Lok Sabha Election 2024

ভোটের ভবিষ্যৎ মতুয়াদের হাতেই

দিল্লির দৌড়ে কে কোথায়? কোন দল কী ভাবে ঘর গোছাচ্ছে? কোথায় কোন কাঁটা বেগ দিচ্ছে কাকে? লোকসভা ভোটের আগে বিধানসভা ভিত্তিক খোঁজখবর। সেই সঙ্গে কোন বিষয়গুলি মাথায় রেখে বুথমুখী হবেন ভোটার, সে দিকে নজর রাখল আনন্দবাজার। আজ, গাইঘাটা

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ০৮:২৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গাইঘাটা বিধানসভা এলাকায় ভোটে বড় ফ্যাক্টর মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক। এখানেই মতুয়াদের পীঠস্থান মতুয়া ঠাকুরবাড়ি। গত লোকসভা ভোটে এবং পরবর্তী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছিল গাইঘাটা কেন্দ্রে। কারণ, মতুয়াদের বড় অংশের সমর্থন ছিল বিজেপির দিকে। তা ছাড়া, বামেদের ভোট বিজেপির দিকে চলে যাওয়া, দলীয় নেতাদের একাংশের দুর্নীতি, স্বজনপোষণও গত লোকসভা ও বিধানসভায় তৃণমূলের পরাজয়ের কারণ বলে মনে করেন দলের অনেকেই।

Advertisement

এ বার সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন) কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। তাকে সামনে রেখে মতুয়াদের কাছে টানতে চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি। সিএএ-তে আবেদন করলে বে-নাগরিক হয়ে যেতে পারেন— এ কথা বলে পাল্টা প্রচারে জোর দিয়েছে তৃণমূল।

একদা তৃণমূলের খাসতালুক ছিল গাইঘাটা। ২০০১ সালের বিধানসভা ভোট থেকে এখানে তৃণমূলের জয়জয়কার শুরু হয়েছিল। তা একটানা চলেছিল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত। সেই লোকসভা ভোটে গাইঘাটায় বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে এগিয়ে যান। বিজেপির জয়ের সেই ধারা অব্যাহত ছিল ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও। বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুর প্রায় ১০ হাজার ভোটে জয়ী হন।

Advertisement

গাইঘাটা বিধানসভা এলাকায় নিজেদের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে চেষ্টায় ত্রুটি রাখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের নেতানেত্রী, জনপ্রতিনিধিদের একটা বড় অংশকেই সক্রিয় ভাবে দলের প্রচারে দেখা যাচ্ছে। রাজ্যে গত পুরসভা ভোটের পরে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয় এ বারের লোকসভা ভোটে বনগাঁর তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসকে। গাইঘাটা এলাকায় জনসংযোগের উপরে জোর দেন তিনি।

২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরে গাইঘাটা বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০০১ সাল থেকে টানা ২০১১ সাল পর্যন্ত জ্যোতিপ্রিয় এখানকার বিধায়ক ছিলেন। জ্যোতিপ্রিয়ের এখানে বরাবরই একটা প্রভাব আছে। এ বার প্রাক্তন মন্ত্রী জেলবন্দি। তাঁর অনুগামীরা মুষড়ে পড়েছেন। প্রচারেও সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূলের একাংশ সক্রিয় নয় বলেও অভিযোগ। বিশ্বজিৎ বলেন, “এখানকার বিধায়ক, সাংসদ বিজেপি হওয়া সত্বেও কোনও উন্নয়ন হয়নি। তাঁদের কোনও জনসংযোগ ছিল না। তবে এখান থেকে আমরা এ বার ১৫ হাজার ভোটের লিড পাচ্ছিই।”

বিজেপি নেতৃত্বের চিন্তার কারণ হতে পারে, গত পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটের পরিসংখ্যান। এই বিধানসভার মধ্যে থাকা গোবরডাঙা পুরসভা তৃণমূল দখল করেছে। পঞ্চায়েত ভোটে ১০টি পঞ্চায়েতের সব ক’টিতেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য এই ফলের পিছনে শাসক দলের লাগামহীন সন্ত্রাসকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেন, কেবল মাত্র সন্ত্রাসের দোহাই দিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতাকে ঢাকতে পারছে না বিজেপি। অভিযোগ, এখানে বিজেপির দলীয় সংগঠনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ের অভাব আছে। শান্তনু ঠাকুর দলীয় সংগঠন শক্তিশালী করতে যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখাননি। গোষ্ঠী কোন্দল প্রভাব ফেলতে পারে। দলের অন্দরের খবর, বিজেপির সকলে এখানে প্রচারে গা ঘামাচ্ছেন না সক্রিয় ভাবে। অনেককে আবার প্রচারে দেখা গেলেও সক্রিয়তার অভাব আছে। গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের সঙ্গে ভাই শান্তনুর দূরত্ব নিয়ে লোকসভা ভোট ঘোষণার আগে পর্যন্ত দলের মধ্যেই গুঞ্জন ছিল। দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসে সকলকে নিয়ে বৈঠক করতে হয়েছিল দূরত্ব মেটাতে।

যদিও গাইঘাটা কেন্দ্র থেকে ভাল ফল করার বিষয়ে আশাবাদী বিজেপির বনগাঁর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল। তাঁর কথায়, “আমাদের দলে কোনও কোন্দল নেই। দলের সকলে চোর তৃণমূলের অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে মোদীজির উন্নয়নের পক্ষে লড়াই করছেন। এই কেন্দ্র থেকে আমরা এ বার তিরিশ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকব।”

বনগাঁ লোকসভার এ বার বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা হয়েছে। প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের প্রদীপ বিশ্বাস। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরির হওয়ার আগে কংগ্রেস এখানে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। ১৯৯১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সাল থেকে কংগ্রেসের ভাঙন শুরু হয়েছিল। ২০১১ সালের পর কংগ্রেসের সংগঠন কার্যত পুরো ভেঙে যায়। এখনও বিক্ষিপ্ত কিছু কর্মী সমর্থক থাকলেও, সংগঠনিক শক্তি বলে কার্যত কিছু নেই।

অতীতে এখানে সিপিএম তথা বামেদের একচেটিয়া দাপট ছিল। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বামেরা এখানে বিধানসভা ভোটে জিতেছে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকে এখানে সিপিএমের মধ্যে বড়সড় ভাঙন দেখা দিয়েছিল। সিপিএম, সিপিআইয়ের বহু কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন। সেই রক্তক্ষরণ এখনও অব্যাহত। তবে নতুন করে সংগঠন মজবুত করছে সিপিএম। তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এসেছে বলে দাবি দলের নেতাদের। আমপান, করোনা পরিস্থিতিতে বাম কর্মীরা মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। ধারাবাহিক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রমেন আঢ্য বলেন, “গাইঘাটা বিধানসভা এলাকায় এ বার মানুষের সার্বিক সমর্থন আমাদের বাড়ছে। বামেদের যে ভোট বিজেপির দিকে চলে গিয়েছিল, তার বেশিরভাগটাই আমাদের দিকে আসবে। কংগ্রেসের যে ভোট তৃণমূলের দিকে চলে গিয়েছিল, তারও অনেকাংশ ফিরে আসবে। সব মিলিয়ে এ বার আমাদের ফল গাইঘাটা বিধানসভায় ভালই হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement