প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মোদী এলেন বারাসতে, কিন্তু রইলেন বসিরহাটে। বারাসতের প্রার্থী স্বপন মজুমদার এবং বসিরহাটের প্রার্থী রেখা পাত্র— উভয়ের সমর্থনেই বারাসতে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সভা শেষের আগে পর্যন্ত তাঁর মুখে শুধু শুনতে পাওয়া গেল রেখা-বন্দনা। রেখাকে ‘মা দুর্গার পূজারি’ এবং ‘বাহাদুর বেটি’ বলেও মন্তব্য করতে শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীকে।
দুপুর তিনটে নাগাদ বারাসতের মঞ্চে উঠেছিলেন মোদী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার আগে ভাষণ দেন রেখা। সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করে বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে নতুন করে কিছু বলার নেই। আপনাদের এই বোনকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। এই বোন দু’হাজার টাকায় বিক্রি হয়নি। হবেও না। সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে। এই প্রতিজ্ঞা করছি। মোদীজিকে আবার প্রধানমন্ত্রীকে করতে হবে। তৃণমূলের যারা মিথ্যা অভিযোগ করে আমার ভাই এবং বোনদের হাজতবাস করাচ্ছে, তার জবাব দেব। সেই জন্য এই জনসভা। প্রস্তুতি নিন। মুখ্যমন্ত্রীর পোষা দুষ্টু ছেলেরা যাতে কারও বাড়িতে ঢুকতে না পারে, যেন কারও জমি দখল করতে না পারে। আমি সব সময় থাকব। রং বদলাব না। যা সন্দেশখালিতে হয়েছে, তা পুরো পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জেনে গিয়েছেন। তৃতীয়বারের জন্য মোদীজি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এই বসিরহাট ওঁকে আমরা উপহার দেব।’’ এর পরে রেখা আসনে বসতে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর কানে কিছু বলতে দেখা যায়।
এর পর বক্তৃতা করতে আসেন মোদী। ভাষণ দেওয়ার সময় বার বার বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থীর প্রশংসা করতে শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীর জানান, রাজনীতির মঞ্চে নতুন বলেও রেখা যে ভাবে বক্তৃতা করেছেন, তা তারিফ করার মতো। তৃণমূলের কোনও নেতা মঞ্চে উঠে এত ভাল বক্তৃতা করতে পারেন না বলেও মোদী মন্তব্য করেন।
রেখার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বসিরহাটের প্রার্থী রেখা কত সুন্দর ভাষণ দিয়েছেন! তৃণমূলের এ রকম কোনও নেতা নেই। এক জন গরিবের মেয়েকে সংসদে পাঠাতে বিজেপি কী ভাবে এত বড় পদক্ষেপ করল, তা দেশবাসী দেখল। আমার বিশ্বাস, তিনি নারীশক্তির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। আমি ওঁর সাহসকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। রেখাকে দেখে মনে হয় মা দুর্গার পূজারি রেখা। শাহজাহান শেখদের মতো নেতাদের সাহস যাতে না বাড়ে, তার জন্য রেখার জেতা প্রয়োজনীয়। তৃণমূল মাকে ভয় দেখিয়েছে, মাটিকে অপমান করেছে। তাই বাহাদুর বেটি রেখাকে জেতাতে হবে।’’
মোদী বলেন, ‘‘নারীদের শক্তিশালী করতে হবে। মহিলাদের নামে পাকা বাড়ি দিচ্ছে মোদী। মা-বোনেদের চালের চিন্তাও করতে হবে না। মোদী আপনাদের বিদ্যুৎ বিল শূন্য করে দেবে। তার জন্য প্রকল্প শুরু হয়েছে। যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের বাড়িতে সৌর প্যানেল বসানোর জন্য ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরকার কিনে নেবে।’’
রেখার প্রশংসা করে মোদী বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মহিলারা বিচার চাইলে সেই মহিলাদেরই টার্গেট করেছে তৃণমূল। বসিরহাটের প্রার্থী রেখা পাত্র কত সুন্দর ভাষণ দিয়েছেন! তৃণমূলের এ রকম কোনও নেতা নেই। এক জন গরিবের মেয়েকে সংসদে পাঠাতে বিজেপি কী ভাবে এত বড় পদক্ষেপ করল, তা দেশবাসী দেখল। আমার বিশ্বাস, তিনি নারীশক্তির হয়ে লড়াই করছেন। আমি ওঁর সাহসকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। রেখাকে দেখে মনে হয় মা দুর্গার পূজারি। শাহজাহান শেখদের মতো নেতার সাহস যাতে না বাড়ে, তার জন্য রেখার জেতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তৃণমূল মাকে ভয় দেখিয়েছে, মাটিকে অপমান করেছে। বাহাদুর বেটি রেখাকে জেতাতে হবে।’’
মোদী আরও বলেন, ‘‘মতুয়াদের কুর্নিশ জানাই। আপনাদের নাগরিকত্ব পেতে কেউ বাধা দিতে পারবে না। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সংবিধান এ অধিকার দিয়েছে। তৃণমূল কেন, কোনও শক্তিই মোদীর সংকল্পকে নড়াতে পারবে না।’’
তৃণমূলকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিধায়ক হিন্দুদের ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। এখানকার সন্তরা সেই ভুল শুধরে নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল সেই সন্তদেরই গালিগালাজ করেছে। রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম, ইস্কনের সন্ন্যাসীদের অপমান করা হয়েছে। ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে এবং ভোট জিহাদদের এগিয়ে নিয়ে যেতে এমনটা করা হয়েছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং জোট ‘ইন্ডিয়া’র আপনাদের উন্নয়নের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। এরা শুধু নিজেদের ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করতে চায়। সংবিধানের ক্ষতি হচ্ছে বলে চিৎকার করতে থাকা মানুষদের পশ্চিমবঙ্গে এসে দেখে যেতে বলুন। এখানকার ওবিসিদের ধোঁকা দিয়েছে তৃণমূল। আদালতে তা প্রকাশ্যে এসেছে। কলকাতা হাই কোর্ট বলেছে, ৭৭ মুসলিম সম্প্রদায়কে ওবিসি ঘোষণা করা অসাংবিধানিক। তৃণমূল লক্ষ ওবিসি যুবদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে জিহাদিদের মদত জোগানোর জন্য। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর মুখ্যমন্ত্রীর রূপ দেখে আমি স্তম্ভিত। বিচারকদের উপর প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমি তৃণমূলীদের প্রশ্ন করতে চাই, এ বার কি বিচারকদের পিছনেও গুন্ডা পাঠাবে! ন্যায়পালিকার গলা টিপছে তৃণমূল। তৃণমূল সত্যি সহ্য করতে পারছে না। যারা তৃণমূলের সত্য সামনে আনবে, তাদেরই টার্গেট করে ওরা।’’
মোদী আরও বলেন, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় স্তরে ১০ বছরে একটাও দুর্নীতি হতে দিইনি। এখন মোদী দেশকে এবং পশ্চিমবঙ্গকে গ্যারান্টি দিচ্ছি, যে দুর্নীতি করেছে, তাকে বাইরে বার করব। যাদের থেকে টাকা লুট হয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দেব। এক এক টাকার হিসাব হবে। আমি আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। লুট হওয়া ১৭ হাজার কোটি টাকা মানুষকে ফেরত দিয়ে দিয়েছি। বাংলাতেও আপনাদের লুট হওয়া টাকা আপনাদের ফেরত পেতে সাহায্য করব। এমন ব্যবস্থা নেব যে, এদের আগামী প্রজন্মও দুর্নীতি করার আগে ১০০ বার ভাববে।’’
মোদী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের এক দিকে কয়লাখনি রয়েছে। অন্য দিকে, উপকূল রয়েছে। স্বাধীনতার আগে বাংলা লক্ষ লক্ষ মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা করে দিত। কিন্তু এখন সব কারখানা বন্ধ। পশ্চিমবঙ্গের এই দুর্দশা কে করল? প্রথমে কংগ্রেস লুটেছিল। তার পর বামেরা লুটেছিল। এখন তৃণমূল দুই হাতে লুট করছে। তিন জনেই দোষী। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন দিল্লিতে কংগ্রেস এবং বামকে সমর্থন করবে। মানুষ সব খেলা বুঝে গিয়েছে।’’
বিগত কয়েক বছরে পূর্ব ভারতে কেন্দ্র যা খরচ করেছে, তা তার আগের কয়েক দশকে হয়নি। বারাসতে মন্তব্য মোদীর।
বসিরহাট এবং বারাসতের মানুষকে প্রণাম জানিয়ে বক্তৃতা শুরু করলেন মোদী। মোদী বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের দিকে কেন্দ্রের নজর ছিল। আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করেছি। আমি খোঁজ নিচ্ছিলাম। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং অন্য দল ভাল কাজ করেছে। কেন্দ্র প্রয়োজনীয় সাহায্য রাজ্য সরকারকে দিচ্ছে।’’
বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে নতুন করে কিছু বলার নেই। আপনাদের এই বোনকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। এই বোন দু’হাজার টাকায় বিক্রি হয়নি। হবেও না। সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে। এই প্রতিজ্ঞা করছি। মোদীজিকে আবার প্রধানমন্ত্রীকে করতে হবে। তৃণমূলের যারা মিথ্যা অভিযোগ করে আমার ভাই এবং বোনদের হাজতবাস করাচ্ছে, তার জবাব দেব। সেই জন্য এই জনসভা। প্রস্তুতি নিন। মুখ্যমন্ত্রীর পোষা দুষ্টু ছেলেরা যাতে কারও বাড়িতে ঢুকতে না পারে, যেন কারও জমি দখল করতে না পারে। আমি সব সময় থাকব। আমি রং বদলাব না। যা সন্দেশখালিতে হয়েছে, তা পুরো পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জেনে গিয়েছে। তৃতীয় বারের জন্য মোদীজি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এই বসিরহাট ওঁকে আমরা উপহার দেব।’’
মঞ্চে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে সংবর্ধনা জানালেন বিজেপি নেতৃত্ব।
দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে প্রথম বার কলকাতায় ভোটপ্রচারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর আগে রাজ্যে এসে একাধিক বার কলকাতায় রাত্রিবাস করলেও শহরে মোদী কোনও রকম দলীয় কর্মসূচি বা বৈঠকে যোগ দেননি। মঙ্গলবার তিনি কলকাতায় রোড-শো করবেন। তার আগে দু’টি সভাও রয়েছে তাঁর। সেগুলি হবে বারাসত এবং যাদবপুর লোকসভা আসনে।