আমিত শাহর সভা। নদিয়ার মাজদিয়ায়। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
নদিয়ায় ভোট-প্রচারের শেষ লগ্নে মতুয়া গড়ে এসে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে সওয়াল করলেন বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে তা করতে গিয়েই তিনি দাবি করেন, অনেকে এখনও ‘শরণার্থী’ হয়ে রয়ে গিয়েছেন। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রানাঘাট কেন্দ্রে জয়ের জন্য যে মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের একটা বড় অংশের সমর্থন প্রয়োজন, তা সব পক্ষের কাছেই পরিষ্কার। গত বার কার্যত তাঁদের আশীর্বাদেই বিজেপি প্রার্থী দু’লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছিলেন। এ বার সেই কেন্দ্রে যে তৃণমূল কিছুটা হলেও জমি খুঁজে পেয়েছে তার বড় কারণ, জনপ্রিয় মতুয়া-মুখ মুকুটমণি অধিকারী বিজেপির বিধায়ক পদ ছেড়ে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে যাওয়ায়।
তা সত্ত্বেও এর আগে মতুয়া-গড় হাঁসখালির বগুলায় জনসভা করতে এসে সিএএ এবং মতুয়া নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছিল। বিরোধীদের দাবি ছিল, সিএএ ব্যুমেরাং হয়ে যেতে পারে বুঝে এ নিয়ে আর তেমন উচ্চবাচ্য করছে না বিজেপি। শুক্রবার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুল মাঠের জনসভায় অমিত শাহ কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মতুয়া এবং নাগরিকত্ব প্রসঙ্গই বার বার তাঁর বক্তব্যে ফিরিয়ে এনেছেন।
শাহ দাবি করেন,“নিজের ভোটব্যাঙ্কের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-র বিরোধিতা করছেন।” মমতা অনুপ্রবেশকারীদের তোল্লা দিচ্ছেন এবং শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পেতে বাধা দিচ্ছেন দাবি করে শাহ বলেন, “আমরা প্রত্যেক শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দেবই।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও দাবি, “সিএএ হবেই। যাঁরা আবেদন করবেন না, আমার মতে তাঁরা ভুল করবেন।”
প্রশ্ন উঠেছে, এ দিন যে মতুয়ারা সভাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা কি ‘শরণার্থী’? এত ‘শরণার্থী’ যদি থেকেই থাকেন, তাঁদের কেউ এখন সিএএ-তে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছেন না কেন?
কৃষ্ণনগর আদালতের আইনজীবী দেবাশিস রায়ের মতে, “আইনত মতুয়ারা শরণার্থী হতে পারেন না। কারণ তাঁরা আশ্রিত নন। তাঁরা এই দেশে বাস করছেন। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আছে। তাঁদের ভোটেই তো মন্ত্রীরা নির্বাচিত হয়েছেন।” আর, বিজেপি-পন্থী মতুয়া সংগঠনের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুশীল বসু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আগেই বলে দিয়েছেন যে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা এদেশে এসেছেন তাঁরা সকলেই নাগরিক। মতুয়া সম্প্রদায় এখানকার নাগরিক। শান্তনু ঠাকুরও এই মতইসমর্থন করেন।”