—প্রতীকী চিত্র।
দেগঙ্গা বিধানসভার সংখ্যালঘু ভোটই তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে লক্ষাধিক করেছে। বারাসত লোকসভা সাতটি বিধানসভার মধ্যে গত বারের মতো এ বারও তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদাকে লিড দেওয়ার শীর্ষে দেগঙ্গা। এই অঞ্চলে ভোট বেড়েছে বিজেপিরও। লোকসভায় প্রথম বার লড়ে নজর কেড়েছে আইএসএফ। ভোট হারিয়ে কার্যত তলানিতে বাম-কংগ্রেস জোট।
১১টি পঞ্চায়েত নিয়ে দেগঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্র। বারাসত লোকসভার অধীনে এক মাত্র গ্রামীণ বিধানসভা এলাকা এটি। আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। সর্বত্র বাড়ি বাড়ি পৌঁছয়নি জলের সংযোগ। রাস্তাঘাট নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। হাসপাতালের পরিকাঠামোর সমস্যা বহু দিনের। স্থানীয় কর্মসংস্থানের অভাবে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রচুর। নানা সমস্যায় জর্জরিত দেগঙ্গাবাসীর অনেকেরই তৃণমূল নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপরে ক্ষোভ আছে।
তবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা চার বারই লোকসভা ভোটে তৃণমূলের উপরেই আস্থা রেখেছেন এখানকার ভোটারেরা।
সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটের ফলাফল বলছে, ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টিতেই লিড পেয়েছে তৃণমূল। শুধু মাত্র বেড়াচাঁপা ২ পঞ্চায়েত হাজারখানেক ভোটে পিছিয়ে কাকলি।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কাকলি দেগঙ্গা বিধানসভা থেকে ৭৩ হাজার ৯০৬ ভোটে লিড পেয়েছিলেন। এ বার লিড প্রায় ৬৯ হাজার ভোটের। অর্থাৎ, গত বারের তুলনায় লিড কিছুটা কমেছে। তবে নেহাতই খারাপ অবস্থা বাম-কংগ্রেস জোটের। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এখান থেকে বাম প্রার্থী পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৮১৬ ভোট। এ বার বাম-কংগ্রেস জোটের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় পেয়েছেন ৭ হাজার ৮৩৮ ভোট।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফ প্রথম বার ভোটে লড়ে তৃণমূলকে চাপে ফেলার পরে প্রথম বার লোকসভায় লড়েছে। আইএসএফ প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় দেগঙ্গায় পেয়েছেন ৫০ হাজার ২৪৯টি ভোট। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফের প্রার্থী এই কেন্দ্রে ৬৭ হাজার ৫৬৮টি ভোট পেয়েছিলেন। সে অর্থে আইএসএফের ভোট কিছুটা কমলেও দেগঙ্গায় দ্বিতীয় স্থানে তারা। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে আইএসএফ এই অঞ্চলে তৃণমূলকে বেগ দিতে পারে— এখন থেকেই মনে করছেন ঘাসফুল শিবিরের অনেকে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দেগঙ্গায় গত বিধানসভার তুলনায় ভোট বেড়েছে বিজেপির। গত লোকসভায় এই বিধানসভা থেকে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ৮০৯টি ভোট। এ বার বিজেপির স্বপন মজুমদার পেয়েছেন ৪২ হাজার ৩৮২টি ভোট।
দেগঙ্গা ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনিসুর রহমান বিদেশ বলেন, ‘‘দেগঙ্গায় বাম-কংগ্রেস জোট এবং বিজেপিতে পিছনে ফেলে আইএসএফ দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। তবে মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা বারাসত লোকসভার ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে সব থেকে বেশি লিড দিতে পেরেছি প্রার্থীকে।’’
বিজেপি নেতা তুহিন মণ্ডল বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু এলাকা হলেও মানুষের কাছে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বলেই এখানে গত বারের থেকে বেশি ভোট পেয়েছি আমরা।’’
কী বলছেন আইএসএফ নেতৃত্ব?
দলের নেতা কুতুবউদ্দিন ফতেহি বলেন, ‘‘আমরা আগামী বিধানসভা ভোটের জন্য এখন থেকেই তৈরি হচ্ছি। পঞ্চায়েত ভোটে তো বটেই, এ বার লোকসভা ভোটেও আমরা এখানে ভাল ফল করেছি।’’ তাঁর মতে, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখানে প্রবল। মানুষের মনে অনুন্নয়ন নিয়ে প্রচুর ক্ষোভ আছে। সে জন্যই দেগঙ্গায় আমাদের গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্ট ভাল।’’