রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
তৃণমূল কোনও দিন বাংলায় হারবে না। কোনও বিজেপি নেতার ঠাকুরদার ক্ষমতা নেই লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করার। হুগলির জনসভা থেকে মন্তব্য মমতার। তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে কেউ হাত লাগালে খুন্তি, হাঁড়ি, কড়ার খেলা হবে। জানে না বাংলা অন্য রকম। মা-বোনেরা জোট বাঁধলে ওদের বদলে দিতে বেশি সময় লাগবে না।’’ তিনি সিএএ এবং এনআরসি করতে দেবেন না বলেও জানালেন মমতা।
বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি দেশটাকে জেলে ভরে দিয়েছে। নিজেরা দেশের টাকা লুট করছে। চোর-ডাকাতদের নিজেদের ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়েছে। বিজেপির মতো চোর পার্টি একটাও নেই। সারা দেশ বুঝতে পারছে চিজ় ক্যায়া হ্যায়। সারা বিশ্ব বুঝতে পারছে কী চলছে দেশে। চার দফায় বিজেপি হারছে। বাকি তিন দফাতেও হারবে। জুমলাবাজি করেও জিততে পারবে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি বাংলাকে চায় না। বাংলাকে ভালবাসে না। বিজেপির জেতার অঙ্ক নেই। সন্দেশখালির চক্রান্ত দেখলেন তো। চক্রান্ত করে আবার রেগে যাচ্ছে। যা খুশি করে জিততে চাইছে বিজেপি।’’
‘মোদী গ্যারান্টি’ নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রতিটা কাজে ভাঁওতা দিচ্ছে। কোনও ফোরটোয়েন্টি গ্যারান্টি। রবীন্দ্রনাথকে চেনেন না। ছবি উল্টো করে ধরেছিলেন। আর বিজ্ঞাপনে বলছে যে উনি বাংলার নেতা। বাংলার দুর্ভাগ্য কোনও দিন হবে না। ও রকম নেতাকে কোনও দিন বাংলা গ্রহণ করবে না।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন এক বারও দেখেছে মানুষের গরমে কত কষ্ট হয়! এক বারও মানুষের কথা ভেবেছে? নিজেরা এসি ঘরে বসে থাকে। বাংলার সঙ্গে অন্যায় করার প্রতিবাদে এক জন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছিলেন।’’
আয়ুষ্মান কার্ড নিয়ে কেন্দ্রের সরকারকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘আয়ুষ্মান কার্ড করতে বলে। কেন করব? আমাকে ৫০ শতাংশ টাকা দিতে হবে। সব জায়গাতে চিকিৎসা পাবে না। সবাই এই কার্ডও পাবে না। তা হলে এই কার্ড কেন করব? মোদী বলছেন ৭০ বছরের পর আমি চিকিৎসা দেব, আপনার নিজের বয়স কত হয়েছে? নির্বাচনের আগে কেন এই কথা বলেননি? নির্বাচনের সময় বললে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙা হয়। মোদী তা ভাঙছেন। আর নির্বাচন কমিশন পুতুলের মতো বসে রয়েছে। মোদী ঘোরাচ্ছে আর ওরা ঘুরছে।’’
বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি কোনও কাজ করেনি। জিতলে ১৫ লক্ষ দেবে বলেছিল বিজেপি, কিন্তু দেয়নি। এই সব মোদীর ভাঁওতা। চাকরিও দেওয়া হয়নি ছেলেমেয়েদের। টোটালটাই ভাঁওতা। আমি ওঁর নাম দিয়েছি প্রচারবাবু। নিজের প্রচার ছাড়া কিছু চায় না। যে কোনও পোশাক পরে ছবি তুলে ফেলবেন। ছবি তুলতে আর প্রচার করতে ভালবাসেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘আপনারা জানেন একটি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলকে মানুষ ভোট দেয় দায়বদ্ধতা দেখে। আমরা সমস্ত প্রতিশ্রুতি পালন করি। লক্ষ্মীর ভান্ডার করে দিয়েছি। বিনা পয়সায় রেশন দিচ্ছি। কৃষকদের ১০ হাজার করে দিচ্ছি। না বলেও অনেক কাজ করেছি।’’
প্রচার শুরু করলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এত রোদের মধ্যে যে ভাবে এসেছেন তা দেখে আমি আপ্লুত। বিজেপিকে হারাতে গেলে একটা একটা সিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না। মা-বোনদের সম্মান থাকবে না। চাকরি ভুলে যান।’’
হুগলির পর মমতার গন্তব্য হাওড়া। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই বিজেপির রথীন চক্রবর্তীর। প্রসূনের সমর্থনে আজ সভা করবেন মমতা। পর পর তিন বার হাওড়া থেকে জিতেছেন প্রসূন।
বুধবার জোড়া কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রথমে তিনি হুগলি লোকসভা এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে জনসভা করবেন। এই সভাটি হবে চুঁচুড়া বিধানসভা এলাকায়। ২০১৯ সালে তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগকে হারিয়ে জয়ী হন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ বার হুগলি লোকসভায় লকেটের সঙ্গে লড়াই রচনার।