চলতি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সোমবার প্রথম হুগলিতে এলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, সিঙ্গুরের জেলায় শিল্প নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না। পরিবর্তে জেলায় কত জনকে লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হয়েছে, তার খতিয়ান তুলে ধরলেন।
হুগলির দলীয় প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে পান্ডুয়ার কলবাজার মাঠে এ দিন সভা করেন অভিষেক। রচনাকে দু’লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে জেতানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন কর্মীদের।
সিঙ্গুর এই লোকসভা কেন্দ্রেই। রাজ্যে ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরে টাটাকে ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন রচনার প্রধান প্রতিদ্বন্ধী বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ দিন শিল্পের কথা উচ্চারণ না করলেও বার বার লকেটের নাম নিয়েছেন অভিষেক। প্রশ্ন তুলেছেন বিদায়ী সাংসদের কাজ নিয়ে। তাঁকে বিঁধে লকেটের খোঁচা, ‘‘তৃণমূল সরকার শিল্পবিরোধী। তাই শিল্পের নাম নেবে কেন! এরা সামান্য টাকার বিনিময়ে ভোট কিনতে চায়।’’ পান্ডুয়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দান-খয়রাতির সরকারের কাছ থেকে শিল্পের কথা আশা করাও ঠিক নয়!’’ তৃণমূলের জেলার নেতাদের অবশ্য বক্তব্য, তাঁরা সব সময় শিল্পের পক্ষে।
এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ কলবাজার মাঠের এক পাশে অভিষেকের হেলিকপ্টার নামে। মঞ্চে অভিষেকের সঙ্গে রচনা ছাড়াও দলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন, মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, বেচারাম মান্না প্রমুখ ছিলেন। মাইক হাতে হাসি মুখে রচনা বলেন, ‘‘এত দিন ধরে প্রচার করছি। মানুষ বলছে, আপনি জিতলে আসবেন তো? আগের সাংসদকে পাইনি।’’ এরপরেই রচনা বলেন, ‘‘কথা দিয়ে যাচ্ছি, আমাকে আশীর্বাদ করুন, সর্বদা আপনাদের পাশে থাকব।’’
লকেটকে এলাকায় দেখা যায়নি, এমন অভিযোগ অভিষেকের মুখেও শোনা গিয়েছে। অভিষেক বলেন, ‘‘কোভিডে, ঘূর্ণিঝড়ে আপনাদের পাশে না থাকা লকেট চট্টোপাধ্যায় ভোট চাইতে এলে দু’টি প্রশ্ন করবেন। এক, কোচবিহারের বিজেপি নেত্রী বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেবেন। কেন? দুই, আপনারা মহিলাদের কথা বলেন। সন্দেশখালিতে দু’হাজার টাকার বিনিময়ে মহিলাদের ইজ্জত নিয়ে খেলা করা হল কেন?’’
লকেটের নাম করেই অভিষেক বলেন, ‘‘আপনি ১০০ দিনের কাজের টাকা কিংবা আবাসের টাকা চেয়ে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো একটি চিঠিও যদি দেখাতে পারেন, তা হলে আমি রচনার জন্য ভোট চাইতে আসব না।’’ হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের কোন বিধানসভায় লকেট কী করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। এর পরেই এই জেলার কত জনকে ১০০ দিনের কাজের টাকা, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রভৃতি তৃণমূল সরকার দিয়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
লকেটের হয়ে ভোট কিনতে বিজেপি নেতারা টাকা দিয়ে যাবেন বলেও অভিষেক অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সেই টাকা নিয়ে নেবেন। সেগুলি আপনাদের টাকা। কিন্তু ভোট জোড়া ফুলে দেবেন।’’ বিজেপি সরকার নিয়ে অভিষেকের উক্তি, ‘‘এ বারে রেখে দিলে আলসার, আর বাড়তে দিলে ক্যানসার!’’