তমলুকে রাম পুজোয় বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
প্রত্যাশামতোই রামনবমী পালন নিয়ে বুধবার হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা দেখা গেল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। ভোটের আবহে রাম নাম আশ্রয় করে নির্বাচন পারাবার পারে কসুর করলেন না কোনও পক্ষই। তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের মুখে যেমন শোনা গেল রাম পুজোর জয়গান, তেমনই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে তমলুক-নন্দকুমার এলাকায় ধুমধাম করে রামপুজো সারলেন বিজেপি নেতারা। পুজোর মণ্ডপে উপস্থিত ছিলেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
তমলুক শহরের শঙ্করআড়ায় রামনবমী উপলক্ষে পুজোর আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা। ওই মণ্ডপে এ দিন সন্ধ্যায় এসেছিলেন বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রামনবমীর পুজো ঘিরে নন্দকুমারে বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে বলে অভিযোগ। গতবছর পর্যন্ত নন্দকুমার হাইস্কুল ময়দানে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে রামনবমীর পুজোর আয়োজনে যুক্ত ছিলেন নন্দকুমারের বিজেপি নেতারা। এ বছর হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নামে একটি পুজো হচ্ছে নন্দকুমার বাজারের হাট সংলগ্ন এলাকায়।ওই পুজোয় যুক্ত রয়েছেন বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সাংস্কৃতিক সেলের আহ্বায়ক সন্দীপ চক্রবর্তী, দলের নন্দকুমার-৪ মণ্ডল সভাপতি মহাদেব মণ্ডল।
আবার হিন্দু নাগরিক মঞ্চের নামে রামপুজো হচ্ছে নন্দকুমার হাইস্কুল ময়দানে। এতে যুক্ত নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা বিজেপি জেলা কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ মান্না, কুমরআড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তমাল কুইতি প্রমুখ। দুই পুজো কমিটি পৃথকভাবে শোভযাত্রা বের করেছিল। হিন্দু জাগরণ মঞ্চের শোভাযাত্রায় ছিলেন বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। তাপসীর সঙ্গে দলের আদি নেতাদের একাংশের বিরোধ সম্প্রতি তীব্র আকার নিয়েছে। সবে অন্তর্কলহ সামলে রামনবমীর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জনসংযোগের আপ্রাণ চেষ্টা করেছে বিজেপি। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের খোঁচা, ‘‘এখনও সময় রয়েছে। আপনি (অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) বিজেপির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন না। শুভেন্দুও (অধিকারী) চান না, বড় কোনও নাম ভোটে জিতুক।”
রামনবমীকে সামনে রেখে সব ক’টি বিধানসভায় জনসংযোগ সারেন কাঁথির বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী। সকালে দিঘা, রামনগর, কাঁথিতে রাম নবমীর শোভাযাত্রায় তিনি অংশ নেন। বিকেলে পটাশপুরের আড়গোয়াল থেকে প্রতাপদিঘী এবং সিংদা থেকে পালাপাড়া ও রাতে খেজুরির বাঁশগোড়ায় শোভাযাত্রায় ছিলেন সৌমেন্দু।
পিছিয়ে থাকতে চায়নি তৃণমূলও। তমলুক শহরে রামপুজোর উদ্যোক্তা ছিলেন তৃণমূল নেতা তথা তমলুকের পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। তমলুকের রাজ ময়দানে তাম্রলিপ্ত জনস্বাস্থ্য কৃষি ও কুটির শিল্প মেলা কমিটির ব্যানারে রামপুজোর আয়োজন করেন দীপেন্দ্রনারায়ণ। দুপুরে পুজোমণ্ডপে হাজির হন তমলুক লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। সেখানে তিনি ঢাকও বাজান।
দেবাংশু বলেন, ‘‘ধর্মের মধ্যে দিয়ে আমরা যে রামকে পাই, তিনি হচ্ছেন পুরুষোত্তম। আমাদের প্রতিবাদ এই রামচন্দ্রকে রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে আনার বিরুদ্ধে। আমাদের কাছে সেই রামই শ্রেষ্ঠ, যে রামকে আমরা পুজোর মধ্য দিয়ে পাই।’’ তমলুকের পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের কথায়, ‘‘১৬ বছর ধরেই এখানে পুজো হচ্ছে। বাংলা তথা ভারতবর্ষের ঐতিহ্য মেনে ভগবান রামচন্দ্রের পুজো করি। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে পুজো চলে আসছে, আগামী দিনেও চলবে।’’