মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ফেসবুক।
মমতা বলেন, ‘‘আমি পুলিশ-প্রশাসনকে বলব নাকা চেকিং করতে। নির্বাচনের জায়গাগুলোতে গাড়িতে করে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা ঢোকাচ্ছে বিজেপি। আমি প্রশাসনকে বার বার বলব নাকা চেকিং করতে।’’
মমতা বলেন, ‘‘কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হয়। আর এখানে বিজেপি হারাতঙ্ক রোগে ভুগছে। শুনুন, সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বার যদি মোদী ক্ষমতায় আসে, তবে আর কোনও নির্বাচন হবে না। দেশটাকে বিক্রি করে দেবে। যত শীঘ্র বিজেপি সরকারকে সরানো যায়, ততই মঙ্গল।’’
মমতা বলেন, ‘‘এখন মোদীবাবু বলছেন, তাঁর কর্মীরা বলছেন, জগন্নাথদেবও নাকি মোদীবাবুর ভক্ত ছিলেন। আহা রে!! তাঁর জন্য কি একটা মন্দির করে দেওয়া উচিত নয়? আমি মন্দির করে দেব, ছবি রেখে দেব, পুরোহিত রেখে দেব।’’
মমতা বলেন, ‘‘বলছে বোমা ফাটাব। ২৫ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে নেব। তার পর হাসছে, নাচছে। মোদী, অমিত শাহ কয়েক দিন ধরে বলছেন, মুসলিমেরা নাকি তফসিলিদের চাকরি কেড়ে নেবে। এটা কখনও হতে পারে না। বাবাসাহেব অম্বেডকর সংবিধানে এই সংরক্ষণ করে গিয়েছেন। মোদী কেন, আমি কেন, কেউ চাইলেও কাড়তে পারবেন না।’’
রায়দিঘির সভা থেকেও ওবিসি কার্ড বাতিল নিয়ে সরব হন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এখন এক জন বলছেন, ১৫ লক্ষ ওবিসি কার্ড বাতিল। আমি বলছি বাতিল নয়। এত তাড়াতাড়ি বাতিল করা যায় না। এটা আমরা করেছি অনেক কষ্ট করে। তোমার রায়দান, বিজেপির রায়দান। তোমার রায়কে মানছি না। তোমার রায়কে নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’’
রায়দিঘির সভা থেকে নাম না করে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে তোপ মমতার। তিনি বলেন, ‘‘ওই তো অবসর নিয়ে তমলুকে যিনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি বলছেন আমি বিজেপি। যত চাকরি খেয়েছে, বিজেপি বলে খেয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি ভাঁওতাবাজ পার্টি। বিজেপি মিথ্যেবাদী পার্টি। বিজেপি পার্টি চাকরি কেড়ে নেওয়ার পার্টি। বিজেপি ধান্দাবাজ পার্টি। মানুষখেকো বাঘের মতো এরা চাকরি খেয়ে নেয়।’’
বিজেপিকে আক্রমণ করতে আবারও ‘ফোরটোয়েন্টি’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি মিথ্যা করা বলছে। গ্যারেন্টির নাম করে ফোরটোয়েন্টির কথা বলছে বিজেপি। শুধু মিথ্যা কথা। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি। আমরা দিয়েছি। যে পাকা বাড়ির ছবি দেখাচ্ছে তা-ও মিথ্যা। মিথ্যাবাদীর দল। ১১ লক্ষ পাকা বাড়ি আমরা বানিয়ে দেব।’’
মমতা বলেন, ‘‘২০২১ নির্বাচনের আগে আমরা যা বলেছি, তাই করেছি। এটাই একটা রাজনৈতিক দলের কাজ। মানুষকে যা বলব, সে কথা রাখব।’’
‘‘আমরা সুন্দরবন জেলার জন্য নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি। আমরা প্রায় ২০ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়েছি। প্রতি বছর এখানে সাইক্লোন হবেই। আমরা এখানে অনেক ফ্লাড সেল তৈরি করেছি। যাতে সাইক্লোন পরিস্থিতি তৈরি হলে পরিবারদের সরিয়ে আনে প্রশাসন।’’
১০০ দিনের বকেয়া নিয়ে রায়দিঘির সভা থেকেও কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু ১০০ দিনের কাজের জন্য কেন্দ্রের কাছে টাকা নেই।’’
রায়দিঘির সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘এ বারের নির্বাচনে দেখছি বিজেপির মিথ্যা কথা বলার সংখ্যাও আরও বেশি বেড়ে গিয়েছে। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে যে ছবিগুলো দেখাচ্ছে, তা আসল নয়। সব ক’টা মিথ্যা কথার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।’’
মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদারকে পাশে নিয়ে জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বাপি আপনাদের ঘরেরই ছেলে। যুব নেতা।’’ একই সঙ্গে শুক্রবার মঞ্চ থেকে নতুন স্লোগানও ঠিক করে দেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘এক-দুই বাদ দিন, তিনে জোড়াফুলে ভোট দিন।’’
মমতা বলেন, ‘‘দু’মাস ধরে আমি নির্বাচনী সভা করেই যাচ্ছি। সভা করতে করতে মাঝেমাঝে ভাবি, যদি এই সময়টা সভা না করে সরকারে থেকে জনগণের কাজ করতে পারতাম তবে আরও কিছু করতে পারতাম। কিন্তু আড়াই মাস ধরে নির্বাচন চলছে। পৃথিবীর কোথাও এমন হয় না। একমাত্র বিজেপিকে সন্তুষ্ট করতেই নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।’’
রায়দিঘি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠে জনসভা করছেন মমতা। মঞ্চে উঠলেন তিনি। তাঁর সভায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ভিড়।