—প্রতীকী চিত্র।
ওই জলেই ডুববে তৃণমূল— প্রায় কটাক্ষ ছোড়েন বিরোধীরা। পাল্টা তাদের আমলে জলকষ্ট মেটাতে যত কাজ হয়েছে, আগে হয়নি, যুক্তি সাজায় শাসকদল। তবু ফি গ্রীষ্মে হাঁড়ি-কলসি নিয়ে পথে নামেন দু’জেলার মানুষজন। নেতারা যান, আশ্বাস দেন। ওটুকুই। আগামী দিন ভোট। জল-সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশা নিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন মানুষজন। শেষমেষ জল কোথায় গড়ায়, উত্তর দেবে ভোটবাক্স।
ফি বার ভোট এলেই পুরুলিয়ার ‘জল’ছবিতে লাগে রাজনীতির রং। সম্প্রতি দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে সভা করতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও বলতে হয়, “পুরুলিয়ার লোকের কী জলকষ্ট! এতে গরিব, দলিত, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় ও আদিবাসীদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। মোদীর লক্ষ্য রয়েছে, দেশের প্রতিটি ঘরে নলবাহিত জল পৌঁছনো।” পাল্টা প্রশ্ন ছোড়েন বিরোধীরা—গত বারও তো ভোটের প্রচারে এসে পুরুলিয়াবাসীকে একই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে!
পুরুলিয়া জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের খবর, জলজীবন মিশন বা জলস্বপ্ন প্রকল্পের কাজ পুরুলিয়ায় শুরু হয়েছিল ২০২০-র অগস্টে। করোনার জেরে দীর্ঘসময় কাজে গতি আনা যায়নি। ওই প্রকল্পে পুরুলিয়ার ৫,৪৭,৯২৪টি পরিবারে নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেখানে জল পৌঁছেছে ১,৬৯,৬২১টি পরিবারে।
কাজে দেরি নিয়েও টানাপড়েনে শেষ নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ‘জ়াইকা’ প্রকল্পে দেরি নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আবার অভিযোগ, তৃণমূল কাজে বাধা দেয় বলেই মানুষের ভোগান্তি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া পাল্টা বলছেন, “বাধা বা অসহযোগিতায় কাজ আটকে থাকার উদাহরণ নেই। বরং ওই প্রকল্পে বিভিন্ন সময়ে দেরিতে টাকা আসায় কাজ আটকেছে।”
অতশত বোঝে না শুকনো কলসি। আড়শার কুদাগাড়া গ্রামের মানুষেরা জানান, নলবাহিত জল পৌঁছেছে বটে। কিন্তু অর্ধেক গ্রাম সেই সুবিধা পায় না। জলই যে পড়ে না। একই কথা বলছেন বান্দোয়ানের রিথোগাড়ার ঠান্ডামণি হেমব্রম, সুমি সরেনেরা। ছবিটা আলাদা নয় শহরের বুকেও। ঝালদা পুরশহরের হাটতলার বাসিন্দা গীতারানি দত্তের কথায়, “জল জল করেই আমাদের দিন শুরু হয়। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এক বালতি জলের জন্য কী হাহাকার!”
বাঁকুড়া জেলার বেশির ভাগ এলাকাও নলবাহিত পানীয় জল প্রকল্পের আওতায় এসেছে, তবে জলকষ্ট মেটেনি। বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের অভিযোগ, “গত পাঁচ বছরে সমস্ত জল প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রের কাছ থেকে নিয়ে রাজ্যকে পাঠিয়েছি। তার পরেও ঘরে ঘরে জল এল না অপদার্থ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জন্য।” সম্প্রতি খাতড়ার এক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর যদিও দাবি ছিল, বাঁকুড়া জেলার সাত লক্ষ ৪১ হাজার বাড়িতে জল দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে। তার মধ্যে চার লক্ষ বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মানুষের ঘরে জল পৌঁছতে রাজ্য সরকারের ভূমিকাও স্মরণ করান তিনি।
জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বলছে, জেলায় ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পে ১৮টি ব্লকে ৯৬৩টি প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই ঘরে ঘরে জল দেওয়া শুরু করা যাবে। তবে কাগজে-কলমে জল প্রকল্পের আওতায় থাকলেও শালতোড়া, ছাতনা, বাঁকুড়া ১, বাঁকুড়া ২-এর মতো ব্লকে জলকষ্ট নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে। মানুষের অভিযোগ, বাড়িতে পাইপলাইনের কল দেওয়া হলেও কোথাও সাত দিনে এক বার, আবার কোথাও দু’-চার দিন ছাড়া জল পড়ে। যে-ই ক্ষমতায় আসুক, জলকষ্টের দিনগুলো মেটাতে তৎপর হন, চাইছেন তাঁরা। (চলবে)