কংগ্রেসের প্রার্থিতালিকার দিকে তাকিয়ে আলিমুদ্দিন। —গ্রাফিক সনৎ সিং।
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস যে সিপিএম তথা বামেদের সঙ্গে জোটের পথে যাচ্ছে, তা গত কয়েক দিন ধরেই অধীর চৌধুরীর বিবিধ মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছিল। সিপিএম নেতারাও সে ব্যাপারে ঘরোয়া আলোচনায় প্রত্যয়ের কথাই জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে বাংলায় ফের এক বার বাম-কংগ্রেসের নির্বাচনী সমঝোতা পাকা। কিন্তু তার পরেও জট রয়ে গিয়েছে। যে জট মূলত বামফ্রন্টের মধ্যে। আর কিছুটা রয়েছে আইএসএফকে নিয়ে। যা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাটেনি। কাটার লক্ষণও দেখা যায়নি।
কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত দু’দফায় প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করলেও, তাতে বাংলার কোনও আসন ছিল না। মঙ্গলবার কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটি দিল্লিতে দফায় দফায় বৈঠক করে। তাতে প্রথমেই বসা হয়েছিল বাংলা, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশের নেতৃত্বকে নিয়ে। যদিও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কংগ্রেস প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেনি।
তবে জট যে রয়েছে, তা মানছেন সিপিএম নেতারাও। জট কী নিয়ে? অন্যতম জট পেকে রয়েছে পুরুলিয়া আসন নিয়ে। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দিতে চায়। সিপিএমও মনে করে পুরুলিয়া কংগ্রেসের পাওয়া উচিত। কারণ, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা নেপাল মাহাতো কুর্মি সমাজের মধ্যে ভাল কাজ করেছেন। তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। কিন্তু বামফ্রন্টের শরিকদল হিসাবে বরাবর পুরুলিয়ায় লড়ে ফরওয়ার্ড ব্লক। মঙ্গলবার রাতেও ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা তিনটি আসনেই লড়ব। কোচবিহার, বারাসত এবং পুরুলিয়া। বামফ্রন্টে আমরা তা জানিয়ে দিয়েছি। এর মধ্যে যদি-কিন্তু নেই।’’
দ্বিতীয় জটটি ডায়মন্ড হারবার নিয়ে। সেই আসনও কংগ্রেস লড়তে চায়। আবার সিপিএম চায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ুন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এ নিয়ে গত রবিবার নওশাদ জানিয়েছিলেন, সোমবার তিনি জানাবেন। কিন্তু সোমবার তিনি বলেন আরও কিছু দিন লাগবে। আবার সিপিএম সূত্রে খবর, দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব চায় নওশাদ একান্ত না লড়লে সেখানে কাস্তে-হাতুড়ি-তারার প্রার্থী হোক। যদিও আলিমুদ্দিনের নেতৃত্ব চান, নওশাদ না লড়লে সেখানে লড়ুক কংগ্রেস। সর্বভারতীয় স্তরে তার অন্য বার্তা যাবে।
মঙ্গলবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্পষ্ট নয়, কংগ্রেস কবে, কখন প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করবে। করলে তাতে কোন কোন আসনের নাম থাকবে। যদি পুরুলিয়ায় প্রার্থীর নাম কংগ্রেস ঘোষণা করে দেয় তা হলে বামফ্রন্টের মধ্যে যে আরও এক প্রস্ত অশান্তি অপেক্ষা করছে তা বলাই বাহুল্য। এর বাইরে সিপিএমের সঙ্গে কয়েকটি আসন নিয়ে সিপিআইয়েরও দড়ি টানাটানি চলছে। যেমন বসিরহাট এবং ঘাটাল। যদিও এর সঙ্গে কংগ্রেসের চাহিদার বা অগ্রাধিকারের আসনের কোনও সংঘাত নেই। ফ্রন্টের শরিকদলগুলির নেতাদের বক্তব্য, কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টগত ভাবে কোনও আলোচনা হয়নি। যা হয়েছে সবটাই সিপিএমের সঙ্গে। এখন কংগ্রেস কবে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে সেটাই দেখার।