—প্রতীকী চিত্র।
শুশুনিয়ার ঝর্নাতলায় জলের অন্ত নেই। অথচ ছাতনা ব্লকে গ্রামে গ্রামে জলের সঙ্কট নিয়ে ক্ষোভ শোনা যাচ্ছে। তবে সে সবের থেকেও শাসকদল তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের সক্রিয়তার অভাব। অন্যদিকে, বিজেপির অন্দরেও বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল কম নয় এই এলাকায়। দলেরই পুরনো নেতৃত্বের একাংশ প্রকাশ্য বিরোধিতায় নেমে পড়েছেন। সিপিএমও ভোট ফেরাতে উঠে পড়ে লেগেছে। ছাতনা বিধানসভা কার মাথায় ছাতা ধরে, তা নিয়ে কৌতূহল সব মহলেই।
২০১২ সালে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্পের আওতায় ছাতনা ব্লকের ঘরে ঘরে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল আনার কাজ শুরু হয়েছিল। ঘরে ঘরে পাইপলাইন গেলেও জল যায়নি বলে অভিযোগ। সপ্তাহ খানেক আগেই ছাতনার আড়রা পঞ্চায়েতের বাঁন্দাগাল গ্রামে তৃণমূলের বুথস্তরের বৈঠক ছিল। স্থানীয় মহিলারা সেখানে জড়ো হয়ে নেতাদের সাফ জানিয়ে দেন, ‘দরকার হলে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়ে নিন, তবু ঘরে ঘরে জল দিন’। আড়ালে এক ব্লক তৃণমবল নেতার স্বীকারোক্তি, “সত্যিই তো মানুষ পাইপলাইন পেল, অথচ জল পেল না! গ্রামে গ্রামে এক সমস্যা।’’
আবার মহিলা তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী বিশ্বরূপা সেনগুপ্তের ছাতনার সভা, মিছিলে লক্ষীর ভান্ডারের উপভোক্তাদের ঢল ভরসা দিচ্ছে নেতৃত্বকে। কিন্তু অন্য কর্মসূচিতে পুরুষদের সাড়া তুলনায় কম পাওয়া যাচ্ছে বলে মানছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।
কেন এই পরিস্থিতি? ছাতনার পুরনো তৃণমূল নেতারা এ জন্য দায়ি করছেন অঞ্চল সভাপতিদের। তাঁদের দাবি, অঞ্চল সভাপতিদের অনেকেই বুথে পা দেননি। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ঢের। পুরনো কর্মীদের অঞ্চল কমিটিতে রেখেও দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হয় না। কোথাও কোথাও তাঁদেরই ‘বিজেপি কর্মী’ বলে দাগিয়ে দিয়ে দলের কাছে ভাবমূর্তি খারাপ করার চেষ্টা চলছে।’’
তৃণমূলের অন্দরের খবর, ছাতনা বিধানসভার আওতায় থাকা ইঁদপুর ব্লকের পাঁচটি অঞ্চল নেতৃত্বের একাংশও বসে গিয়েছেন। দলের প্রতি তাঁদেরও ক্ষোভ রয়েছে। এই সমস্যা মেটাতে দলের তরফে কড়া দাওয়াই দেওয়া হয়েছে। ঘরে ঘরে জনসংযোগের জন্য প্রতিটি অঞ্চলে দু’জন করে আহ্বায়ক নিয়োগ করা হয়েছে। নেতারা এলাকায় ঘুরছেন কি না, তার নিয়মিত রিপোর্টও নিচ্ছে দল।
রাইপুরের যুব নেতা তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য রাজকুমার সিংহকে ছাতনা বিধানসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে ‘ক্ষয়’ রোখার চেষ্টায় নেমেছে তৃণমূল। রাজকুমারের দাবি, “সাংগঠনিক ভাবে আমরা প্রস্তুত। এলাকায় বিজেপির হাওয়া নেই। গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে এলাকার যে সব বাম কর্মী বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁরাও ভুল বুঝে ফিরে গিয়েছেন পুরনো দলে।” এটা স্পষ্ট যে বিজেপিকে রুখতে সিপিএমের ভোট কাটার উপরে এই এলাকায় অনেকটাই নির্ভর করছে তৃণমূল।
বিষয়টি বিজেপির কাছেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে এই এলাকায় বাম ভোটের বড় অংশ বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাওয়া অনেকটাই ঘুরে গিয়েছে। ওই ভোটে ছাতনায় বাম প্রার্থীরা ভাল ভোট টানায় বহু পঞ্চায়েতে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। উপরন্তু এলাকার পুরনো (বর্তমানে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়া) নেতৃত্বও এ বার সরাসরি প্রার্থী সুভাষ সরকারের বিরোধিতায় নেমে পড়ায় দলের নিজস্ব ভোটও কিছুটা ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিজেপির কিছু নেতা।
বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, “বিজেপির একটি ভোটও ভাগ হবে না। সিপিএমের অস্তিত্ব কোথায়? কেন বাম প্রার্থীকে ভোট দিয়ে মানুষ ভোট নষ্ট করবেন?’’
বিজেপি প্রার্থী সুভাষেরও দাবি, ‘‘ছাতনার মণ্ডল সভাপতিদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছি। প্রত্যেকের আত্মবিশ্বাস, এলাকা ভিত্তিক রিপোর্ট শুনে আমি নিজেই অবাক। ১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের চেয়েও এ বার ছাতনায় আমাদের জয়ের ব্যবধান বাড়বে বলে আমি নিশ্চিত।” ওই এলাকায় জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীও। অরূপ বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার, জয়জোহার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো রাজ্য সরকারের সব ক’টি প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন ছাতনার মানুষ। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশীর্বাদ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। সুভাষবাবু ছাতনায় যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, একটিও রাখেননি। মানুষের সমর্থন আমাদের দিকেই থাকবে।’’ পাল্টা সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, ‘‘ছাতনার মানুষ তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষের উপরেই আস্থা হারিয়েছেন। এ বারের নির্বাচনেই সেটাই প্রমাণিত হবে।’’ তথ্য সহায়তা: শুভেন্দু তন্তুবায়