—প্রতীকী চিত্র।
কোথাও বিরোধী প্রার্থীর প্রাপ্তি একটি ভোট, কোথাও দু’টি!
তথ্য বলছে, ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিতেছেন ৭ লক্ষ ১০ হাজার ভোটে। কিন্তু তাঁর এই বিপুল জয় নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
ভোট পর্বে এখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগও শোনা গিয়েছিল। এ বার বিভিন্ন বুথে ভোটে পড়ার পরিসংখ্যান সামনে আসতেই সেই অভিযোগ আরও জোরদার হল। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল সম্পূর্ণ কারচুপি ও ছাপ্পা ভোট করে জয় হাসিল করেছে।
এই কেন্দ্রের অন্তর্গত ফলতা বিধানসভার ১৭৮ নম্বর বুথে মোট ভোট পড়েছিল ৯২৮টি। সেখানে বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ (ববি) দাস পেয়েছেন একটি ভোট, বামপ্রার্থী প্রতীক উর রহমান, আইএসএফ ও নির্দল প্রার্থীও পেয়েছেন দু’টি করে ভোট। বাকি ৯২১টি ভোট অভিষেকের!
বিরোধীদের দাবি, ডায়মন্ড হারবার, ফলতা-সহ কয়েকটি বিধানসভায় ভোট পড়ার হার অবিশ্বাস্য। দেখা যাচ্ছে, ৯০০ থেকে ১০০০ ভোটারপিছু বুথে বিরোধীরা ১টি বা ২টি ভোট পেয়েছে। বাকি সব ভোট পড়েছে তৃণমূলে।
বিজেপির ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সুফল ঘাটুর অভিযোগ, ‘‘ওরা (তৃণমূল) কোথাও কোনও বিরোধী দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে দেয়নি। ইভিএমে আমাদের প্রার্থীর ছবি ও প্রতীকের উপরে টেপ মেরে দিয়েছিল। নির্বাচনে শাসকদল সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল।’’
ডায়মন্ড হারবার শহরের এক প্রবীণ সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘আশির দশকে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ভাগ্নে, প্রয়াত অমল দত্ত এখান থেকে সাংসদ হয়েছিলেন।
প্রায় এক লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এ ভাবে ছাপ্পা ভোট বা সন্ত্রাস করে নয়।’’ এ বারের বামপ্রার্থী প্রতীক উর রহমান বলেন, ‘‘মানুষ ভোট দিতে পারেননি। আমাদের এজেন্টদের বুথে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে চারশো অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলাম। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’
তৃণমূল শিবির বিরোধীদের অভিযোগকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, অভিষেক সারা বছর মানুষের পাশে ছিলেন। অতিমারি পর্বে তিনি নিজের উদ্যোগে কমিউনিটি কিচেন খুলে বহু অসহায় মানুষের বাড়িতে খাবার পাঠিয়েছেন। তাঁর উদ্যোগে প্রায় ৭৬ হাজার প্রবীণ মানুষকে ১ হাজার টাকা করে সাম্মানিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এমনকি, তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকায় জেলা জুড়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবে তিনি পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তাঁর একটা প্রভাব ইভিএমে পড়েছে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের আরও দাবি, এই লোকসভা কেন্দ্রে বিরোধীদের সে ভাবে মাঠে-ময়দানে দেখা যায় না। এমনকী, নির্বাচনের সময়ও বিরোধীরা প্রচারে পিছিয়ে ছিল।
ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূলের বিধায়ক পান্নালাল হালদারর দাবি, ‘‘কোথাও কোনও সন্ত্রাস, কারচুপি বা ছাপ্পা ভোট হয়নি। ভোটের দিন বিভিন্ন বুথে আমি ঘুরেছি। শান্তিপূর্ণ ভাবে মানুষ ভোট দিয়েছেন। বিরোধীরা প্রচার করেনি। তাদের লোকে চেনেই না। তারা যা ভোট পেয়েছে, তাতে খুশি থাকা উচিত।’’