বাগদায় রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শান্তনু ঠাকুর-সহ বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর প্রচার কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে সোমবার বিজেপির বনগাঁ লোকসভার প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর বাগদার একটি মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গ্রামবাসীদের একাংশের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বচসা, ধাক্কাধাক্কি, মারপিট, ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনায় ধুন্ধুমার হল। জখম হয়েছেন অনেকে। জখম বিজেপি নেত্রী সোমা পাল-সহ তিন মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার প্রতিবাদে বাগদা, হেলেঞ্চা, বনগাঁ, মছলন্দপুর ও গোবরডাঙায় বিজেপির পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
ঘটনাটি ঘটে বাগদা পুরনো বাজার এলাকায়। উভয় পক্ষই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছে। শান্তনু এর পিছনে তৃণমূলের হাত দেখছেন। তৃণণূল অভিযোগ মানেনি। পুলিশের দাবি, বিজেপি প্রার্থী এলাকায় যাবেন বলে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে শান্তনু বাগদা পুরনো বাজার এলাকায় রাধাবল্লভ মন্দিরে পুজো দিতে যান। তিনি মন্দিরে পৌঁছনোর আগে থেকেই এলাকার শতাধিক মহিলা জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের হাতে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিল না। সকাল ১০টা নাগাদ শান্তনু দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মন্দিরে পৌঁছন। অভিযোগ, শান্তনুকে দেখে মহিলারা স্লোগান তোলেন, ‘শান্তনু ঠাকুর দূর হটো, গো ব্যাক’। প্রশ্ন করেন, ‘‘আমপান, করোনার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?’’ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই সময় শান্তনুর সঙ্গে থাকা বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা পাল্টা ‘চোর চোর’ স্লোগান দিতে থাকেন। শুরু হয়ে যায় গোলমাল। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শান্তনুকে লক্ষ্য করে মহিলারা জল ছেটান বলে অভিযোগ।
পুলিশের সহযোগিতায় শান্তনু মন্দিরে ঢোকেন ও কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে আসেন। সেই সময় ফের দু’পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও মারপিট হয়। অভিযোগ, শান্তনুর সঙ্গে থাকা কর্মীরা গ্রামবাসীদের কয়েক জনকে ধাওয়া করেন। বিজেপির মহিলা কর্মীদের সঙ্গে গ্রামের মহিলাদের মারামারি হয়। পুলিশ উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে শান্তনু সপারিষদ বনগাঁ-বাগদা সড়কে বসে পড়েন। শুরু হয় ধর্না।
শান্তনু বলেন, ‘‘তৃণমূলের হার্মাদরা মদ্যপ অবস্থায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের উপর হামলা করেছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘পুলিশের যোগসাজশে এ দিন তৃণমূলের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে।’’ জখম গ্রামবাসী মৌসুমী মল্লিক বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর সাংসদের দেখা পাইনি। কেন পাইনি, সেটাই জানতে গিয়েছিলাম। প্রতি উত্তরে মার খেলাম।’’
বাগদা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সঞ্জীব সর্দার বলেন, ‘‘বনগাঁ থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে সাধারণ মহিলাদের উপর হামলা চালিয়েছেন শান্তনু।’’ তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘বিজেপি যে একটা উচ্ছৃঙ্খল দল, তা এই হামলার ঘটনায় প্রমাণ হল।’’