Lok Sabha Election 2024

জনসংযোগেই  সাফল্য: সন্ধ্যা

মানবাজার বিধানসভা এক সময় সিপিএমের দূর্গ ছিল। এখনও মানবাজার ও কেন্দা থানার জামবাদ পঞ্চায়েত একটানা বামেদের দখলে রয়েছে।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৯:৩০
Share:

মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু । —ফাইল চিত্র।

সিপিএমের গড়ে দুলছে ঘাসফুল। পঞ্চায়েত ভোট থেকে বিধানসভা ভোট— রাজ্যে পালাবদলের পরে একের পর ভোট হয়েছে। সার্বিক ভাবে দলের ফল যাই হোক, মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের দখল কিন্তু ধরে রেখেছে তৃণমূল। কী ভাবে এই ধারাবাহিকতা সম্ভব, তা নিয়ে চর্চা চলছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলায় ন’টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। অন্যান্য বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনে বিভিন্ন দলের ওঠাপড়া লেগে থাকলেও মানবাজারে কোনও পরিবর্তন নেই। মানবাজারের বিধায়ক তথা তৃণমূলের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, ‘‘এখানে আমাদের সাংগঠনিক শক্তি অনেক মজবুত। বছরভর আমরা মানুষকে রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুবিধা সম্পর্কে বোঝাই, তাঁদের পরিষেবা পেতে সাহায্য করি। তারই ফসল ভোটে পেয়েছি।’’

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের হিমানী হাঁসদাকে হারিয়ে তৃণমূলের সন্ধ্যারানি টুডু জয়ী হন। তারপর আর দলকে এখানে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মৃগাঙ্ক মাহাতো জয়ী হন। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি বিজেপির জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর কাছে ২ লক্ষ চার হাজার ভোটে পরাজিত হন। সে বারও অবশ্য মানবাজার বিধানসভায় তৃণমূলের ‘লিড’ বজায় ছিল।

Advertisement

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মানবাজার কেন্দ্রে বিজেপির গৌরি সিং সর্দারকে ১৫,৫১৬ ভোটে পরাজিত করেন সন্ধ্যারানি টুডু। তিনি এখন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী। এ বার লোকসভা ভোটে তাঁর কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে যায় ১৫,৩৭১ ভোটে। তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক কার্যত অটুট।

কী ভাবে তা সম্ভব?

দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডুর ব্যাখ্যা, ‘‘মানবাজার বিধানসভা এলাকায় আমাদের দলের সাংগঠনিক শক্তি ভাল। সাংগঠনিক কাঠামোর উপরে ভর করেই আমরা ‘লিড’-র ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি।’’ একই মত দলের জেলা সহ-সভাপতি মানবাজার থানার সিজাডি গ্রামের বাসিন্দা দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একেবারে গ্রামস্তরে মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুফলের কথা মানুষকে বোঝাতে পেরেছি। এলাকায় নিয়মিত দলীয় কর্মসূচি থাকে। ‘লিড’ বজায় তারই সুফল।’’

মানবাজার বিধানসভা এক সময় সিপিএমের দূর্গ ছিল। এখনও মানবাজার ও কেন্দা থানার জামবাদ পঞ্চায়েত একটানা বামেদের দখলে রয়েছে। তবে লোকসভা নির্বাচনে জামবাদ পঞ্চায়েতে এ বার তৃণমূল ৮৩৯ ভোটে এগিয়ে রয়েছে। সিপিএমের পুঞ্চা পশ্চিম এরিয়া কমিটির সম্পাদক অম্বরীশ মাহাতোর ব্যাখ্যা, ‘‘নিচুতলায় কংগ্রসের সঙ্গে জোট তত্ত্ব সফল হয়নি। আমাদের কিছু ভোট পদ্মফুলে গিয়েছে। এ কারণে তৃণমূল জামবাদ অঞ্চলে ‘লিড’ পেয়েছে। তবে পঞ্চায়েত ও বিধানভা নির্বাচনে ওই ভোট ফের আমাদের দিকেই আসবে।’’ তাঁর দাবি, মানবাজার পঞ্চায়েতে সিপিএম ১৭৭ ভোট বাড়তি পেয়েছে। চলতি নির্বাচনে বিধানসভা এলাকায় ২৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল ১৭টিতে বাড়তি ভোট পেয়েছে।

নির্বাচনের কয়েকদিন আগে মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি দিলীপ পাত্র কেবলমাত্র বিশরী অঞ্চলের কয়েক হাজার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করেছিলেন। এ বার বিশরী অঞ্চলে তৃণমূলের ৫১৭ ভোটের লিড রয়েছে।

দিলীপের আক্ষেপ, ‘‘মিছিলের জমায়েত অনুযায়ী সব ভোট আমরা পাইনি। পেলে মানবাজার বিধানসভার দলের ‘লিড’ আরও বাড়ত।’’

পুঞ্চার বাসিন্দা বিজেপির জেলা সম্পাদক জনপ্রিয় ঘোষ জানান, নবাজার বিধানসভায় আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো ১০,২০০ ভোট পেয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ওই ভোটের অন্তত ৭০ শতাংশ আমাদের। বেশির ভাগটাই আমাদের ভোট কাটা গিয়েছে। তৃণমূলের লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রচারের পাল্টা এবং গ্রামস্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকায় মানবাজারে আমাদের প্রত্যাশা মাফিক ফল হয়নি। তবু
শেষ অবধি মানুষ
আমাদের প্রার্থীকে ভরসা করেছেন, এটাই বড় কথা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement