পুরুলিয়া ২য়-ব্লকের হুলহুলি(ছররা ভাঙরা এরোড্রাম)এলাকায় আদিবাসী কুড়মি সমাজের মহা সম্মলনের প্রস্তুতি কাজে ব্যস্ত অজিত মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের মুখে তিন দিনের জঙ্গলমহল সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক সভায় কুড়মিদের জনজাতির স্বীকৃতির দাবিকে কার্যত সমর্থন করেছেন। জানিয়েছেন, রাজ্যের যে অঞ্চলে কুড়মি জাতির বাস, সেখানে রাজ্য সরকার সমীক্ষা করছে। বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও কেন্দ্রের কাছ থেকে জনজাতির স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের আরও সক্রিয়তা দাবি করছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। এই পরিস্থিতিতে জাতিসত্তার আন্দোলনের পথ চূড়ান্ত করতে পুরুলিয়ার ছড়রায় শুক্রবার থেকে তিন দিনের বিশেষ অধিবেশনের ডাক দিয়েছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। যোগ দেওয়ার কথা পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যের একাধিক কুড়মি সংগঠনের। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অধিবেশনের নামকরণ হয়েছে ঐতিহাসিক কুড়মালি জিয়াউ মহাজুড়ুআহি। সংগঠনের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ অধিবেশনের উদ্যোক্তা হলেও জাতিসত্তার দাবিতে কুড়মিদের যে সমস্ত সংগঠন আন্দোলনে রয়েছে, তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পুরুলিয়ার ডুড়কু অধিবেশনের পরেই মূলত জনজাতির তকমা দেওয়া, কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সারনা ধর্মের পৃথক কোডের দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলনের ধার বাড়াতে শুরু করেন কুড়মিরা। অজিত জানান, তাঁদের দাবির সঙ্গে সহমত হয়ে ২০১৭ সালের মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) রিপোর্ট-সহ কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেন। রাজ্য বিধানসভা কুড়মালি ভাষাকে রাজ্যে স্বীকৃতিও দেয়। কিন্তু কেন্দ্র সেই প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়ে রাজ্যের কাছে ‘ফারদার কমেন্ট জাস্টিফিকেশন’ রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়।
অজিতের অভিযোগ, ‘‘বিভিন্ন স্তরে আমরা একাধিকবার আন্দোলন করলেও সেই রিপোর্ট রাজ্য কেন্দ্রকে পাঠায়নি। পরে রাজ্য দিল্লিকে চিঠি দিয়ে বলে, তারা যা জানানোর জানিয়েছে। এরপরে এই জাতি সম্পর্কে কোনও ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে কেন্দ্র নিজেই সমীক্ষা করতে পারে।’’
রাজ্যের কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মাহাতোও বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আগেই তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। কেন্দ্রের যদি আর কিছু জানার থাকে, তাহলে ভারতীয় নৃতত্ত্ব সর্বেক্ষণ থেকেই রিপোর্ট সংগ্রহ করে নিতে পারে।’’
আবার আদিবাসীরাও কুড়মিদের জনজাতি স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করছে। কুড়মি বা আদিবাসী কারও ভাবাবেগেই আঘাত দিতে চায় না রাজ্যের শাসকদল।
রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, লোকসভা ভোটের আগে কুড়মি ভোট-ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। সেই প্রেক্ষাপটে কুড়মিদের বিভিন্ন সংগঠনকে অধিবেশনের মাধ্যমে এক ছাতার তলায় এনে নিজেদের ওজন বাড়াতে চাইছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। তাই ওই অধিবেশনে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা নিয়ে কৌতূহলী অনেকে।
অজিত জানাচ্ছেন, জনজাতি কুড়মি সমাজ, কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজ, নেগাচারী আদিবাসী কুড়মি সমাজ, আমরা ৮১ গুষ্টির আগদহলি, কুড়মি সেনা-সহ ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় যে সব সংগঠন এই আন্দোলনে শামিল, তাদেরও অধিবেশনে আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠের মধ্যে দিয়ে অধিবেশন শুরু হবে। শুক্রবার ও শনিবার প্রতিনিধি সম্মেলনে (কুড়মালি ভাষায় ‘ঘারুয়া’) বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিও যোগ দেবেন। রবিবার প্রকাশ্য সমাবেশে (কুড়মালি ভাষায় ‘সদরিয়া’) প্রতিনিধি সম্মেলনে কী আলোচনা হল এবং জাতিসত্তার আন্দোলন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হবে।