Electoral Bonds Scheme

কার টাকা কোন দলে, জানা যাবে কি না সংশয়

গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারের আমলে চালু হওয়া নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করেছে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিত।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলেও বিজেপি বা অন্য কোনও দল গত ছ’বছরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোন শিল্পপতির থেকে কত টাকা চাঁদা নিয়েছে, সেই তথ্য প্রকাশ্যে আসা মুশকিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির ।

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে কে কত টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছিলেন, ব্যাঙ্কের কাছে সেই হিসাব রয়েছে। কিন্তু সেই বন্ডের মাধ্যমে কোন দল কার কাছে কত টাকা পেয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসা মুশকিল। কারণ সেই তথ্য স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে থাকার কথা নয়। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেও সেই তথ্য রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল না। ফলে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কে কোন দলকে কত টাকা চাঁদা দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তা প্রকাশ করার নির্দেশ দিলেও যাবতীয় তথ্য প্রকাশ্যে আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারের আমলে চালু হওয়া নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করেছে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিত। কিন্তু কে কাকে কত টাকা চাঁদা দিচ্ছে, তা গোপন থাকত। সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাঙ্ককে ২০১৯-এর ১২ এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত এই সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেই তথ্য প্রকাশ করবে। বিরোধী শিবিরের আশা ছিল, গত ছ’বছরে বিজেপি কোন কর্পোরেট সংস্থার থেকে কত টাকা পেয়েছে, এতে তা প্রকাশ্যে আসবে। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩-এর মধ্যে ছ’বছরে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। এর মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৬৫৬৪ কোটি টাকা। কংগ্রেস পেয়েছিল ১১৩৫ কোটি টাকা। তৃণমূল কংগ্রেস ১০৯৬ কোটি টাকা পেয়েছিল।

Advertisement

রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থার মূল মন্ত্রই ছিল, কোন শিল্পপতি কোন দলকে চাঁদা দিচ্ছেন, তা গোপন থাকবে। তাই কে কত টাকার বন্ড কোন দলকে দিয়েছেন, এই তথ্য কারও কাছে থাকার কথা নয়। একটি কর্পোরেট সংস্থা স্টেট ব্যাঙ্কের থেকে বন্ড কিনে নিত। সে সময়ে তার তথ্য ব্যাঙ্কের কাছে থাকত। কিন্তু সেই বন্ড কোথায় জমা হচ্ছে, সেই তথ্য ব্যাঙ্ক বা রাজনৈতিক দল কারও কাছেই থাকত না। ফলে ব্যাঙ্ক চাইলে শুধুমাত্র প্রকাশ করতে পারে, অমুক সংস্থা এক কোটি টাকার বন্ড কিনেছিল। তার পরে সেই বন্ড কে পেয়েছে, তা ব্যাঙ্কের জানার কথা নয়।

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, কোন গ্রাহক ব্যাঙ্কের থেকে কত টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছেন, তা প্রকাশের ক্ষেত্রে ১৯৪৯ সালের ব্যাঙ্কিং নিয়ন্ত্রণ আইন বাধা হয়ে উঠতে পারে। ২০১৫ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গ্রাহক পরিষেবা নিয়ে যে নির্দেশিকা বা ‘মাস্টার সার্কুলার’ জারি করেছিল, সেটাও এ ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে। কারণ ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ আইন ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা, দুই ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের তথ্য গোপন রাখার শর্ত রয়েছে। সুতরাং সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সমস্যার কথা জানিয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক বা খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে বলে রাজনীতি এবং আইনজীবী মহল মনে করছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে হলে মার্চ মাসেই স্টেট ব্যাঙ্ককে নির্বাচন কমিশনের হাতে যাবতীয় তথ্য তুলে দিতে হবে। তার পরে নির্বাচন কমিশন তা প্রকাশ করবে। আজ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে স্বচ্ছতার পক্ষে সওয়াল করেছিল। এখন কমিশন আদালতের রায় মেনেই কাজ করবে। এখন স্টেট ব্যাঙ্কের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই নজর সকলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement