Lok Sabha Election 2024

৪২ আসনে তারকার সংখ্যা পাঁচ, তৃণমূলের ‘টলিউড নির্ভরতা’ কমল না বটে, তবে মাপকাঠি বদলাচ্ছে

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে পাঁচ জন টলিউড তারকাকে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। তাঁদের মধ্যে এ বার তিন জনকে আর টিকিট দেয়নি রাজ্যের শাসকদল। তবে তার বদলে অন্য তিন তারকাকে টিকিট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ২১:৩৩
Share:

বাঁ দিক থেকে দেব, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষ। — ফাইল চিত্র।

রাজনীতির কঠিন ময়দানে তরুণ বয়স থেকে বিচরণ করলেও, সিনেমা বা সিরিয়ালের বিনোদনী জগতে তাঁর আগ্রহ বরাবরই রয়েছে। বারংবার তাঁর তৈরি প্রার্থিতালিকাতেও রুপোলি পর্দার ঝলকানি থাকে। মুনমুন সেন থেকে দেব, সায়নী— তালিকা নেহাত কম দীর্ঘ হবে না। আগামী লোকসভা ভোটের যে প্রার্থিতালিকা ব্রিগেডের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পড়তে বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে, সেখানেও টলিউড বাদ যায়নি। সংখ্যার দিক থেকে দেখলে, মমতার ‘টলি-কোটা’ এ বার একই রয়ে গেল।

Advertisement

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে পাঁচ জন টলিউড তারকাকে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। তাঁদের মধ্যে এ বার তিন জনকে আর টিকিট দেয়নি রাজ্যের শাসকদল। তবে তার বদলে অন্য তিন তারকাকে টিকিট দিয়েছে। অর্থাৎ, ২০২৪ সালেও রাজ্যে ৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ টলিউড তারকাই লড়াই করছেন। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে প্রার্থী বদল হলেও তৃণমূলের ‘টলিউড-নির্ভরতা’-য় খুব একটা বদল হয়নি।

মমতা ভোটজয়ের ক্ষেত্রে তারকাদের উপরেও ভরসা রেখেছেন। ২০০৯ সালে বীরভূম থেকে অভিনেত্রী শতাব্দী রায় এবং কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে অভিনেতা তাপস পালকে প্রার্থী করেছিলেন। দু’জনেই জয়ী হয়েছিলেন। তাপস অবশ্য তারও অনেক আগে থেকে বিধানসভার সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় আরও বেশি সংখ্যক তারকাকে দেখা গিয়েছিল। সে বার শতাব্দী এবং তাপসের পাশাপাশি বাঁকুড়ায় প্রার্থী করা হয়েছিল মুনমুন সেনকে, মেদিনীপুরে প্রার্থী করা হয়েছিল সন্ধ্যা রায়কে। ঘাটালে প্রার্থী করা হয়েছিল দেবকে। সে বারেও মমতার ভরসা রেখেছিল ‘টলিউড ব্রিগেড’। পাঁচ আসনেই জয়ী হয়েছিলেন তারকারা।

Advertisement

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। রাজ্যের পাঁচ লোকসভা আসনে প্রার্থী করা হয় টলিউউের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। শতাব্দী, দেবের পাশাপাশি যাদবপুরে টিকিট দেওয়া হয় মিমি চক্রবর্তীকে, বসিরহাটে টিকিট দেওয়া হয় নুসরত জাহানকে, বাঁকুড়ার বিদায়ী সাংসদ মুনমুনকে প্রার্থী করা হয় আসানসোলে। মুনমুন ছাড়া বাকি চার জনই ভোটে জেতেন।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে পাঁচটিতে টিকিট দেওয়া হয়েছে টলিউড তারকাদের। গত বারের মতো সেই সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও গত বারের তিন জনকে টিকিট দেওয়া হয়নি। বাদ পড়েছেন নুসরত, মিমি। হারের গত বারের হারের পর এ বার আর নতুন করে প্রার্থী করা হয়নি মুনমুনকেও। পরিবর্তে হুগলিতে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেদিনীপুর থেকে জুন মালিয়া, যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে সায়নী ঘোষকে প্রার্থী করা হয়েছে। তৃণমূলের একাংশ দাবি করেছে, যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বাদ সেধেছে ‘পারফরম্যান্স’। এ ক্ষেত্রে তারকাদের প্রতি ‘নির্ভরতা’ কমিয়ে ‘পারফরম্যান্স’-কেই অগ্রাধিকার দিতে চাইছে দল।

দিন কয়েক আগেই সাংসদ পদ ছাড়ার কথা বলেছিলেন মিমি। বিধানসভায় গিয়ে সে কথা নিজে জানিয়ে এসেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সংসদের দু’টি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দেন যাদবপুরের বিদায়ী সাংসদ। সাংসদ খাতের টাকা, কোথায় কত খরচ করেন, সেই হিসাবও সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেন মিমি। তিনি লেখেন, ‘‘আমার কাজের মাধ্যমে নিশ্চিতরূপে মানুষের হৃদয়ে থেকে যাব।’’ যদিও তৃণমূলের একাংশ বলছে, বিদায়ী সাংসদ যা-ই বলুন, নিজের কেন্দ্রে তাঁকে খুব একটা দেখা যায়নি। সংসদেও দেখা যায়নি। সেই নিয়ে ক্ষোভ জমেছিল দলের একাংশের মধ্যে। সে কারণেই যাদবপুর কেন্দ্রে মিমির আর টিকিট না-পাওয়াটা একরকম নিশ্চিত ছিল।

মিমির জায়গায় টিকিট পেয়েছেন আর এক অভিনেত্রী সায়নী। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। লড়াই করেও বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, লড়াই করার ক্ষমতার কারণেই আবার সায়নীর উপর ভরসা রেখেছে দল। আর সায়নী নিজে জানিয়েছেন, মানুষ তাঁকে এখন সভানেত্রী হিসাবেই বেশি চেনেন। অভিনেত্রী পরিচয় অতীত। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উপর যাদবপুরের মানুষ যে ভাবে ভরসা রেখেছেন, আমার উপরেও রাখবেন। আমি অভিনেত্রী কম, সভানেত্রী বেশি। তিনটি সিনেমা করেছি। তিনশোর বেশি সভা করেছি। তাই মনে হয় না তাঁদের কোনও দুশ্চিন্তা রয়েছে যে, আমাকে পাশে পাবেন না।’’

সায়নী যা-ই বলুন, ভোটের মঞ্চে তাঁর ‘তারকা’ ইমেজও কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল, এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। মনে করা হচ্ছে, এই ‘তারকা’ ইমেজ কাজে লাগিয়ে আরও এক বার মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রও নিজেদের ঝুলিতে ভরতে চাইছে তৃণমূল। ২০১৯ সালে ওই কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদ সন্ধ্যাকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। বদলে লড়েছিলেন মানস ভুঁইয়া। বিজেপির দিলীপ ঘোষের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। এ বার সেই আসনেই আবার জুনকে প্রার্থী করল তৃণমূল। তিনি স্থানীয় বিধায়কও। এলাকায় নিয়মিত থাকেন। চেনা ‘মাঠ’। জুন জানিয়েছেন, চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গত আড়াই বছর কাজ করেছি। মেদিনীপুরের মানুষ আমায় ভালবাসেন। এর থেকে বেশি কিছু আশা করি না। বিধানসভার সময়ও বলেছিলাম, জিতব। আবার বলছি, জিতব।’’

ঘাটালে দেবের ক্ষেত্রে একই সমীকরণ কাজ করেছে। দু’বার সাংসদ হয়েছেন। তৃতীয় বারও টিকিট দেওয়া হয়েছে। দেব যদিও বছরের বছরের শুরুতে ঘাটালের তিনটি প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন। আর ভোটে লড়তে চান না বলে ঘোষণাও করে দেন। পরে মমতা এবং অভিষেকের সঙ্গে তাঁর একই দিনে পর পর সাক্ষাৎই মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তার পরেই আরামবাগের সরকারি কর্মসূচিতে মমতার পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন, দিদির হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন। দিদির হাত ধরেই থেকে যাচ্ছেন। তখনই স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে, আবারও ঘাটালে প্রার্থী হচ্ছেন দেবই। রবিবার ব্রিগেডে যখন ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেন অভিষেক, তখন দেখা গেল তাতে নাম রয়েছে দেবেরও। এই নিয়ে তৃতীয় বার ঘাটালের প্রার্থী হলেন সেই দেব। একই ভাবে চতুর্থ বার বীরভূমে লড়তে চলেছেন শতাব্দী। অতীতে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন পুরোপুরি রাজনীতিক। নিজের ‘তারকা’ ভাবমূর্তি নিয়ে আর ভাবিত নন। সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বীরভূমের মানুষ কাজ করার জন্য সুযোগ দেন এবং আমিও কাজ করি। ভালবাসা নষ্ট করার মতো কাজ করিনি।’’

অন্য দিকে অভিনেত্রী রচনাকে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। দলের অন্দরে জল্পনা, প্রাক্তন অভিনেত্রী লকেটের সঙ্গে টেক্কা দিতেই রচনাকে প্রার্থী করা হয়েছে। এমনিতে সক্রিয় রাজনীতিতে রচনাকে এর আগে দেখা যায়নি। তৃণমূলের সভাতেও দেখা যায়নি। কবে তৃণমূলে যোগ দিলেন, সেই প্রশ্নের জবাবে রচনা বলেন, ‘‘তৃণমূলে আজ যোগ দিলাম। আজই প্রার্থী হয়েছি।’’

তবে তারকা প্রার্থী নিয়েও মমতার দলের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা কড়া হয়েছে। পারফরম্যান্স তারকাদের ক্ষেত্রেও মাপকাঠি রাখা হচ্ছে। সেই বিচারেই শতাব্দী বা দেব বা জুন- সায়নীদের অগ্রাধিকার। সে কারণেই বাদ পড়ে যান নুসরত বা মিমি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement