নরেন্দের মোদী। —ফাইল চিত্র।
একসময় হাওড়াকে বলা হত ‘প্রাচ্যের শেফিল্ড’। একাধিক ভারী, আকাশ জুড়ে কারখানার চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া—শতাব্দী প্রাচীন হাওড়া শহরের এই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। ভোট-বঙ্গে নিজের দ্বাদশ সভায় হাওড়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখেও শোনা গেল সেই কথা। তবে তা ছিল রাজনৈতিক মোড়কে। এই জেলায় শিল্পের বেহাল দশা নিয়ে বিগত বাম আমল ও বর্তমান তৃণমূল সরকারকে দায়ী করলেন তিনি।
সাঁকরাইলের বিড়লা মাঠে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী এবং উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অরুণউদয় পাল চৌধুরীর সমর্থনে ওই সভায় মোদীর মুখে একদিকে ছিল হাওড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের ফিরিস্তি। অন্যদিকে ছিল বিরোধীদের হাওড়ার প্রতি ‘বঞ্চনা’র অভিযোগ। মোদীর বক্তব্য, “কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল বাংলার কী অবস্থা করেছে তার সাক্ষী হাওড়া। এক সময় ‘হাওড়াকে প্রাচ্যের শেফিল্ড’ বলা হত। একটা সময় ছিল, যখন হাওড়ায় মিল ছিল, বড় কারখানা ছিল। কী ছিল না! বাম, তৃণমূল সব বন্ধ করে দিয়েছে। তৃণমূলের তোলাবাজির ফল আজকের হাওড়ার অবস্থা।” এর পরেই তিনি হাওড়ার জন্য মোদী সরকারের ফিরিস্তি দেন। তাঁর কথায়, “ভারতের প্রথম জলের তলা দিয়ে মেট্রো পরিষেবা হাওড়ায় হয়েছে। সাঁতরাগাছি স্টেশন, শালিমার স্টেশনকে বিশ্বমানের বানিয়েছে মোদী সরকার।”
সভা শুরুর অনেকটা আগে থেকেই সভাস্থল ছিল কানায় কানায় ভর্তি। মোদী আসার পর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে রীতিমত ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। ব্যারিকেড থাকলেও ভিড়ের চাপে অচিরেই তা ভেঙে যায়। মোদীকে দেখতে ভিড় ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকে মঞ্চের কাছে। এক বৃদ্ধাকে সেই ভিড়ের মধ্যে দেখে মোদী বাধ্য হন ভাষণ থামিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের বলতে তাঁকে বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। যাঁরা উপহার দিতে চাইলেন, মোদী সকলের উপহার গ্রহণ করলেন। ফের বক্তৃতা শুরু করলেও জনতার ‘মোদী’ ‘মোদী’ ধ্বনিতে তাঁকে দু’দফায় ৩৪ সেকেন্ড বক্তৃতা বন্ধ রাখতে হয়।
হাওড়ার বস্ত্রশিল্পের বেহাল দশার কথাও তোলেন মোদী। এখানে কিসান মান্ডিতে ফসল বিক্রি করতে গেলে কৃষককে শাসকদলকে তোলা দিতে হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘বাম আমলে এখানকার কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। তৃণমূল আমলে কোনও কলকারখানা বন্ধ হয়নি।’’ কিসান মন্ডিতে তৃণমূলের তোলাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রীর দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভুল তথ্য দিয়েছেন ওঁর দলের কর্মীরা। এখানে কৃষক তাঁর ফসলের ভাল দাম পান। সরকার কৃষকদের জন্যে ‘সুফল বাংলা’ করেছে, যাতে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারেন।’’ হাওড়া জেলা সিপিএম সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এই সবই ভোটের জন্যে ভাঁওতাবাজি কথা। সমস্ত সরকারি কলকারখানা হয় তুলে দেওয়া, নয় বেসরকারিকরণের নীতি তো গ্রহণ করেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই সরকার। সাঁতরাগাছি প্রেস সরকারি ছাপাখানা এই সরকারের আমলে বন্ধ হয়েছে। ডবসন রোডের পূর্ব রেলের ছাপাখানাও বন্ধ হয়ে যেত, আমাদের আন্দোলনের জেরে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে। বেলুড়ের নিস্কোর জমি বেচে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’