পূর্বস্থলীতে এক কর্মীকে শাড়ি দিচ্ছেন স্মৃতি। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
এক কেন্দ্রের বৈঠকে নেতাদের ‘ধীর গতি’ নিয়ে প্রশ্ন, অন্য কেন্দ্রে কর্মিসভা থেকেই জনসভার মতো তৃণমূলকে কড়া আক্রমণ করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। মঙ্গলবার দুপুরে বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, বীরভূম ও বোলপুর লোকসভায় দলের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা নেতাদের নিয়ে বর্ধমানের সাংগঠনিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন স্মৃতি। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে আসায় বীরভূম লোকসভার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা-সহ অনেককেই তিনি সভায় ঢুকতে দেননি। পরে তা নিয়ে ক্ষোভও জানান তিনি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভা চলাকালীনই মন্ত্রী মন্তব্য করেন, দলের একজন সভাপতি, লোকসভার আহ্বায়কেরা যদি দেরিতে আসেন, তাহলে বোঝা যাচ্ছে এখানে দল কতটা ধীরে চলছে। বর্ধমান-দুর্গাপুর ও বর্ধমান পূর্ব লোকসভায় দলের ‘নিশ্চিত জয়’ থেকে পিছলে গেলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাংগঠনিক নেতৃত্বকেই দোষারোপ করবেন বলেও জানান তিনি। ভোটারদের বাড়ি থেকে বার করার দায়িত্বও নেতাদের বলে জানান।
সভায় প্রায় দু’শো জন ছিলেন। স্মৃতি তাঁদের জানান, প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের জনমুখী প্রকল্প, বিনামূল্যে পানীয় জল, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, কোভিডের ভ্যাকসিনের মতো বিষয়গুলির প্রচার করুন। অমেঠীতে জয়ের ময়দান তৈরি হয়েছিল কী ভাবে, সেই ব্যাখ্যাও দেন তিনি। স্মৃতি জানান, দলের কর্মীদের মধ্যেই কংগ্রেসের লোকেরা মিশে ছিলেন। ভোটের দিন ভোটার তালিকাও পাননি। সেখান থেকে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে, বুথে বুথে সংগঠন তৈরি করে অমেঠীর ‘একজন’ হয়ে উঠতে হয়েছেন। তবেই জয়ের স্বাদ মিলেছে। কয়েক জন দাঁড়িয়ে অনুযোগ করেন, এটা বাংলা। এখানে লড়াই দিতে গেলেই খুন হয়ে যেতে হয়। স্মৃতি তাঁদের জানান, অমেঠীতেও সন্ত্রাস ছিল। কিন্তু গান্ধী-পরিবারের মতো প্রভাবশালীকে হারাতে পারা গেলে, এখানেও জয় আসবে।
বীরভূম লোকসভার বিজেপি সভাপতি ধ্রুব সাহাকে বৈঠক চলাকালীন একতলায় নেতাদের নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। সাড়ে ১১টা নাগাদ বৈঠক শুরু হলেও তিনি হাজির হন ১২টা ১০ মিনিটে। তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি জানান, তালিত রেলগেটে দীর্ঘক্ষণ আটকে ছিলেন। এক ‘সঙ্গী’ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর দাবি, “দলে অনুশাসন রয়েছে। আমারই দোষ।”
বর্ধমান থেকে পূর্বস্থলীতে যান স্মৃতি। পারুলিয়া বাজারে মানিকলাল সাহা নামে এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে ভাত, মুগের ডাল, পটল ভাজা, বাটা মাছ, পাবদা মাছ, চাটনি, দই, মিষ্টি দিয়ে মধ্যহ্নভোজন সারেন। তারপরে স্টেশনের কাছে ব্যাঙকাটা মাঠে সাতটি বিধানসভার নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করেন তিনি। ছিলেন কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়। সভায় বাংলায় বক্তব্য শুরু করে হিন্দিতে চলে যান মন্ত্রী। এক কর্মী বাংলায় বলতে অনুরোধ জানালে স্মৃতি দাবি করেন, ‘‘মমতা কী করেছেন, সেটা দেশকে জানাতে হিন্দিতে বলা দরকার।’’ তারপরে বাংলাতেও বলতে শোনা যায় তাঁকে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘লড়াইয়ের জন্য ফুটছেন দলের এখানকার নেতা-কর্মীরা। গ্রামের অলিগলিতে লড়বেন ওঁরা।’’
সিএএ, সন্দেশখালি থেকে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিয়েও সরব হন স্মৃতি। তিনি বলেন ‘‘সন্দেশখালি দেখিয়ে দিয়েছে, মেয়েরা সুরক্ষিত নয়। মমতার গুন্ডাবাহিনী মেয়েদের উপরে অত্যাচার করেছে। মানুষ এর জবাব দেবেন। পুরো বাংলার মেয়েরাই সন্দেশখালির মতো রুখে দাঁড়াবেন।’’ রামমন্দির চাননি অথচ ভোট এসেছে বলে রামনবমীতে ছুটি দিচ্ছেন বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। তৃণমূলে দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলে দ্বন্দ্ব চলছে। দিদির পক্ষে কেউ, ভাইপোর দিকে কেউ। দিদিকে বলছি, আমাদের দেখতে হবে না। পিছন ফিরে দেখুন, ঘরেই বিপদ।’’
যদিও তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘বিজেপির কর্মীই নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা কী বলছেন, তাতে কিছু যায় আসে না। ভোট এলেই তৃণমূলের শক্তির প্রমাণ পাবে বিজেপি।’’