পুরুলিয়া শহরে একটি লজে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে পুরুলিয়ায় অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য ভোটে দলকে ভুগতে হলে প্রয়োজনে জেলায় দলের খোলনলচে আমূল বদলে দেওয়া হবে। পুরুলিয়ায় দলের লোকসভার নির্বাচনী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এমনই কঠিন বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরে একটি অতিথি আবাসে ওই বৈঠকে ছিলেন দলের ব্লক ও শহর সভাপতি, জেলা পরিষদ সদস্য ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা। দল সূত্রে খবর, মূল বৈঠক শুরুর আগে দলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিষেক। সেখানে পারস্পরিক দূরত্ব ও ‘ইগো’ সরিয়ে নেতৃত্বকে এক সঙ্গে চলার বার্তা দেন তিনি।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেন, “জেলার সাত বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান বাড়বে। লোকসভায় ভাল ফল হবে।”
গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে দল আশানুরূপ ফল করতে পারেনি, জেলা নেতৃত্বকে সে কথা মনে করিয়ে এ দিন বৈঠক শুরু করেন অভিষেক। পুরভোটে জয় এলেও পুরুলিয়া পুরএলাকায় লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে দল পিছিয়ে রয়েছে।
কেন এই পরিস্থিতি, সেই প্রশ্ন তুলে পুরপ্রধান, দলের শহর সভাপতি ও পুরপ্রতিনিধিদের স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়, নিজের ওয়ার্ডে ব্যবধান কমলে দায়িত্ব থেকে সরতে হবে সংশ্লিষ্ট জনকে।
অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা, সকাল থেকে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ না করে মানুষের কাছে যান। পুরুলিয়ার মতো ঝালদা শহর নেতৃত্বকেও সতর্ক করেন তিনি।
এর সঙ্গে, রঘুনাথপুর ২, ঝালদা ২, পুঞ্চা, হুড়া-সহ বিভিন্ন ব্লকে নেতৃত্বের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে মতানৈক্যের বিষয়টিও যে তাঁর নজরে রয়েছে, বৈঠকে তা টের পেয়েছেন দলের নেতারা।
সূত্রের খবর, এক নেতা আলোচনা-পর্বে কিছু বলতে গেলে অভিষেক তাঁকে মনে করিয়ে দেন, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কিছু জায়গায় বুথে এজেন্ট দিতে পারেননি। ব্লক স্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটায় গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে দলকে বিদ্ধ হতে হয়েছে মনে করিয়েতাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা, এর পুনরাবৃত্তি হলে প্রয়োজনে দলের বিভিন্ন পদ থেকে সবাইকে সরিয়ে ব্লকস্তর থেকে নতুন মুখ তুলে এনে আগামী বিধানসভায় ভোটে যাবে দল।
জেলার বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রঘুনাথপুর মহকুমার একটি ব্লকের দ্বন্দ্ব নিয়ে বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন দলনেতা। অন্য ব্লকগুলিকেও কড়া ভাবে সতর্ককরেছেন অভিষেক।”
এর সঙ্গে প্রার্থী কোনও এলাকা থেকে প্রচার সেরে যাওয়ার পরে সেখানে প্রচারে ফাঁক থাকার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে বৈঠকে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের একটা বড় অংশের নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ ইতিমধ্যে এসেছে দলীয় নেতৃত্বের কাছে। সূত্রের খবর, সেই ফাঁকফোঁকর ঢাকতে নির্দিষ্ট ভাবে বিধানসভা এলাকা ধরে দলের নেতাদের শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাঘমুণ্ডি বিধানসভায় বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো, পুরুলিয়া বিধানসভার শহর এলাকায় শান্তিরাম মাহাতো, মানবাজার বিধানসভা ও পুরুলিয়া বিধানসভার গ্রামীণ এলাকায় সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়পুর ও বলরামপুর বিধানসভায় শান্তিরাম মাহাতো, কাশীপুর ও পাড়া বিধানসভায় জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মানবাজারে সুজয়কে সাহায্য করবেন বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু।
এর পাশাপাশি, শান্তিরাম, সৌমেন ও সুজয়কে সপ্তাহে দু’দিন করে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন অভিষেক। এ দিন সন্ধ্যায় দলের নির্বাচনী দফতরে বৈঠকেও বসেন তাঁরা।
জেলা সভাপতি বলেন, “ব্লক ও শহর কমিটিতে সাংগঠনিক কিছু সমস্যা ছিল। এ দিনের বৈঠকে আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এক সঙ্গে প্রচারে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন। আজ থেকেই সবাই এক সঙ্গে কাজ করবেন। বিজেপিকে এ বার আমরাপিছনে ফেলব।”
অভিষেক সবাইকে এক সঙ্গে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে সুজয় ও শান্তিরামও জানান, পুরুলিয়া আসনটি এ বার তাঁরাই জিতবেন।