মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ফরাক্কার সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘কিছু বললেই বলে তৃণমূল চোর। কোথায় চুরি? প্রমাণ দাও। সাড়ে তিনশো টিম পাঠিয়েছে ওরা বাংলায়। আজ পর্যন্ত চুরির প্রমাণ দিতে পারেনি।’’
মমতা বলেন, ‘‘বাংলায় বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সিপিএম, কংগ্রেস। আমি দেশের কথা বলব না। ওখানে আমরা জোটে আছি। কিন্তু সিপিএম, কংগ্রেসকে বাংলায় ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে সমর্থন করা।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলায় সভা করতে এলে জনসভায় টেলিপ্রম্পটারের সাহায্যে বক্তৃতা করেন, দাবি মমতার। বলেন, ‘‘উনি এলে সামনে টেলিপ্রম্পটার থাকে। যা বলেন, সব দেখে দেখে বলেন। কিছুই নিজে থেকে বলেন না।’’
২৬ হাজার চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘ওরা ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। এদের ছেড়ে দেবেন? ১০ লক্ষ চাকরি বাংলায় পড়ে আছে। দিতে গেলেই বিজেপি কোনও না কোনও এজেন্সি দিয়ে আটকে দিচ্ছে। চাকরি দিতে পারছে না, খেয়ে নিচ্ছে।’’
১১ লক্ষ লোকের বাড়ির টাকা দেবে তৃণমূল। ফরাক্কার সভা থেকে এমনটাই জানিয়েছেন মমতা। জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে বাড়ির প্রথম কিস্তির টাকা সকলে পাবেন। তার পর তিন থেকে চার মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হবে।
মমতা বলেন, ‘‘মালদহে আমরা এত কাজ করি, বিজেপি, কংগ্রেস ভোট ভাগাভাগি করে নেয়। কেন মালদহে আমরা ভোট পাই না? সংসদে মালদহের কথা বলবে কে? গায়ের জোরে ভোট করাতে চাইলে মা-বোনেরা রুখে দাঁড়াবেন। রাস্তা কেউ আটকালে পুলিশকে ফোন করবেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ডাকবেন।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রের কাছে বাংলা দুয়োরানি। কারণ এখানে সংখ্যালঘু বেশি, তফসিলি বেশি। বাংলাকে ওরা টাকা দেয়নি। আমাদের জনসংখ্যা গুজরাতের চেয়ে অনেক বেশি। ফরাক্কা ব্যারেজ নিয়ে যখন চুক্তি হল, ৭০০ কোটি টাকা দেবে বলে কেন্দ্র কথা দিয়েছিল। একটা পয়সা দেয়নি।’’
মালদহ, মুর্শিদাবাদে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। তাই সেখানে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য বিশেষ হাসপাতাল তৈরির কথা বলেন মমতা। মঞ্চে দাঁড়িয়েই তিনি আধিকারিকদের হাসপাতাল তৈরির পরামর্শ দেন।
মঙ্গলবার প্রথম দুই দফার ভোটের হার প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের পর কমিশন সূত্রে যে হিসাব পাওয়া গিয়েছিল, মঙ্গলবার দেখা যায় তার চেয়ে ৬ শতাংশ ভোট বেড়েছে। তা নিয়ে তোপ দাগেন মমতা। বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ৯টায় শুনলাম ৫.৭৫ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে দিয়েছে। কমিশন নোটিস জারি করেছে। বিজেপির ভোট যেখানে কম, সেখানে ভোট বাড়িয়ে দিয়েছে। ইভিএম কারা বানিয়েছে, সংখ্যাটা বাড়ল কী করে, কত ভোটার, কত মেশিন, আমরা জানতে চাই। কমিশনকে বলছি, মানুষের সন্দেহ দূর করুন। নিরপেক্ষ হোক কমিশন। আসল সত্যি জানাতে হবে।’’
শ্রমিক দিবসে শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভা শুরু করেন মমতা। এ প্রসঙ্গে নিজের লেখা একটি কবিতাও শোনান তিনি। বলেন, ‘‘দেশে সবচেয়ে বঞ্চিত, লাঞ্ছিত শ্রমিক। তাঁদের ছাড়া কোনও ইমারত তৈরি হত না। আমি তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’’
ফরাক্কার সভার শুরুতেই তীব্র গরমে ভোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মমতা। তার পর মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে নির্দেশ দেন তাঁর মঞ্চের সামনের ফাঁকা জায়গায় হ্যাঙারে মহিলাদের এনে বসাতে। তার পরেই সভা শুরু করবেন বলে জানান তিনি। জমায়েতের উদ্দেশে বলেন, ‘‘মেয়েরা, যাঁরা পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন, সামনে চলে আসুন।’’
বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে এ বার ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন তারকা ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাঁর সমর্থনে বুধবার প্রচার করবেন মমতা। তাঁর দ্বিতীয় সভাটি রয়েছে বহরমপুরের বড়ঞার ডাকবাংলো কিসান মান্ডির মাঠে।