তাতে ওই তিন বিধানসভা এলাকায় ভোটার হার ৮০ শতাংশের একটু উপরেই রয়েছে। বিরোধীদের যা ইচ্ছে বলতে পারে, শাসকদলকে কখনও ছাপ্পা ভোটে জিততে হয় না। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়ে জেতায়। এ বারও তাই হবে।’’