পথসভায় বক্তৃতা করছেন সিপিএম প্রার্থী সোনামণি টুডু। রবিবার বিকেলে বিনপুর বাজারে। নিজস্ব চিত্র।
বাংলাটা ঠিক আসে না! প্রচারে গিয়ে তাই প্রার্থী বক্তৃতা দিচ্ছেন হিন্দিতে। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সোনামণি টুডুর হিন্দি ভাষণে অস্বস্তিতে বাম শিবির।
সিপিএম সূত্রের দাবি, পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের বাসিন্দা সোনামণি সাঁওতালি ও হিন্দিতে বেশ সড়গড়, পুরুলিয়ার টানে বাংলাতেও কথা বলেন। তবে বাংলায় টানা বক্তৃতা দিতে তাঁর সমস্যা হয়। সোনামণি বলছেন, ‘‘বাংলা লিখতে ও পড়তে পারি। কিন্তু মাইক্রোফোন ধরে বাংলায় টানা বক্তৃতা দিতে পারি না। অজান্তেই হিন্দিতে বলে ফেলি।’’ সোনামণি জুড়ছেন, ‘‘পুরুলিয়ার আঞ্চলিক বাংলাটা জানি। কিন্তু সেই ভাষায় বক্তৃতা দিলে অনেকেই বুঝতে পারবেন না। তাই হিন্দিতে বক্তৃতা দিচ্ছি। তবে জনসংযোগে লোকজনের সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলছি। আদিবাসী এলাকায় সাঁওতালিতে জনসংযোগ করছি।’’ তবে বামেদের একাংশ জানাচ্ছেন, সোনামণি পুরুলিয়ার যে আঞ্চলিক টানে বাংলাটা বলেন, সেই ভাষায় ঝাড়গ্রামের কুড়মি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে প্রচারে সহায়ক হবে। ইতিমধ্যেই লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটছেন সোনামণি। তপ্ত দুপুরেও প্রচারে খামতি রাখছেন না। তরুণ প্রজন্মের প্রার্থীকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত সিপিএমের যুব ও ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেত্রীরাও।
বছর ঊনত্রিশের সোনামণির আদিবাড়ি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার গোলমুড়ি-যুগসলাই ব্লকের কোডিয়া গ্রামে। গ্রামের স্কুলে হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা। পরে ঘাটশিলায় কলেজ স্তরেও হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন। জামশেদপুরের একটি কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে (সাইকোলজি) স্নাতকোত্তর। পরে অবশ্য বিবাহ সূত্রে বাংলার বধূ। বিবাহ সূত্রে সোনামণি এখন পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকের কুচিয়া পঞ্চায়েতের আসনপানি গ্রামের বাসিন্দা। স্বামী মণীশদেব টুডু কুমড়া পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুচিয়া পঞ্চায়েতের একটি আসনে সিপিএমের প্রতীকে জিতেছেন সোনামণি। পঞ্চায়েতের স্বল্প পরিসর থেকে তিনি এখন সংসদীয় রাজনীতির ময়দানে। সিপিএমের এক প্রবীণ নেতা সোনামণিকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, বাংলাটা তাঁকে ভালভাবে রপ্ত করতে হবে। বক্তৃতা হিন্দিতে দিলে অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় বাসিন্দাদের কাছে সেটা বোধগম্য নাও হতে পারে। বামেদের অবশ্য ব্যাখ্যা, সোনামণি গ্রামে গঞ্জে সাঁওতালি ও বাংলায় জনসংযোগ করছেন। কেবল মাইক্রোফোনে একটানা বক্তৃতা করার ক্ষেত্রে তাঁর সমস্যা হচ্ছে। তখন কিন্তু তিনি হিন্দিতে বক্তৃতা করছেন।
গত বিধানসভা ভোটের সময় ঝাড়গ্রামে সভা করতে আসা বিজেপির হিন্দিভাষী নেতাদের কটাক্ষ করেছিল তৃণমূল। বামেদের একাংশও কট্টর হিন্দুত্ববাদী হিন্দিভাষী নেতাদের নিয়ে সরব হয়েছিল। আর এখন দলের প্রার্থীকেই বাংলা বচনে সড়গড় করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে বামেদের। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলছেন, ‘‘রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে সোনামণির যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। যা বাকি প্রার্থীদের আছে বলে মনে হয় না। উনি বক্তৃতা করার সময় হিন্দি ও সাঁওতালিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। উনি চেষ্টা করছেন যাতে বাংলাতে বক্তৃতা করতে পারেন।’’