আশীর্বাদ রেজ্জাকের। নিজস্ব চিত্র
অসুস্থতার কারণে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনীতির ময়দান থেকে অবসর নিয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা, অর্ধশতকের বেশি সময়ের বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। গত দু’তিন বছর ধরে অসুস্থতার কারণে একেবারেই শয্যাশায়ী। অসুস্থ রেজ্জাক মোল্লাকে দেখতে ও তাঁর আশীর্বাদ নিতে ভাঙড়ের বাঁকড়ি গ্রামের বাড়িতে গেলেন জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অশোক কান্ডারী। তাঁর মাথায় হাত রেখে ‘আশীর্বাদ’ জানালেও রেজ্জাক ক্ষীণ কণ্ঠে প্রার্থীকে জানিয়ে দেন, জয়নগর, যাদবপুরে তৃণমূলই জিতবে। বিজেপির সংগঠন তেমন মজবুত নয়। সেই সঙ্গে জয়নগরের তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডল তাঁর সঙ্গে ভোটের আগে দেখা করতে না আসায় ‘অভিমান’ও প্রকাশ করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রেজ্জাক।
রেজ্জাক ওই গ্রামে নিজের পৈতৃক ভিটেয় থাকেন। বেশ কয়েক বছর ধরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, কিডনির অসুখে ভুগছেন। মাঝে এক বার বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।
বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের দুর্গাপুর অঞ্চলের মিলন বাজারে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রেজ্জাকের গ্রামের বাড়ি। নির্বাচনী প্রচার সেরে এ দিন রেজ্জাককে দেখতে তাঁর বাড়িতে যান অশোক।
রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পরে তাঁর খোঁজ-খবর কেউ রাখে না বলে কিছুটা অভিমানী রেজ্জাক। সে কথা বলেওছেন এ দিন। বিজেপি প্রার্থী নিজে চিকিৎসক। রেজ্জাকের রক্তচাপ, পালস পরীক্ষা করেন তিনি। স্টেথোস্কোপ দিয়ে হার্টও পরীক্ষা করেন।
বিজেপি প্রার্থীর এমন ব্যবহারে যারপরনাই খুশি রেজ্জাক। পাশাপাশি, মনে করিয়ে দেন, জয়নগর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডল তাঁর কাছে আসেননি ‘আশীর্বাদ’ নিতে। কিছুটা ক্ষুণ্ণ রেজ্জাক বলেন, ‘‘ওঁর আমার কাছে আসার প্রয়োজন নেই। কারণ, প্রতিমা মণ্ডলের মাথায় অনেক বড় মাথার হাত রয়েছে।’’
তবে জয়নগর ও যাদবপুর কেন্দ্রে বিজেপি ‘কিছু করতে পারবে না’ বলেও এ দিন অশোককে বলেন রেজ্জাক। দুই কেন্দ্রেই তৃণমূল জয়ী হবে বলে তাঁর আশার কথা জানান। আরও বলেন, ‘‘আমার আশীর্বাদ থাকলেই শুধু হবে না। এলাকায় বিজেপির সংগঠন মজবুত নয়। এই এলাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হওয়ায় মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবে বলেই আমার মনে হয়।’’
রেজ্জাক ১৯৭২ সালে যুক্তফ্রন্টের সময়ে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সিপিএমের বিধায়ক হন। ওই বছর জ্যোতি বসু হেরে যান। ১৯৭৭ সালে ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা থেকে ভোটে জিতে সিপিএমের মন্ত্রিসভায় সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ভূমি সংস্কার দফতরের মন্ত্রী হন। ২০১৬ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে ভাঙড় বিধানসভা থেকে জিতে কৃষি বিপণন ও উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী হন। এখনও তাঁর বহু অনুগামী দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন।
অশোক পরে বলেন, ‘‘ওঁর শরীরের অবস্থা ভাল নয়। অসুস্থ জেনে দেখতে এসেছিলাম। সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি ওঁর আশীর্বাদ নিলাম।’’
প্রতিমার প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি (রেজ্জাক) এক জন বর্ষীয়ান নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী। দীর্ঘ দিন বামপন্থী দলের সঙ্গে ছিলেন। আমাদের দলে আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মন্ত্রী করেছিলেন। তাঁর ছেলেও আমাদের দলের টিকিটে জেলা পরিষদ সদস্য হয়েছিলেন। যদি ওই এলাকায় আমার নির্বাচনী প্রচারের কর্মসূচি থাকে, তা হলে অবশ্যই আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যাব।’’