শরবত খাইয়ে মোনালিসার অনশন ভাঙাচ্ছেন কুণাল। ছবি: সংগৃহীত।
কুণাল ঘোষ কি তৃণমূলের ‘ভিঞ্চিদা’? দু’মাস আগেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্যে সমালোচনা করছিলেন কুণাল। শনিবার সেই তিনি সুদীপেরই ‘দূত’ হয়ে অনশনে বসা তৃণমূল কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে পৌঁছলেন। তার পরে তাঁর অনশনও ভাঙালেন।
তাঁকে বাদ দিয়ে তাঁর ওয়ার্ডেই ভোটের কাজকর্ম পরিচালনা করছেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ। এই অভিযোগ তুলে তাঁবু খাটিয়ে অনশনে বসেছিলেন কলকাতার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মোনালিসা। শনিবার সুদীপের ‘দূত’ হিসেবে মোনালিসার মঞ্চে হাজির হন কুণাল। তাঁর মানও ভাঙান। যে কুণাল দু’মাস আগেও দাবি তুলছিলেন, সুদীপকে যেন দল লোকসভা ভোটে আর টিকিট না দেয়। সুদীপকে ‘বিজেপির লোক’ বলেও আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি।
মোনালিসার অভিযোগ কী? ওই তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি, তাঁকে বাদ দিয়েই তাঁর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কাজ পরিচালনা করছেন সুদীপ-ঘনিষ্ঠেরা। সমান্তরাল ভাবে একটি পার্টি অফিসও চলছে। মোনালিসার বক্তব্য, জনৈক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘বাইপাস’ করে সবটা করতে চাইছেন। বার বার জানিয়েও কাজ না হওয়ায় তিনি শিয়ালদহে তাঁর ওয়ার্ড এলাকাতেই মঞ্চ বেঁধে অনশন-সত্যাগ্রহ শুরু করেন।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও মোনালিসা এক বার ‘ফোঁস’ করেছিলেন। সেই সময় সুদীপ নিজে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি মিটিয়ে নেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সুদীপের বাহিনীর কাজকর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে মোনালিসা ফের বসে পড়েন অনশনে। কুণাল এর মধ্যে ঢুকলেন কী করে? এমনিতে কুণাল উত্তর কলকাতার লোক। তাঁর উত্তর কলকাতার রাজনীতি নিয়ে আগ্রহও রয়েছে। সূত্রের খবর, দু’দিন আগে উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরে মোনালিসার বিষয়টি নিয়ে তিনি সুদীপের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর বার্তা পাঠানো হলেও মোনালিসা ঠায় বসেছিলেন। কিন্তু এই গরমে অনশন চালাতে গিয়ে ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই কাউন্সিলর। আবার কুণাল সুদীপের কাছে বার্তা পাঠান। এর পরে কার্যত সুদীপের ‘দূত’ হয়েই শনিবার মোনালিসার সত্যাগ্রহ মঞ্চে হাজির হন কুণাল।
ওই মঞ্চ থেকেই সুদীপের সঙ্গে মোনালিসার কথাও বলিয়ে দেন কুণাল। মোনালিসার দাবি ছিল, তাঁর ওয়ার্ডে পৃথক পার্টি অফিস বন্ধ করতে হবে। তাঁকে ভোটের কাজে ‘সসম্মানে’ রাখতে হবে। সুদীপ জানিয়েছেন, ওয়ার্ডে একটি ‘নির্বাচনী স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠন করা হবে। তার চেয়ারম্যান হবেন মোনালিসা। তবে পৃথক অফিসটি এখনই বন্ধ করা হবে না। ভোটের পর তা তুলে দেওয়া হবে। সব শুনে মোনালিসা জানিয়েছেন, তিনি অনশন প্রত্যাহার করছেন। কুণালই তাঁকে শরবত খাইয়ে অনশন ভাঙান। কিন্তু পাশাপাশিই মোনালিসা এ-ও জানিয়েছেন, তিনি অনশন তুললেও সত্যাগ্রহের মঞ্চটি এখনই তুলে ফেলছেন না। কেন? মোনালিসার বক্তব্য, যা কথা হয়েছে, তা যদি বাস্তবে না ঘটে, তা হলে ফের তিনি সত্যাগ্রহে বসবেন। সেই জন্যই তাঁবু থাকছে।
কুণাল বলেন, ‘‘আগামী মঙ্গলবার সুদীপদা মোনালিসার ওয়ার্ডেই প্রচারে যাবেন। সেখানে কাউন্সিলর হিসেবে মোনালিসাও থাকবেন। তবে মোনালিসাকে কেউ আবার অসম্মান করলে ওঁর সঙ্গে আমরাও অনশনে বসব।’’