নিকারিঘাটায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। —নিজস্ব চিত্র।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা ছিল বিরোধীশূন্য। অভিযোগ, শাসকদলের সন্ত্রাসের কারণে গ্রামসভা, পঞ্চায়েত সমিতি এমনকী জেলা পরিষদের আসনেও বিরোধী দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। তবে আসন্ন লোকসভা ভোটে মানুষ নির্ভয়ে মনোনয়ন জমা ও ভোট দিতে পারবেন বলেই আশ্বাস দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। শাসক দলের আশ্বাস, শান্তিপূর্ণ ভোট হবে। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। পায়ের তলায় রাজনৈতিক জমি না পেয়ে অপপ্রচার করেছিল।
বিরোধীদের অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত ভোটে ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভায় সন্ত্রাস চালিয়েছিল তৃণমূল। বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করতে হুমকি দেওয়া হয়, মারধর করা হয়। পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি কোনও বিরোধী দলের প্রার্থী। আরও অভিযোগ, বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বার বার শাসকদলের গুন্ডাবাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস, আইএসএফ কর্মীরা। বিরোধী দলের নেতাদের বাড়িতে গিয়েও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। বিরোধীদের দাবি, এর ফলে গোটা বিধানসভাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল।
এ বার লোকসভা নির্বাচনে যাতে পঞ্চায়েত ভোটের পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য আগে থেকেই উদ্যোগী হয়েছে নির্বাচন কমিশন। সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ক্যানিং মহকুমাতেও ১ কোম্পানি বাহিনী পৌঁছে গিয়েছে। প্রতি দিন তাঁরা ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকায় টহলদারি করছেন। শাসকদল বা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখালে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ভোটারদের কাছে গিয়ে অভয়বার্তা দিচ্ছেন জওয়ানেরা। সোমবার সকালে ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা পঞ্চায়েত এলাকায় টহলদারি চালান জওয়ানেরা। গ্রামে ঘুরে ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।
সুরিন্দর সিংহ নামের এক জওয়ান বলেন, “ভোটারদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। সকলে যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে পারেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এলাকার মানুষকে ভোটদানে উৎসাহ দিচ্ছি।”
তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আশ্বাস পেলেও আতঙ্ক পুরোপুরি কমছে না বলেই জানান গ্রামবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা সানোয়ারা বিবি, রমজান গাজিরা বলেন, “এখন তো সব ঠিকই আছে। কিন্তু ভোটের আগে আবার বাড়ি বাড়ি এসে হুমকি দেবে নেতারা। বাহিনীকে কি তখন পাশে পাব? ওঁরা আশ্বাস দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আতঙ্ক এখনও কাটেনি।’’
বিরোধীরাও সুষ্ঠু ভোটপ্রক্রিয়া নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না। স্থানীয় বাম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের কোনও প্রার্থী দিতে দেয়নি তৃণমূল। কর্মীদের উপরে হামলা করেছে। পার্টি অফিসে ভাঙচুর করে নমিনেশন পেপার লুট করেছে। বাহিনী যদি নিরাপত্তা দিতে পারে, তা হলে নিশ্চয় স্বচ্ছ ভাবে ভোট হবে। তবে বাহিনীকে তো পরিচালনা করবে স্থানীয় পুলিশ। আর পুলিশ শাসকদলের নেতাদের কাছে বিক্রি হয়ে আছে। ফলে আদৌ কতটা নিরাপত্তা পাব সেটাই প্রশ্ন।” জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সর্দার বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে লোকসভা নির্বাচন হবে। শাসকদল ভোট লুট করতে গেলে ফল ভাল হবে না। আশা করছি সে ক্ষেত্রে আমরা ভাল ফল করব।’’
ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন, “বিরোধীরা শুধুই অপপ্রচার করতে জানে। গত পঞ্চায়েত ভোটে আমি নিজে বিরোধীদের নমিনেশন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সামনে তাঁরা খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে। সারা বছর উন্নয়ন করব আমরা, আর ভোট এলে ওঁরা ভোট চাইলে এমনটাই হবে।’’