কল্যাণীর সগুনার এই জায়গাতেই চলছে জল স্বপ্ন প্রকল্পে জলধার তৈরির কাজ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
কল্যাণী, হরিণঘাটা ও চাকদহ ব্লকের জন্য যে জল প্রকল্পের কাজ চলছে, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। রাজ্যের উদ্যোগেই ওই কাজ করা হচ্ছে বলে কল্যাণীর জনসভা থেকে দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ওই বক্তব্যের পরেই বিষয়টি সামনে রেখে, কল্যাণী ও হরিণঘাটা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে জোর দিচ্ছে তৃণমূল।
গত মঙ্গলবার কল্যাণী শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফুটবল খেলার মাঠে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের সমর্থনে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণী ও হরিণঘাটা নদিয়া জেলার অধীনে হলেও বিধানসভা দুইটি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনেও এই দুই এলাকায় নিজেদের দুর্গ ধরে রেখেছিল বিজেপি। তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল অনেকটাই নদিয়ার এই দুই বিধানসভার উপরে নির্ভর করে রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
মঙ্গলবার কল্যাণীর সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘জল স্বপ্ন প্রকল্পের মাধ্যমে চাকদহ, হরিণঘাটা ও কল্যাণী এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের কাজ চলছে। তার জন্য রাজ্য সরকার ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।’’ মমতা আরও দাবি করে বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের জন্য ৭০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার বরাদ্দ করেছে।’’ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পকেই রাজ্যে ‘জল স্বপ্ন’ নাম দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৬০ শতাংশ ও রাজ্য সরকারের ৪০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করার কথা। কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমোর দাবি অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার অর্থাৎ মমতার সরকার বরাদ্দ করেছে।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রাজ্যের শাসকদলকে পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখন কী বলেন, নিজেও জানেন না। কল্যাণী হরিণঘাটা এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। আসলে রাজ্য সরকার সেই সমস্যা মেটাতে পারেনি। তাই ভোটের আগে এখন জল প্রকল্পকে সামনে এনে ওদের প্রচার করতে হচ্ছে।’’
এর পাল্টা তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য সরকার কখনওই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় না। বাস্তবে যেটা হয়েছে, সেটাই নেত্রী বলেছেন। আসলে, বিজেপির সাংসদ শেষ পাঁচ বছরে কল্যাণী, হরিণঘাটার মানুষের জন্য কিছুই করেননি। তাই ওদের বলার কিছু নেই।’’
শুধু পানীয় জলের প্রকল্পই নয়, ওই দিনের সভায় তৃণমূল নেত্রী তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন— কল্যাণীতে এমস হাসপাতাল তৈরি করার জন্য কৃতিত্ব শুধু কেন্দ্র সরকারের নয়। তিনি দাবি করেন, ‘‘এমস-এর জন্য ১৮০ একর জমি রাজ্য সরকার বিনামূল্যে দিয়েছে। তা ছাড়া, আরও প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করেছে রাজ্য।’’ আগামী ২০ মে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন। তার আগে পথসভা, বাড়ি-বাড়ি জনসংযোগ, প্রচারের ক্ষেত্রে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গে এখন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকেই সামনে এনেছেন। তবে তৃণমূলের এই প্রচার শেষ পর্যন্ত কতটা কাজে আসবে, সে উত্তরের জন্য ৪ জুন, ভোটের ফলাফল প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, দাবি রাজনৈতিক মহলের।