মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন সৌমেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
একই দিনে তমলুক ও কাঁথি লোকসভার তৃণমূল এবং কাঁথির বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়ন জমা ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের অফিসের কাছে হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে। যুযুধান কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পরস্পরকে বাধা দেওয়া, ধাক্কাধাকি, স্লোগানের লড়াই—কিছুই বাদ গেল না।
কাঁথির বিজেপি প্রার্থী সৌম্যেন্দু অধিকারী বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান বাবা বর্ষীয়ান রাজনীতিক তথা কাঁথির বিদায়ী সাংসদ শিশির অধিকারী এবং ভগবানপুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি-সহ একাধিক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে। শিশির জেলাশাসকের অফিসের ঢোকার সময় তাঁর সঙ্গে থাকা বিজেপি নেতাদের পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে পুলিশ ও বিজেপি নেতাদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। পরে পুলিশ আধিকারিকের হস্তক্ষেপে তাঁরা ভিতরে ঢোকেন। তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য এ দিন জেলাশাসক জয়শী দাশগুপ্তের কাছে মনোনয়ন জমা দেন। আর কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক ও বিজেপি প্রার্থী সৌম্যেন্দু অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) বৈভব চৌধুরীর কাছে মনোনয়ন জমা দেন।
আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, সৌমেন্দু মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় হাজির থাকবেন তাঁর দাদা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু এ দিন আরেক তৃণমূল প্রার্থী হিরণের রোড শো-তে যোগ দিতে শুভেন্দু ঘাটালে যান। শান্তিকুঞ্জ থেকে বেরিয়ে ভবতারিনী মন্দিরে পুজো দিয়ে বাবা শিশির অধিকারিকে নিয়ে মনোনয়ন জমা দেন সৌমেন্দু।
জেলাশাসকের অফিস চত্বরে আগে থেকেই বহু তৃণমূল কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। টোটো-তে দলীয় পতাকা লাগিয়ে তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। বিজেপি নেতা-কর্মীরা যেতেই উত্তেজনা ছড়ায়। বিজেপি কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেন। পাল্টা তৃণমূল কর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তোলেন। সৌমেন্দুর সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ শিশির অধিকারী, বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি, বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক, উত্তর কাঁথির প্রাক্তন বিধায়ক বনশ্রী মাইতি জেলাশাসক অফিসে ঢোকার পথে পুলিশ জানায়, এত জন ভিতরে যেতে পারবেন না। শিশির-সহ বিজেপি নেতাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বিজেপি নেতাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মীদের বচসা শুরু হয়। দ্রুত এক পুলিশ আধিকারিকএসে শিশির-সহ বিজেপি নেতাদের ভিতরে ঢুকতে দেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই জেলাশাসকের অফিসের কাছে জাতীয় সড়কের ধারে জমায়েত থাকা বিজেপি সমর্থকেরা সড়কের উল্টোদিকে জমা হওয়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ‘চোর’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। তৃণমূল কর্মীরাও পাল্টা ‘গদ্দার হটাও’ স্লোগান দেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী দু’পক্ষকে দূরে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
বিজেপির তমলুক জেলা সহ-সভাপতি আনন্দময় আধিকারীর অভিযোগ, ’’পুলিশের ব্যারিকেড থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল কর্মীরা টোটো নিয়ে জেলাশাসক অফিসের কাছে ঢুকেছিল। অথচ, আমাদের দলের প্রবীণ নেতা তথা বিদায়ী সাংসদ শিশির অধিকারী এবং বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতিকে ভিতরে ঢুকতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। শেষেপুলিশ আধিকারিকের হস্তক্ষেপে তাঁদের ভিতরে যেতে দেওয়া হয়।’’
এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সৌমেন্দু বলেন, ‘‘শিশির অধিকারী আমার প্রস্তাবক ছিলেন। তাঁকে এবং আমাদের দলের বেশ কয়েক জনকে পুলিশ ঢুকতে বাধা দেয়। নোংরা আচরণ করেন। পরে দেখতে পাই, ১৪৪ ধারা জারি থাকা এলাকার ভেতরে তোলামূলের (তৃণমূল) লোকজন টোটোয় পতাকা বেঁধে ঘুরছেন!"
তৃণমূলের তমলুক লোকসভা নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান সৌমেন মহাপাত্রের কথায়, ‘‘আমি জেলাশাসক অফিসে ছিলাম। এ রকম ঘটনা জানা নেই।’’ আর শিশিরের মন্তব্য, ‘‘ছেলের হয়ে নয়, দলের এক জন প্রার্থীর হয়ে মনোনয়নের প্রস্তাবক হয়েছি। এতে ক্ষতি কিছু নেই। এই জেলায় শুধু গণনা ও ফল ঘোষণা বাকি আছে। নন্দীগ্রাম যা বলে দিয়েছে তাই হবে। ’’ এর পাল্টা কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘মানুষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই আছেন। লক্ষীর ভান্ডার আর স্বাস্থ্যসাথীর পক্ষেই মানুষ রায় দেবেন।’’