—প্রতীকী ছবি।
কংগ্রেসের জন্য দরজা খোলা রেখেই রাজ্যের ১৬টি আসনের জন্য প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিল বামফ্রন্ট। সেই তালিকায় ১৬ কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টিতেই নতুন প্রার্থী বেছে নিয়েছে বামেরা। মাত্র দু’জন এমন প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা আগে লোকসভা ভোটে লড়েছেন। বামেদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা হয়ে গেলেও আসন সমঝোতায় পৌঁছনো সম্ভব বলে সিপিএম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরই আশাবাদী। তবে আইএসএফের সঙ্গে বামেদের সমঝোতার সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ। কারণ, বাড়তি আসনের দাবি বহাল রেখে আলাদা করে নওসাদ সিদ্দিকীর দল ঘোষণা করেছে, তারা ৮টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে চায়।
প্রথম দফায় বামফ্রন্টের যে ১৬ আসনের তালিকা বৃহস্পতিবার ঘোষণা হয়েছে, তার মধ্যে ১৩টিতে লড়ছে সিপিএম। বাকি তিন আসন কতিন শরিক দল ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি এবং সিপিআইয়ের। প্রার্থী তালিকায় যাদবপুরে সৃজন ভট্টাচার্য, শ্রীরামপুরে দীপ্সিতা ধর, তমলুকে আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, হাওড়ায় আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়-সহ তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী করা হয়েছে সায়রা শাহ হালিমকে, যিনি বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে নজর কেড়েছিলেন। এই তালিকায় মহিলা তিন জন। অভিজ্ঞ নেতাদের মধ্যে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীকে প্রার্থী করা হয়েছে দমদমে। অভিজ্ঞ মুখ সামনে রেখে উত্তর ২৪ পরগনার ওই আসনটিতে বিশেষ লড়াই দিতে চাইছে সিপিএম। মেদিনীপুরে সিপিআই প্রার্থী বিপ্লব ভট্টও আগে লোকসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন। বাকি সকলেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে নতুন।
সূত্রের খবর, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে এক প্রস্ত কথা হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। বামফ্রন্টের পরবর্তী বৈঠক বসতে পারে আগামী শনি বা রবিবার। পরের দফার তালিকা ঘোষণা হতে পারে সোমবার। এই সময়ের মধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হবে বলে আশা সেলিমে। তালিকা প্রকাশের পরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও বলেছেন, ‘‘রাজ্যের ৪২টা আসনের মধ্যে আমরা মাত্র ১৬টি ঘোষণা করেছি। কংগ্রেস যদি আসন সমঝোতা চায়, আমরা ‘না’ বলব না। কংগ্রেসের প্রাদেশিক নেতারা দিল্লিতে এআইসিসি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছেন। তার পরে আলোচনা হতেই পারে।’’ বিমানের আরও সংযোজন, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের কথা হয়েছে তবে পূর্ণাঙ্গ নয়। কংগ্রেস যা আসন চাইবে, বাস্তবসম্মত হতে হবে। অনুমান-নির্ভর আলোচনা তো হতে পারে না!’’
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলের তরফে ১৪টি আসনের দাবির কথা জানানো হয়েছে সিপিএমকে। আসন সমঝোতার বিষয়ে প্রদেশ নেতৃত্বকেই বামেদের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের মতো এআইসিসি-র কমিটি সম্ভবত বাংলায় এই প্রক্রিয়ায় ঢুকতে চায় না। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন ছিলেন দিল্লিতে। সেখান থেকেই তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যের সব আসনে লড়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি আমাদের আছে, সে কথা তো কখনও বলিনি। যেখানে আমরা পারব না, সেখানে বামেরা বা যেখানে বামেরা পারবে না, সেখানে বিজেপি ও তৃণমূলকে হারানোর লক্ষ্যে আমরা প্রার্থী দিলাম— এই ভাবে সমঝোতা হতেই পারে। একটা তালিকা (বামেদের) ঘোষণা মানেই সেটা শেষ কথা হয়ে গেল, তা তো নয়। আমাদের প্রস্তুতিও চলছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক করে প্রার্থীর বিষয়টা চূড়ান্ত হবে।’’ রাজ্য স্তরে সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা করে কয়েক দিনের মধ্যেই রফা-সূত্রে পৌঁছনো যাবে বলে আশাবাদী অধীরও।
সিপিএম এবং প্রদেশ কংগ্রেস পরস্পরের জন্য জায়গা বার করার চেষ্টায় থাকলেও বামফ্রন্টে অবশ্য বেজায় বেগ দিচ্ছে বাম শরিকেরা! তারা নিজেদের ভাগের কোনও আসনই ছাড়তে নারাজ। সিপিএম এ বার বসিরহাট আসনটি সিপিআইয়ের কাছে চেয়েছে নিজেরা প্রার্থী দিতে চেয়ে, পরিবর্তে তাদের অন্যত্র আসন দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, তাতে সিপিআই রাজি নয়। কংগ্রেসের জন্য সিপিএমকেই আসন দিতে হবে, এই দাবি এ দিনের ফ্রন্ট বৈঠকে এক সুরে জানিয়েছেন তিন শরিক দলের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন চট্টোপাধ্যায় ও তপন হোড়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের সঙ্গে স্বপন ও নরেনের বিস্তর বিতণ্ডাও হয়েছে। এমন হলে ফ্রন্ট ভেঙে দেওয়া হোক, এমন হুঁশিয়ারিও তাঁরা দিয়েছেন! বৈঠকের পরে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন তামিলনাড়ু গিয়েছেন এডিএমকে-র সঙ্গে জোটের আলোচনা করতে, যারা সেখানে বিজেপির সঙ্গী! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘বাম ঐক্য রক্ষার পাশাপাশি বৃহত্র গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্য গড়ে তোলাও এখন লক্ষ্য। আমাদের দায়িত্ব অস্বীকার করার প্রশ্ন নেই। কিন্তু মুখে বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলব কিন্তু আসন ছাড়ব না, এই মনোভাব নিয়ে সব দায় আমাদের উপরে চাপিয়ে দিলে কী করা যাবে!’’