মায়ের কোলে কালীপদের সভায় এসে অসুস্থ কিশোরী (বাঁ দিকে), ঝাড়গ্রামের তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সোরেন (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
প্রচারের কাজে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। রবিবারও তেমন প্রচার সারছিলেন ঝাড়গ্রাম লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সোরেন। বক্তৃতা করতে করতেই দেখেন, রোদে আচমকাই মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে গেল একটি কিশোরী। সঙ্গে সঙ্গে বক্তৃতা থামিয়ে কিশোরীকে তুলে দৌড় গাড়ির দিকে। নিজের গাড়িতে কিশোরীকে পাঠালেন হাসপাতালে। প্রচারে যে বিঘ্ন ঘটল! মৃদু হেসে তাঁর জবাব, ‘‘প্রচারের চেয়েও মানবিকতার দাম বেশি।’’
আগে জঙ্গলে আগুন নেভানোর কাজ করতে দেখা গিয়েছিল পদ্মশ্রী কালীপদকে। পাঠকমহলে ‘খেরওয়াল সোরেন’ নামে সমধিক জনপ্রিয় সেই কালীপদই এ বার পরিচয় দিলেন মানবিকতার। রবিবার বিনপুর বিধানসভার জামবনি ব্লকের গইডোতে প্রচার করছিলেন খেরওয়াল। বক্তৃতা করতে করতেই দেখতে পান, বৈশাখের প্রখর রোদে একটি বাচ্চা মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তৃণমূল প্রার্থী মাঝপথে বক্তব্য থামিয়ে দেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গাড়িরও ব্যবস্থা করে দেন। সেই গাড়িতে কিশোরীকে শুইয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন সে। তবে, কালীপদ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, আপাতত ঠিকই আছে জ্ঞান হারানো কিশোরী।
কালীপদ বলেন, ‘‘গইডো গ্রামে প্রচুর ভিড় হয়েছিল। হঠাৎ দেখলাম, একটি বাচ্চা মেয়ে পড়ে গেল। রোদে দাঁড়িয়েছিল সে। বক্তব্য থামিয়ে বাচ্চাটিকে বাঁচাতে আমাদের প্রচারের গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। এখনই খবর পেলাম, বাচ্চাটি ভাল আছে। স্যালাইন চলছে। এটা শুনেই খুব ভাল লাগছে। বাচ্চা মেয়েটি বুঝতে পারেনি হয়তো এই সময় রোদে দাঁড়িয়ে থাকা বিপজ্জনক। বাচ্চা তো, কী আর করা যাবে!’’ নিজমুখে বলতে না চাইলেও তৃণমূল প্রার্থীর এই মনোভাবে খুশি এলাকার মানুষও।
সাহিত্যিক কালীপদ পদ্মশ্রী ছাড়াও সাহিত্য অকাদেমি, বঙ্গবিভূষণ, সারদাপ্রসাদ কিস্কু স্মৃতি পুরস্কার, সাধু রামচাঁদ মুর্মু স্মৃতি পুরস্কার, পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু-সহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন। শুধু লেখাই নয়, যাত্রাপালাতেও চুটিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। এর আগেও নিজে গান লিখে সুর দিয়েছেন। ৪০টি গানের সব মিলিয়ে চারটি অডিয়ো সিডি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। নিজস্ব যাত্রাদলও আছে। গল্প, কবিতা, রম্য রচনার বাইরে ২০০৫ সালে ‘সেরেঞ আখড়ারে খেরওয়াল’ নামে সাঁওতালি গানের বইও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।