—প্রতীকী চিত্র।
হুগলি জেলার তিন কেন্দ্রের মধ্যে আরামবাগে ভোটদানের হার বেশি হলেও গত লোকসভার তুলনায় কমেছে ০.৮২ শতাংশ। এ বার এই কেন্দ্রে ভোটের হার ৮২.৬২% শতাংশ। ২০১৯ সালে ছিল ৮৩.৪৪%। তার পাঁচ বছর আগে ৮৫.১১%।
ভোটের হার ক্রমশ কমছে কেন?
এই প্রশ্নে অবশ্য কিছুটা গণতন্ত্রের ভালই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের একাংশ। তাঁদের মতে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সক্রিয়তায় গতবার ছাপ্পা ভোট নিয়ে অভিযোগ তেমন ওঠেনি। আর এ বারে তো কোনও অভিযোগই শোনা যায়নি। তা ছাড়া, পরিযায়ী শ্রমিকেরা আর আগের মতো ভোটের সময় ফিরছেন না। ফলে, তাঁদের ভোট পড়ছে না।
পরিযায়ীরা না ফেরায় এ বার যে ভোটের হার কম, পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। গয়না, জরি ইত্যাদি কাজে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি খানাকুলে। সেখানে এ বার সাত বিধানসভার মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। এই হার ৭৫.০৭%। এর পরে রয়েছে হরিপাল (৮০.৮১%), আরামবাগ (৮২.৫১%), পুরশুড়া (৮৩.২৯%), তারকেশ্বর (৮৪.৪৫%), চন্দ্রকোনা (৮৬.৩৯%) এবং গোঘাট (৮৬.৪২%)।
তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি হায়দার আলির ব্যাখ্যা, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা অনেকেই ফেরেননি বলেই খানাকুলে ভোট দানের হার কম। তা ছাড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সব জায়গায় এজেন্ট দিতে না পারায় এখানে অনেকে সন্ত্রস্ত হয়ে ভোট দিতে যাননি বলে আমার মনে হয়েছে।’’ সিপিএম ও বিজেপি অবশ্য পরিযায়ীদের গরহাজিরাই খানাকুলে ভোট কমের মূল কারণ বলে মনে করছে।
অন্য দিকে, গোঘাট বিধানসভায় তুলনামূলক ভাবে বেশি ভোট পড়া নিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভাস্কর রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এত দিন তো আরও বেশি ভোট পড়ত এখানে। শুধু ছাপ্পাতেই প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পড়ত।
এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনীর সক্রিয়তায় সেটা হয়নি।’’
তবে, সার্বিক ভাবে আরামবাগ কেন্দ্রে ভোট কমা নিয়ে তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি পলাশ রায় পরিযায়ী শ্রমিকদের অনুপস্থিতিই দেখছেন। সিপিএমের দুই বর্ষীয়ান নেতা পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং ফারুক আহমেদ লস্করের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এত দিন বুথে এজেন্ট বসতে না দিয়ে যথেচ্ছ ছাপ্পা ভোট হত। এ বার আধাসেনা তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেছে।’’ একই বক্তব্য বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষের।
সন্ত্রাস এবং ছাপ্পাভোটের অভিযোগ বাম আমলেও কম ছিল না। ২০০৪ সালের লোকসভায় সিপিএমের অনিল বসু (অধুনা প্রয়াত) প্রায় ৬ লক্ষ ভোটে জেতেন। এই বিপুল ব্যবধানে জয় নিয়ে আজও প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। সে বার আরামবাগ কেন্দ্রে ভোটদানের হার ছিল ৮০.৯%। আবার বর্তমান জমানায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেও ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন নির্বাচনে। কোনও দলই অবশ্য নিজেদের
বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার
করেনি। এ বারের লোকসভা ভোটে অবশ্য কোনও দলই ভোট লুটের অভিযোগ করেনি।