Lok Sabha Election 2024

বোঝাপড়ার বার্তা নিয়ে অধীরের পাশে সেলিমই

সেলিমকে নিয়ে এ বার সিপিএমের দু’জন রাজ্য সম্পাদক লোকসভা ভোটে প্রার্থী। রাজস্থানে দলের রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম প্রার্থী হয়েছেন শিকর লোকসভা কেন্দ্রে, কংগ্রেস ওই আসনে সিপিএমকে সমর্থন করছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৬:৪০
Share:

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী। মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

রাজ্যে আরও চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বামফ্রন্ট। এই পর্যায়ে ঘোষিত চার আসনের প্রার্থীই সিপিএমের। এ বারের তালিকায় সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম মহম্মদ সেলিম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন মুর্শিদাবাদ আসনে। পাশের কেন্দ্র বহরমপুরে প্রার্থী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে রাজ্যে কংগ্রেস ও বাম শিবিরের দুই শীর্ষ নেতা লাগোয়া দু’টি কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে থাকায় মুর্শিদাবাদ জুড়ে দুই শিবিরের মধ্যে বোঝাপড়া মজবুত হবে বলে দু’দলের নেতাদের বক্তব্য।

Advertisement

কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত ৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বামফ্রন্ট আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল ১৭ আসনে। তারা শনিবার আরও চার আসনে প্রার্থীর নাম জানিয়ে দেওয়ার পরে মোট ২৯ আসনে বাম ও কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেল। বাকি ১৩টির মধ্যে চারটি থাকতে পারে কংগ্রেসের জন্য। আইএসএফ শেষ পর্যন্ত সমঝোতার শরিক হয়ে তিনটি আসনে লড়তে রাজি হলে আরও গোটাছয়েক আসন থাকবে বামেদের জন্য। তবে সমঝোতা পাকা করতে গেলে নওসাদ সিদ্দিকীর দলকে মুর্শিদাবাদ, শ্রীরামপুর, মালদহ উত্তরের মতো আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করতে হবে বলেই বাম সূত্রের বক্তব্য। আইএসএফ চেয়ারম্যান নওসাদের কথা ভেবেই এখনও পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বাম শিবির। সেলিম ছাড়া এ দিন বোলপুর কেন্দ্রে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক শ্যামলী প্রধান, রানাঘাটে প্রাক্তন সাংসদ অলকেশ দাস এবং বর্ধমান-দুর্গাপুরে শিক্ষা জগতের প্রতিনিধি সুকৃতি ঘোষালের নাম ঘোষণা হয়েছে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন আসম সমঝোতার জন্য নানা রকমের আলোচনা চলছে। তাই দফায় দফায় প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে।

সেলিমকে নিয়ে এ বার সিপিএমের দু’জন রাজ্য সম্পাদক লোকসভা ভোটে প্রার্থী। রাজস্থানে দলের রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম প্রার্থী হয়েছেন শিকর লোকসভা কেন্দ্রে, কংগ্রেস ওই আসনে সিপিএমকে সমর্থন করছে। সেলিমের ক্ষেত্রেও তা-ই। বস্তুত, সেলিম যে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরই সেই ইঙ্গিত আগে দিয়েছিলেন। সচরাচর এ রাজ্যে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকেরা সংসদীয় রাজনীতিতে থাকেন না। বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। সেলিমের অবশ্য ভোটে লড়ার ইতিহাস অনেক দিনের। কলকাতা উত্তর-পূর্বের পরে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে ২০১৪ সালে সাংসদ হয়েছিলেন, ২০১৯ সালেও ওই কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন। এ বার ফের কেন্দ্র বদল হল।

Advertisement

প্রার্থী ঘোষণার পরে সেলিম বলেছেন, ‘‘এটা সাধারণ নয়, অসাধারণ লড়াই। রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মেরুকরণের রাজনীতি থেকে বেরোনোর জন্য বামফ্রন্ট মনে করেছে প্রার্থী হওয়া উচিত। কংগ্রেস নেতারা চেয়েছেন, মুর্শিদাবাদের কর্মী-সমর্থকেরা চেয়েছেন। মানুষ নির্বাচিত করলে সংসদে সাধারণ মানুষের কথাই আবার তুলে ধরব।’’ সেলিমের প্রার্থী হওয়াকে স্বাগত জানিয়েই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের বক্তব্য, ‘‘ওঁর জন্য সব রকম প্রস্তাবই ছিল। মুর্শিদাবাদ আসন সিপিএম চেয়েছিল আমাদের কাছে, আমরা ছেড়ে দিয়েছি। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই।’’

কিন্তু রাজ্য সম্পাদক নিজে প্রার্থী হলে ভোটের সময়ে দলের সাংগঠনিক কাজে কি প্রভাব পড়বে না? সেলিমের মতে, ‘‘কথা দিচ্ছি, সাংগঠনিক দায়িত্বে কোনও অবহেলা হবে না। বরং, ভারসাম্য রেখে চলা হবে।’’ তাঁর আরও ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের দলে যাঁরা রাজ্য সম্পাদক ছিলেন আগে, তাঁদের বেশির ভাগই সংসদীয় রাজনীতিতে ছিলেন না। তাঁরা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। বিমান বসু কি কোনও দিন ভোটে দাঁড়িয়েছেন, না কোনও দিন দাঁড়াবেন? কিন্তু আমাকে সংবাদমাধ্যম ও নানা মহল থেকে বলা হত, সংসদীয় রাজনীতির লোক! সেই জায়গা থেকে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়ার পরে সেটা পালন করতে করতেই আমি এক জন সৈনিক হিসেবে ভোটের ময়দানে থাকছি।’’ নাম ঘোষণার পরে এ দিন আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে বেরিয়েই সরাসরি মুর্শিদাবাদের ট্রেন ধরেছেন সিপিএম প্রার্থী। দোল পর্যন্ত সেখানেই নানা কর্মসূচিতে তাঁর থাকার কথা।

বামফ্রন্টের অন্দরে শরিক ফরওয়ার্ড ব্লককে নিয়ে সমস্যা অবশ্য এখনও মেটেনি। বামফ্রন্টের বৈঠকে এ দিনও ফ ব নেতারা পুরুলিয়া আসন নিয়ে অনড় ছিলেন। কংগ্রেস ওই আসনে প্রার্থী দেওয়ায় বিষয়টি বিবেচনার জন্য ফ ব-কে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছে সিপিএম। সূত্রের খবর, ফ ব নেতারা এ দিন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবুকে অনুরোধ করেছিলেন বারাসত আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পুরুলিয়ার জট না ছাড়ায় বারাসতে নাম ঘোষণা করেনি ফ্রন্ট। একই ভাবে ঘোষণা করা হয়নি বসিরহাটে সিপিআই প্রার্থীর নামও। এই আসনটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য শরিক সিপিআইকে অনুরোধ করেছিল সিপিএম। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল আসনটি অবশ্য ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে সিপিআই। সব ঠিক থাকলে ওই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী দেবে। আসন নিয়ে জেদাজেদি করে বাম ঐক্য ভাঙার দায় নিতে চাইছে না সিপিআই বা আরএসপি।

শাসক দল তৃণমূল অবশ্য সিপিএম এবং কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। দলের নেতা কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘সিপিএমকে বলছি, কমরেড মহম্মদ সেলিম, আপনাদের এইটুকু দম নেই ৪২টা প্রার্থী দেওয়ার! আপনারা নাকি ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, আপনারা নাকি ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। আপনি শুধু নিজে দাঁড়াবেন বলে সুজন চক্রবর্তীকে গ্যারাজ করছেন! ভূতেরও ভবিষ্যৎ আছে। কিন্তু এই রাজ্যে সিপিএম ও কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা বিজেপিকে হারাতে চান, তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেবেন। সিপিএম ও কংগ্রেসকে একটা ভোট দেওয়ার অর্থ বিজেপির কাজে সুবিধা করে দেওয়া।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) মনোজ চক্রবর্তীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘বেহায়ার নাহি লাজ, নাহি অপমান! সারদা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীই সব চেয়ে বড় সুবিধাভোগী বলে যিনি জেল খেটেছিলেন, তিনিই এখন দলের মুখপাত্র! ওঁর কথার কী মূল্য আছে? বিজেপি ও তৃণমূল যে এক মুদ্রার দুই পিঠ, সবাই জানে! নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন আগে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement