নরেন্দ্র মোদি। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনী প্রচারে আজ, রবিবার হুগলিতে জোড়া সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একটি হুগলি কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে চুঁচুড়া ময়দানে। অন্যটি আরামবাগের প্রার্থী অরূপকান্তি দিগারের সমর্থনে পুরশুড়ার জঙ্গলপাড়ায়। হুগলিতে বিজেপির ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ের পাশাপাশি রয়েছে আগের বারের চেয়ে ভোটের ব্যবধান বাড়ানোর তাগিদও। আর আরামবাগে গতবার অল্পের জন্য হেরেছিল গেরুয়া শিবির। এ বার তাই এই কেন্দ্রে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দ্বিতীয় বার প্রচারে আসছেন মোদী।
হুগলিতে শিল্প নিয়ে বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে খোঁচা দেন বিরোধীরা। বন্ধ ডানলপ কারখানা নিয়ে পাল্টা বিজেপিকে দুষছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বুধবার বলাগড়ের জনসভায় মমতা অভিযোগ করেছিলেন, ডানলপ এবং জেশপ অধিগ্রহণের অনুমতি রাজ্যকে দেয়নি কেন্দ্র। শনিবার ডানলপের মাঠে সভাতেও তিনি একই অভিযোগ করেন। বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, ওই কারখানার জমি, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। মাফিয়া-চক্র চালানো হচ্ছে। কেন ডানলপ অধিগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি, এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিও চান মমতা। সঙ্গে বলেন, বন্ধ ডানলপের শ্রমিকদের দেওয়া রাজ্য সরকারের ভাতা চালু থাকবে।
বিজেপির অভিযোগ, শিল্প নিয়ে ব্যর্থতা ঢাকতেই মিথ্যা’বলে ডানলপকে ঢাল বানাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘যন্ত্রপাতি লুট করে ডানলপকে শ্মশান বানিয়েছে তৃণমূল। বলেছিলেন, ক্ষমতায় এসেই ডানলপ খুলবেন। তার পরে এক যুগ পার। এখন মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। ওঁদের মুখে শিল্পের কথা বেমানান।’’ ডানলপ-জেশপ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কথার জবাব প্রধানমন্ত্রী দেন কি না, অথবা হুগলিতে শিল্প নিয়ে মোদী কোনও বার্তা দেন কি না, তা-ও দেখার।
গত পয়লা মার্চ আরামবাগে রাজ্যের প্রথম নির্বাচনী সভাটি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ফের এই কেন্দ্রে এসে তিনি নতুন কী বলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের আগ্রহ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় বার আসায় দলের কর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবেন এবং মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া মিলবে বলে গেরুয়া শিবির আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সভায় আরামবাগের অনেকে আশা করেছিলেন, আরামবাগ-বিষ্ণুপুর রেলপথে গোঘাটের ভাবাদিঘি এবং পশ্চিম অমরপুরে থমকে থাকা কাজ চালুর ব্যাপারে দিশা মিলবে। সেই প্রত্যাশা মেটেনি। এ বার প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে কিছু বলেন কি না, সে প্রশ্নও রয়েছে।
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ এবং আরামবাগের বিধায়ক মধুসূদন বাগের বক্তব্য, ‘‘স্বচ্ছ প্রশাসনের লক্ষ্যে, বাংলাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে মানুষ মোদীজিকে চাইছেন। তাই তিনি দ্বিতীয় বার এখানে আসছেন।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফারুক আহমেদ লস্করের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দেশ জুড়েই বিজেপির সঙ্কট। আরামবাগে জেতার আশা নেই বুঝেই প্রধানমন্ত্রী ফের আসছেন।’’ তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রামেন্দু সিংহরায় বলেন, ‘‘সর্বত্রই প্রধানমন্ত্রীর পায়ের তলায় মাটি চলে গিয়েছে। আরামবাগে ঠাঁই খুঁজছেন, কিন্তু লাভ হবে না।’’
আজ হাওড়াতেও প্রধানমন্ত্রীর প্রচার রয়েছে। সাঁকরাইলের বিড়লা জলার মাঠে হাওড়ার দলীয় প্রার্থী রথীন চক্রবর্তীর সমর্থনে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সভার কারণে মুম্বই রোড এবং আন্দুল রোডে মালবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শনিবার বিজেপি নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রশাসনের আধিকারিকরা মাঠে পরিদর্শন করেন। বিজেপির সাঁকরাইল বিধানসভার সহ-আহ্বায়ক শ্রবণ ঘড়ুই জানান, মাঠে বালি, ছাই ফেলা হয়েছে। ইট বিছানো হচ্ছে।